লড়াই ছাপিয়ে আলোচনায় ভারত-পাকিস্তানের সম্প্রীতির মুহূর্ত
সীমান্তে সংঘাত। বৈরী রাজনৈতিক সম্পর্ক। দুই প্রতিবেশী ক্রিকেটে খেলতে একে অপরের দেশে যায় না বহুকাল। এতটুকু বললেই বুঝে ফেলার কথা, ভারত-পাকিস্তানের কথা বলা হচ্ছে। এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান লড়াই সামনে রেখে দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের ইতিহাস বারবার টানা হচ্ছে। কিন্তু এ উত্তেজনার মধ্যেই বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে সম্প্রীতির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছেন ভারত ও পাকিস্তানের দুই ক্রীড়াবিদ। গড়েছেন ইতিহাসও।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে গত রাতে ছেলেদের বর্শা নিক্ষেপের ফাইনালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন ভারতের নীরজ চোপড়া ও পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম। শেষ পর্যন্ত এক মিটারের কম দূরত্বের ব্যবধানে তুলে নেওয়া জয়ে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে প্রথম সোনার পদক এনে দেন নীরজ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এটা নীরজের প্রথম সোনার পদক হলেও বর্শা নিক্ষেপে দীর্ঘদিন ধরেই দাপুটে পারফরম্যান্স তাঁর। দক্ষিণ এশিয়ান গেমস, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, ডায়মন্ড লিগ ও অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন আগেই। বাকি ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। গত বছর ইউজিনে রূপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এবার সেই আক্ষেপও দূর করলেন।
বুদাপেস্টে তাঁর কাছে হেরে রুপাজয়ী আরশাদ নাদিম এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে পাকিস্তানের প্রথম পদকজয়ী। নাদিম এর আগে ২০২২ বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস ও ২০১৯ কাঠমান্ডু এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এটাই তাঁর প্রথম পদক। বুদাপেস্টে অবশ্য হার–জিত ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে ভারত-পাকিস্তানের এই দুই অ্যাথলেটের সম্প্রীতির একটি মুহূর্ত।
লড়াই শেষে ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে ছবি তুলছিলেন ভারতের নীরজ ও চেক প্রজাতন্ত্রের ইয়াকুব ভাদলেচ। বর্শা নিক্ষেপে তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ইয়াকুব। সংবাদকর্মীরা তাঁদের ছবি তোলার সময় ফ্রেমে অনুপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম। যেহেতু পদক জয়ের পর নিজ দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোটা অ্যাথলেটিকসে একরকম প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে মুহূর্তে আরশাদ পাকিস্তানের পতাকা খুঁজে পাচ্ছিলেন না, তাই ক্যামেরার সামনে যাননি।
কিন্তু নাছোড়বান্দা নীরজের ডাক অগ্রাহ্য করতে পারেননি আরশাদ। শেষ পর্যন্ত নিজের দেশের পতাকা ছাড়াই ভারতের পতাকা নিয়ে দাঁড়ানো নীরজের পাশে দাঁড়িয়ে যান ছবি তুলতে।
বর্শা নিক্ষেপে ফাইনালের আগে নীরজকে শুভকামনা জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে ভারতীয় শিবিরের প্রতি আরশাদ নাদিম বলেছিলেন, ‘নীরজ ভাই, আপনি ভালো করুন। আমিও ভালো করি। বিশ্বে আপনার নামডাক আছে, আমারও নামডাক হোক।’
ফাইনাল শেষে আরশাদের সঙ্গে ছবি তুলে তাঁর প্রশংসাও সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়েছেন নীরজ, ‘প্রতিযোগিতার আগে আমি মুঠোফোন ব্যবহার করি না। কিন্তু আজ হাতে নিয়ে প্রথমেই চোখ পড়েছে ভারত–পাকিস্তান লড়াইয়ের কথা...ভালো লেগেছে যে আরশাদ ভালো করেছে এবং আমরা নিজেদের দেশ নিয়ে কথা বলেছি। আগে এখানে ইউরোপিয়ান অ্যাথলেটরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত, আমরা তাদের সমমানে উঠে এসেছি।’
৮৭.৮২ মিটার দূরত্বে বর্শা নিক্ষেপ করে দ্বিতীয় হন আরশাদ নাদিম। তাঁর চেয়ে ০.৮৫ মিটার বেশি দূরত্বে বর্শা নিক্ষেপ করে সোনা জেতেন নীরজ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে অষ্টমবার দুই অ্যাথলেট মুখোমুখি হলেন। প্রতিবারই নীরজ জিতেছেন। তবে আরশাদের ব্যক্তিগত সেরা পারফরম্যান্স নীরজের চেয়ে ভালো।