তবু তো ১৫ লাখ টাকা পুরস্কার পেলেন ইমরানুর
কাজাখস্তানে দশম এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতেছেন ইংল্যান্ডে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান। সেই সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে আজ দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা পেয়েছেন ইমরানুর।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন ইমরানুরকে দিয়েছে ১০ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা দিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকটি ৫ লাখ টাকা দিয়েছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনকে।
আজ সন্ধ্যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শেখ কামাল অডিটরিয়ামে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ অর্থ ইমরানুরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে সোনা জিতে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের তিনজন সরকার থেকে ফ্ল্যাট পেয়েছেন। অর্থ পুরস্কারও পেয়েছেন অনেকে। দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ে এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সোনা জেতার মাহাত্ম্য অনেক বেশি। তবে সরকারের কাছ থেকে এখনো কোনো পুরস্কার পাননি ইমরানুর।
এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেটের সোনা জেতা তো দূরের কথা, পদক জেতার কথাও কল্পনা করা যেত না। ইমরানুর ভালো করবেন আশা করে কাজাখস্তান গেলেও সোনা জিতে যাবেন, এতটা ভাবেননি। কিন্তু প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে ইমরানুর সোনা জিতে এশিয়ান মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন। তারই স্বীকৃতি হিসেবে আজ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।
বাংলায় স্বচ্ছন্দ না হওয়ায় ইমরানুর তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান ইংরেজিতে। নিজ দল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দেশের বাইরে লাল-সবুজ পতাকা ওড়াতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি আরও কিছু করতে চাই দেশের জন্য।’
অনুষ্ঠানে এসেছেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাবেক দ্রুততম মানবী সুফিয়া খাতুন, ৪০০ মিটার দৌড়ে সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রাজিয়া সুলতানা অনু, আশির দশকে সাবেক দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন, সাবেক অ্যাথলেট ফারহাত জেসমিন লিটিসহ আরও কয়েকজন।
অনুষ্ঠানে অ্যাথলেটিকস অঙ্গনের হাতে গোনা কিছু চেনা মুখ ছাড়া আর তেমন কাউকে দেখা যায়নি। ফলে অডিটরিয়ামের প্রায় ৭০ ভাগ চেয়ারই ছিল ফাঁকা। অনুষ্ঠান শেষে অন্য ফেডারেশনের মধ্যে শুধু মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও ভারোত্তোলন ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয় ইমরানুরকে।
সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টায়। মঞ্চের পেছনে ব্যানারে লেখা সাড়ে ছয়টায়। পৌনে সাতটায় দেখা গেল মূল মঞ্চের বাইরে অডিটরিয়ামের ভেতরে এক পাশে একটা ব্যানার লাগানো হচ্ছে। যেখানে লেখা ‘উই আর প্রাউড ফর ইউ ইমরানুর’। অনুষ্ঠান শুরু হয় সাতটার পর। শুরুতে ইমরানুরের সেই দৌড় দেখানো হয় পর্দায়। এ সময় বেজে ওঠে ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশকে নাও চিনে’ গানটি।
এরপর ইমরানের জীবনী তুলে ধরা হয়। এর পরপরই ইমরানকে মঞ্চে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি। এই পর্ব শেষে শুরু হয় বক্তৃতার পালা। ফেডারেশনের সহসভাপতি ফারুকুল ইসলাম বলেন, ‘ইমরানুরের সাফল্য আমাদের নতুন করে পথ দেখাচ্ছে। একসময় আমরা সাফ গেমসে সোনা জিতেছি, আবার যাতে সেই সাফল্য পাই, তার জন্য নতুন প্রেরণা ইমরান।’
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব ইমরানুরকে বাংলাদেশের ক্রীড়াদূত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এখন অনেক প্রবাসী দেশের হয়ে খেলতে চায়। ইমরানুর নতুন উদ্দীপনা হয়ে এসেছে আমাদের জন্য।’
যুব ও ক্রীড়াসচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই সফরের জিও (সরকারি আদেশ) জারি হওয়ার সময় আমি ইমরানুরের কাছে সোনা বা রুপা আশা করিনি। প্রতিযোগিতায় প্রথম না হলে ইতিহাস মনে রাখে না। ইমরানুরকে মনে রাখবে। ইমরানুর একই প্রতিযোগিতায় দু–দুবার নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন। আমাদের জন্য যে সম্মান বয়ে এনেছেন, সেটি সবাইকে গর্বিত করেছে। আমরা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছি, সেটা শুধু সামাজিক ক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়া ক্ষেত্রেও।’
পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটনের কর্মকর্তা ইকবাল বিন আনোয়ারের কথা, ‘আমরা তৃণমূল থেকে অ্যাথলেট তুলে আনার কর্মকাণ্ডে ফেডারেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। আমরা চাই আরও ইমরানুর তৈরি করতে। যাতে মাদকমুক্ত রাখতে পারি সমাজ, দেশকে।’
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘তোমাকে সংবর্ধনা দিতে পারা ফেডারেশনের জন্য সম্মানের। তোমার পরিবার, স্ত্রী, কন্যার জন্য শুভেচ্ছা।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে এমন সুন্দর সন্ধ্যা আর আসেনি। ইমরানুরের সৌজন্যে আমরা এর সাক্ষী হয়ে থাকলাম। ইমরান ভালো ক্রীড়াবিদ শুধু নয়, সে ভালো বিনয়ীও। এটা ওর অসাধারণ গুণ।’
অর্থ পুরস্কারের সঙ্গে ক্রেস্ট দেওয়া হয় ইমরানুরকে। ক্রেস্ট বহন করেন দেশের ১৪ বারের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার।