ফেরার লড়াইয়ে অনুজ্জ্বল রোমান, স্ত্রী দিয়ার সঙ্গে জুটি গড়ে ব্রোঞ্জ
দেশের কাছ থেকে কিছু পাননি অভিযোগ তুলে গত নভেম্বরে হঠাৎ জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী রোমান সানা। এর কিছুদিন পরই বাংলাদেশের আর্চারের বোধোদয় হয়, অবসরের ঘোষণা দিয়ে ভুল করেছেন। সেই উপলব্ধি থেকে জাতীয় দলে আবারও ফিরে আসতে লিখিত আবেদন করেন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের কাছে। কিন্তু আর্চারি ফেডারেশন বলেছে, ফেরার পথ সহজ নয়। নিজেকে প্রমাণ করেই দলে আসতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ আর্চারি দলে রিকার্ভ ইভেন্টে দলে জায়গা পাওয়ার লড়াই বেড়েছে। ফলে রোমানের পক্ষে দলে আসা কঠিন।
আর্চারির জাতীয় দলে আসতে বছরে হওয়া চারটি র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোমান এ বছর প্রথম র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট খেলেননি। ফলে এ জায়গায় তিনি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। বিকেএসপিতে গতকাল শেষ হওয়া জাতীয় আর্চারি টুর্নামেন্টকে ধরা হচ্ছে বছরের দ্বিতীয় র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট এবং এই টুর্নামেন্টে খেলে রিকার্ভে গতবারের সোনা হারিয়ে এবার তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছেন। রোমানের জন্য যা খুবই হতাশার। রিকার্ভ পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্টে আনসারের সাকিব মোল্লা চমক দেখিয়ে ফাইনালে ওঠেন। তবে ফাইনালে পুলিশ আর্চারি ক্লাবের আবদুল হাকিম রুবেলের কাছে হেরেছেন।
রোমানপত্নী দিয়া সিদ্দিকী অবশ্য এবারের প্রতিযোগিতায় ভালোই করেছেন। রিকার্ভ ব্যক্তিগত নারী বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছেন। আজ ফাইনালে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের জ্যোতি রানী চাকমাকে হারিয়ে পেয়েছেন রিকার্ভের সোনা। এ নিয়ে টানা তিনবার নিজের ইভেন্টে সেরা হলেন দিয়া।
হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন দেশসেরা নারী আর্চার দিয়া, ‘এই ইভেন্টে আমার টানা তিনবার সোনা এল। ইভেন্টটিতে বিউটিদির (বিউটি রায়) ছয়বার জেতার রেকর্ড আছে। তাঁর রেকর্ড ছোঁয়ার ইচ্ছা আছে।’
সেই ইচ্ছাপূরণের পথে দিয়া কাল এলিমিনেশন রাউন্ড থেকে ফাইনালে পৌঁছাতে সব সেটই জেতেন (৬-০)। ফাইনালে জ্যোতি রানী চাকমাকে ২-৬ সেট পয়েন্টে হারান। তবে রিকার্ভের দলীয় দুই নারী ইভেন্টে দলগত ও মিশ্র দলগতে কোনোটিরই ফাইনালে উঠতে পারেনি দিয়া ও রোমানের দল বাংলাদেশ আনসার। মিশ্র বিভাগে দিয়াকে এবার স্বামী রোমান সানার সঙ্গে জুটি গড়ে ব্রোঞ্জ জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা ইতি খাতুন ও আজিমুল হকের কাছে সরাসরি ৬-০ সেটে হেরেছেন তারকা জুটি।
জীবনের জুটি গড়ার পর আজই প্রথম রোমান-দিয়া জাতীয় আর্চারিতে জুটি গড়ে খেলেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও রোমান জুটি কোনো সেটই জিততে পারেননি! ব্রোঞ্জ জিতে মোটেও খুশি নন তারকা জুটি। এ নিয়ে দিয়া বলেন, ‘প্রত্যাশা ছিল সোনা জিতব। কিন্তু ব্রোঞ্জ জিতেছি। তবে এটাও একটা প্রাপ্তি বলব।’
দিয়া একটি সোনা জিতলেও রোমান সোনা দূরে থাক, কোনো ইভেন্টেই ফাইনালে উঠতে পারেননি। তবে রোমান পাশে পাচ্ছেন স্ত্রীর সমর্থন, ‘সে ভালোই খেলেছে। বিশেষ করে মিশ্র বিভাগে আমাকে অনেক সমর্থক দিয়েছে। আমার চেয়ে তার স্কোর ভালোই হয়েছে। আমি বরং মিশ্রতে সেভাবে স্কোর করতে পারিনি।’
রোমানের পারফরম্যান্স নিয়ে জাতীয় দলের কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ খুশি নন মোটেও। প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর খেলায় আমি খুশি হতি পারছি না। সে রোমান সানা। তার কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করি। সে ব্রোঞ্জ পেয়েছে তিনটি। আরও ভালো করা উচিত ওর।’
তবে এমন নয় যে রিকার্ভে সোনা জিতলেই এখনই জাতীয় দলে চলে আসতেন রোমান। কারণ, আগামী দুটি টুর্নামেন্টের জন্য দল আগেই অনেকটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। রোমানের ইভেন্টে রিকার্ভ দলগতে সুযোগ পেয়েছেন সাগর, রামকৃষ্ণ ও হাকিম। তাঁদের ওপর কোচের ভরসাও অনেক।
তুরস্কে অলিম্পিক বাছাই ও বিশ্বকাপ দুটি টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে এ মাসেই। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দল তুরস্ক যাচ্ছে। তাতে রোমানের ঠাঁই হচ্ছে না। তবে দিয়া আছেন দলে। তাঁকে নিয়েও কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখের কোথাও অতৃপ্তি আছে, ‘ও হ্যাটট্রিক করেছে। ঠিকই আছে। আমি ওর ওপর অখুশি নই। তবে আরেকটু ধারাবাহিক হওয়া দরকার।’