ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর প্রত্যাশা
ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে পতন ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের। গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেন অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দায়িত্ব পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে। তাঁর কাছে ক্রীড়াঙ্গনের প্রত্যাশা অনেক। প্রথম আলোকে সেই প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন বিভিন্ন খেলার পাঁচ ব্যক্তিত্ব।
নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক
বাংলাদেশ ক্রিকেটও দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য মিলিয়ে একনায়কতন্ত্রের ছবি দেখেছি। বিশাল ক্রিকেট বোর্ড থাকার পরও দুই-একজনের সিদ্ধান্ত চলেছে দেশের ক্রিকেট। তাঁদের লক্ষ্য কতটা ক্রিকেটের উন্নতি ও কতটা ব্যক্তিগত ছিল, সে প্রশ্নটাও আসছে। ঘরোয়া ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে গেছে। একজনের হাতে ১০টি ক্লাব, কাউন্সিলর বাণিজ্য, আম্পায়ারদের নিয়ে ম্যাচ গড়াপেটা, তৃতীয় বিভাগ লিগের কোয়ালিফায়ার বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্তগুলো সরাসরি ক্রিকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ফলে ক্রিকেটের যেখানে যাওয়ার সুযোগ ছিল, সেখানে যায়নি। তাই ক্রিকেটেও সংস্কার আসা উচিত। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নতুন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অত্যন্ত তরুণ এবং যতটুকু শুনেছি খেলাধুলা, বিশেষ করে ক্রিকেট নিয়ে তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। আমি নিশ্চিত, এ ব্যাপারটি তিনি লক্ষ রাখবেন।
আশরাফউদ্দিন আহমেদ, সাবেক ফুটবলার
প্রথমেই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আসিফ মাহমুদকে অভিনন্দন জানাই। তাঁর দায়িত্বের পরিধি বিশাল। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্রীড়াঙ্গনে যে অনাচার চলে আসছে, সেই জঞ্জাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে। কাজটা খুব সহজ নয়, তবে আমি আশাবাদী। আমি ফুটবলের মানুষ। ফুটবল এত দিন ধরে কিছু দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থান্বেষীর হাতে জিম্মি ছিল। আশা করি, নতুন উপদেষ্টা উদ্যোগ নিয়ে ফুটবল পরিচালনার ভার যোগ্য মানুষের হাতে তুলে দেবেন। যাঁরা নিজেদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও সততা দিয়ে খেলাটাকে সামনে এগিয়ে নেবেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে ভালো খেলোয়াড় তুলে আনার পরিকল্পনা তৈরিতে তিনি ফুটবল সংগঠকদের বাধ্য করবেন। ক্রীড়াঙ্গনে কাউন্সিলার-ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। তাঁর সাফল্য কামনা করছি।
রফিকুল ইসলাম কামাল, সাবেক হকি খেলোয়াড়
ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে আমার অনুরোধ, তিনি যেন ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করতে শক্ত ব্যবস্থা নেন। রাজনীতির নামে বিগত দিনে প্রচুর বাজে লোক খেলার জগতে ঢুকে পড়েছেন, তাঁদের বের করতে হবে। যোগ্য লোককে ঠিক জায়গায় বসানোর ব্যাপারে উপদেষ্টা কাজ করবেন বলে আশা করি। সাবেক হকি খেলোয়াড় হিসেবে হকির উন্নয়ন চাই। খেলোয়াড়দের রুটি-রুজির জায়গা ঘরোয়া লিগটা যেন নিয়মিত হয়। দেশের অন্যতম শীর্ষ খেলা হিসেবে হকিতে তহবিল বাড়ানোর অনুরোধ রাখছি। জাতীয় দল নিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে কাজ শুরু করতে উপদেষ্টার কাছ থেকে উদ্যোগ চাই। অন্য খেলাগুলোও তাঁর নির্দেশনায় উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস করি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেডারেশনকে ঢেলে সাজানো উচিত, ক্রীড়া উপদেষ্টা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন আশা করি।
সাবরিনা সুলতানা, সাবেক শুটার
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেক জঞ্জাল জমেছে গত ১৫ বছরের বেশি সময়ে। প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশন অযোগ্য আর দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ক্রীড়া উপদেষ্টা এসব জানেন বলেই মনে করি। ক্রীড়াঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে তিনি কাজ করবেন এবং ফেডারেশনগুলোয় যোগ্য নেতৃত্ব ফেরাতে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি। শুটিং ফেডারেশনে সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এত দিন যা খুশি, তা-ই করেছেন। অনেক যোগ্য শুটার ও সংগঠকেরা দূরে সরে গেছেন। এ ব্যাপারে ক্রীড়া উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শুটিংয়ে একসময় আমরা অনেক গৌরব অর্জন করেছি, কিন্তু গত ১৫ বছরে খেলাটা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। আমাদের অনেক যোগ্য শুটার আছেন, তাঁদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
মিলজার হোসেন, সাবেক অ্যাথলেট
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক মানুষের রক্ত ঝরেছে। সেই রক্তের বিনিময়েই এই পরিবর্তন। ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া একজন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নিচ্ছেন, এটা আমাকে আশান্বিত করেছে। এত বছর ধরে ক্রীড়াঙ্গনে যে দলীয়করণ আর অযোগ্য লোকদের আস্ফালন চলেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টা সেটি দূর করতে সক্ষম হবেন আমার বিশ্বাস। প্রতিটি ফেডারেশনের চেয়ারে বসেছেন অযোগ্য লোকজন। তাঁদের কাজ ছিল দুর্নীতি আর অনিয়ম করা, বিদেশ যাওয়া। স্থবির হয়ে পড়েছে ক্রীড়াঙ্গন। উপদেষ্টাকে উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের দূর করতে হবে। সাবেক অ্যাথলেট হিসেবে আমার চাওয়া অ্যাথলেটিকসে সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর বিনিয়োগ। নিয়মিত বিভিন্ন খেলার আয়োজন। ক্রীড়া উপদেষ্টা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন বলেই আশা রাখছি।