অলিম্পিকের টেবিল টেনিসে যখন ভাই-বোনের রাজত্ব

ফ্রান্সের অ্যালেক্সিস (বাঁয়ে) ও ফেলিক্স লেব্রুন এবং সাইমন গউজি (ডানে)এএফপি

প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে ৩২টি পুরুষ ও নারী দল। স্বাভাবিকভাবেই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারটাই আগে। তবে এসব দলে এমন কজন আছেন, যাঁদের কাছে পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করাটাও একটা ব্যাপার।

এবারের অলিম্পিকে টেবিল টেনিসে অংশ নিচ্ছেন ৯৬ জন অ্যাথলেট। এর মধ্যে কমপক্ষে আট জোড়া ভাইবোন আছেন। শীর্ষ পর্যায়ের কোনো খেলায় স্বাভাবিকভাবেই এ অনুপাত চোখে পড়ার মতো।

তাঁদের মধ্যে কেউ এসেছেন পরিবারে প্রোথিত যে টেবিল টেনিসের ঐতিহ্য, সেটি ধরে রাখতে। কারও জন্য আবার বড় ভাই বা বোন অনুপ্রেরণা। একসঙ্গে সময় কাটানোর ব্যাপারটিও আছে। তাঁদের মধ্যে ফ্রান্সের অ্যালেক্সিস ও ফেলিক্স লেব্রুনকে অনেকেই চেনেন। একে অন্যকে প্রায়ই কোর্ট ও কোর্টের বাইরে উৎসাহ দিতে দেখা যায়।

ফেলিক্স এবার সিঙ্গেলসে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। পদক নিশ্চিত হওয়ার পরই ভাইয়ের কাছে ছুটে যাওয়া ১৭ বছর বয়সী ফেলিক্স বলেন, ‘টেবিল টেনিস আমাদের পারিবারিক খেলা। এটা সব সময়ই আমাদের পরিবারের অংশ ছিল।’

সুইডেনের ক্রিস্টিনা কালবার্গ
এএফপি

ফেলিক্স ও অ্যালেক্সিসের বাবা ছিলেন ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়ন। তাঁদের চাচাও খেলেছেন অলিম্পিকে। সেই ফেলিক্সের হাত ধরে এল ২০০০ সালের পর টেবিল টেনিসে ফ্রান্সের প্রথম কোনো পদক। ফেলিক্স বলেছেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে এখানে থাকতে পারাটা স্বপ্নের মতো।’

আরও পড়ুন

সিঙ্গেলসের ব্রোঞ্জপদক ম্যাচের আগে ফেলিক্স স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন। সে সময় পেয়েছেন ভাইয়ের সহায়তা। ব্রাজিলের হুগো কালদেরানোর সঙ্গে ছিল ফেলিক্সের ম্যাচ, অ্যালেক্সিস তাঁর কাছেই হেরে বাদ পড়েছিলেন সিঙ্গেলসে। ভাইয়ের অনুপ্রেরণা যে কাজে লেগেছে, তা তো বলাই যায়।

সুইডেনের অ্যান্টন কালবার্গ ও ছোট বোন ক্রিস্টিনা—দুজনের জন্যই এটি একসঙ্গে দ্বিতীয় অলিম্পিক। কালবার্গের টেবিল টেনিসে আসার সিদ্ধান্তের পেছনে বড় নিয়ামক ছিল পরিবারের প্রভাব। তিনি বলেছেন, ‘আমার মা–বাবা বড় একটা ভূমিকা রেখেছেন। বাবা, মা, এমনকি আমার চাচা-দাদারাও একটু করে খেলতেন। ফলে বলা যায়, আমার টেবিল টেনিসে আসা ছাড়া উপায়ই ছিল না কোনো!’

অবশ্য সবাই যে পরিবার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, তা নয়। ব্রাজিলের ১৯ বছর বয়সী গুইলিয়া টাকাহাশির জন্য যেমন এ কাজ করেছিলেন তাঁর পাঁচ বছরের বড় বোন ব্রুনা। সেই বোনের সঙ্গে অলিম্পিকে আসা তাঁর কাছে স্বপ্নপূরণের মতোই। টাকাহাশি বলেছেন, ‘আমি তার জন্যই খেলি। ছয় বছর বয়সে তাকে দেখে মনে হয়েছিল, কেন নয়! এরপর খেলা শুরু করলাম। এখন তো এটিই জীবন।’

ব্রাজিলের গুইলিয়া (ডানে) ও ব্রুনা টাকাহাশি
ইনস্টাগ্রাম

ভাই বা বোনের সঙ্গে খেলার আরেকটি দিকও আছে। দুজন যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যান! ফেলিক্স ও অ্যালেক্সিস যেমন দলগত ইভেন্টে সতীর্থ হলেও সিঙ্গেলসে প্রতিপক্ষ বনে যান। ফেলিক্সের র‍্যাঙ্কিং ভালো হলেও এ ক্ষেত্রে আবার অ্যালেক্সিসের রেকর্ডটা ভালো।

আবার দুজন দুই লিঙ্গশ্রেণিতে থাকলেও একজনের পারফরম্যান্স চাপ ফেলতে পারে আরেকজনের ওপর। জাপানের টোমোকাজু হারিমোটো যেমন বলেছেন, ‘বড়জনের জন্য যদি ব্যাপারটি ঠিকঠাক হয়, তাহলে তো হলোই, না হলে নেই। কিন্তু ছোটদের ওপর মনোযোগটা বেশি থাকে, পারফর্ম করার চাপও।’

হারিমোটোর ১৬ বছর বয়সী বোন মিওয়ার এবার অলিম্পিক অভিষেক হয়েছে। ছোট বোনের চাপটা বুঝতে পারেন হারিমোটো, ‘বোনের প্রতি অনেক সম্মান আমার। সে অনেক চাপের মধ্যে পড়ে, এরপরও সেরাটি দেয়। উন্নতি করে ক্রমাগত।’

আরও পড়ুন

আপাতত পরিকল্পনা না থাকলেও বোনের সঙ্গে ভবিষ্যতে অলিম্পিকে মিশ্র দ্বৈতে খেলতে পারাটা বিশেষ কিছু হবে বলে মনে করেন হারিমোটো।

ভাই–বোন পাশে থাকলে আরেকটা সুবিধাও আছে। ব্রাজিলের ১৯ বছর বয়সী টাকাহাশি যেমন অলিম্পিক ভিলেজে ২৪ বছর বয়সী বোন ব্রুনার সঙ্গেই থাকছেন। হাসতে হাসতে তিনি বলেছেন, ‘বাড়ির মতোই, যা ইচ্ছা তা–ই করতে পারি। সে আমার যত্ন নেয়, প্রতিদিন ঘুম থেকে ডেকে দেয়।’

এ ব্যাপারে তাঁদের মা–বাবা কী ভাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রুনা বলেছেন, ‘সমস্যা দ্বিগুণ তাদের, গর্বটাও।’