সবার সামনে থেকে একা দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার মাস্টারক্লাস? তামিরাত তোলার দৌড় দেখে তা বলাই যায়। প্যারিসে আজ ছেলেদের ম্যারাথনে ২ ঘণ্টা ৬ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন তামিরাত। তবে অলিম্পিক ম্যারাথনে দুবারের চ্যাম্পিয়ন কেনিয়ার এলিউড কিপচোগে ম্যারাথনে নেমে পরে নিজেকে দৌড় থেকে সরিয়ে নেন। তাতে অলিম্পিক ম্যারাথনে তাঁর টানা তৃতীয় সোনা জয় করা হলো না।
রুপাজয়ী বেলজিয়ামের সোমালি বংশোদ্ভূত বশির আবদির (২ ঘণ্টা ৬ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড) চেয়ে ২১ সেকেন্ড আগে দৌড় শেষ করেন তামিরাত। টোকিও, বোস্টন এবং শিকাগো ম্যারাথনজয়ী কেনিয়ার বেনসন কিপরুতো ২ ঘণ্টা ৭ মিনিট সময় নিয়ে জিতেছেন ব্রোঞ্জ।
আগামীকাল ৩৩ বছরে পা রাখতে যাওয়া তোলা জয়ের পর বলেছেন, ‘ধন্যবাদ প্যারিস! আমি আজ সুখী। ২০২২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এখন আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। এটাই আমার জীবনের সেরা দিন। এটাই ছিল আমার লক্ষ্য।’
ইউজিনে ২০২২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যারাথনজয়ী তোলা একটু দেরিতে প্যারিস অলিম্পিকে সুযোগ পান। ইথিওপিয়ার আরেক দৌড়বিদ সিসে লেমা চোট পাওয়ায় ডাক পান তিনি। এ বছর এপ্রিলে লন্ডন ম্যারাথনে তৃতীয় হওয়ার পাশাপাশি গত বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক ম্যারাথন জিতেছিলেন ৩২ বছর বয়সী তোলা। প্যারিস অলিম্পিকের ম্যারাথনে সুযোগ পাওয়া নিয়ে বলেছেন, ‘ইথিওপিয়া দলে আমি রিজার্ভ ছিলাম। কিন্তু সিসে চোট পাওয়ায় আমি তার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাই। পুরো প্রস্তুত ছিলাম এবং জানতাম নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। এটা অলিম্পিক, আর অলিম্পিক গেমসে জয় মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। আমি খুব গর্বিত। খুব ভালো লাগছে।’
ম্যারাথনে একসময় বিশ্ব রেকর্ড কিপচোগের দখলে ছিল। ইতিহাসের দ্রুততম ১০টি ম্যারাথনের ৪টিই দৌড়েছেন তিনি। ২০১৬ রিও অলিম্পিক ও ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সোনাজয়ী ৩৯ বছর বয়সী কিপচোগে প্যারিসে ম্যারাথনে নামলেও পিঠের ব্যথার কারণে নিজেকে সরিয়ে নেন। ৩০ কিলোমিটার দৌড়ানোর পরই সরে দাঁড়ান কিংবদন্তি। তখন তিনি ৭১তম অবস্থানে ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক জানিয়েছেন, দৌড় থামিয়ে কিপচোগে সমর্থকদের দিকে ঘুরে নিজের জুতো, এক টুকরো কাপড় ও মোজা তাঁদের উপহার দেন। সমর্থকেরা উৎসাহের সঙ্গে কিংবদন্তির উপহার গ্রহণ করেন।
কিপচোগে পরে বলেছেন, ‘আজ দিনটা কঠিন ছিল। অনেকটাই বক্সিংয়ের মতো। পাঁচ মাস অনুশীলন করে ২ সেকেন্ডেই নকআউট হতে পারেন। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। এটা আমার সবচেয়ে বাজে ম্যারাথন। আমি কখনো “ডিএনএফ” (দৌড় শেষ করতে না পারা) করিনি। বক্সারের মতোই আমি কখনো নকআউট হয়েছি, কখনো জিতেছি, দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, পঞ্চমও হয়েছি। কিন্তু এবার শেষ করতে পারলাম না। এটাই জীবন।’
তোলার স্বদেশি ও দূরপাল্লার দৌড়ে তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন কেনেনিসা বেকেলে ম্যারাথনে ৩৯তম হন। বেকেলে মনে করেন, তামিরাতের জয় ম্যারাথনে তরুণ প্রজন্মের উঠে আসার বার্তাও, ‘ইথিওপিয়ার জয়ে দারুণ লাগছে। তোলা খুব শক্তিশালী। তার জন্যও ভালো লাগছে। লোকে আমাকে এবং কিপচোগেকে নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে দেখুন। ওরা আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’
৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ম্যারাথন দৌড় প্যারিসের মধ্যভাগ থেকে শুরু হয়ে ভার্সেই হয়ে ফরাসি বিপ্লবের অনুরূপ একটি মুহূর্ত সৃষ্টি করেছিল; ১৭৮৯ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের নারীরা ভার্সেইর রাস্তায় নেমেছিলেন। যে কারণে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই মানুষ ও নাগরিকদের অধিকারের বৈশ্বিক ঘোষণাপত্রে সই করতে সম্মত হয়েছিলেন।
ম্যারাথন দৌড়ের এই পথে ৪৩৬ মিটার রাস্তা দৌড়বিদদের উঁচুতে উঠতে হয়েছে। নিচে নামতে হয়েছে ৪৩৮ মিটার। রাস্তায় সর্বোচ্চ ঢালের পরিমাণ ছিল ১৩.৭ শতাংশ। বেকেলের ভাষায়, ‘এই দৌড়ের জন্য সত্যিই ফিট না হলে কাজটা খুবই কঠিন।’ রুপাজয়ী আবদি অবশ্য বিনয় করেননি। তিনি সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘এটা আমার দৌড়ানো সবচেয়ে কঠিন ম্যারাথন কোর্স।’