বারবার কেন স্বপ্নভঙ্গ ফাহাদের
তীরে এসে তরি ডুবছে বারবার। শেষ রাউন্ডে গিয়ে আর পারছেন না। নিজের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম পেতে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ফাহাদ রহমান।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার পর এ পর্যন্ত সাতবার গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মের সম্ভাবনা জাগিয়েও ফাহাদের শেষটা হয়েছে হতাশায়। সর্বশেষ গতকাল রোববার ভিয়েতনামে হ্যানয় গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টে নবম ও শেষ রাউন্ডে ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক মাস্টার সেতইয়াকি আজারইয়া জদির বিপক্ষে জিতলে গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম পেয়ে যেতেন। ড্র করলে হতেন চ্যাম্পিয়ন। খেলার একপর্যায়ে জদি ড্রয়ের প্রস্তাব দিলেও ফাহাদ সেটি গ্রহণ না করে জয়ের চেষ্টাই করেছেন। কারণ, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে নর্মই তাঁর কাছে ছিল বড়। কিন্তু সাদা নিয়ে খেলা ফাহাদ শেষ পর্যন্ত ৪৩ চালে হেরে যান।
টুর্নামেন্টে খেলেছেন ৪ জন গ্র্যান্ডমাস্টারসহ ১২ জন দাবাড়ু। তাতে ভারতের আন্তর্জাতিক মাস্টার এ আর ইলামপার্থির সঙ্গে ৯ ম্যাচে সমান ৬ পয়েন্ট পেয়েছেন ফাহাদ। কিন্তু টাইব্রেকিংয়ে রানারআপ হয়ে রুপা পেয়েছেন। এতে অবশ্য মোটেও খুশি হতে পারেননি। ভিয়েতনাম থেকে ফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এমন টুর্নামেন্টে রানারআপ হওয়াও একটা অর্জন। কিন্তু আমার কাছে বড় কিছু নয়। আমি চেয়েছিলাম নর্ম পেতে। সেটা না পাওয়ায় ভীষণ হতাশ হয়েছি।’
এ বছর ফাহাদ খেলেছেন ১০টি মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। সব কটিতেই সুযোগ ছিল নর্ম করার। নর্মের কাছাকাছি গেছেন ৫টিতে। তিনটি ভিয়েতনামে, একটি করে কাজাখস্তান ও আরব আমিরাতে। ভিয়েতনামে আগের দুবার শেষ ম্যাচে তাঁর জয় দরকার ছিল। কিন্তু একটিতে হেরেছেন, অন্যটিতে ড্র। কাজাখস্তানে শেষ রাউন্ডে জয় দরকার ছিল। সেই ম্যাচে ফাহাদ ড্র করার কথা তো বলাই হলো।
বারবার কেন এমন হচ্ছে? কেন পারছেন না লক্ষ্য পূরণ করতে? ‘আমি ঠিক নিজেও জানি না। হয়তো চাপের কারণে পারছি না’—টেলিফোনের ওপ্রান্তে এটুকু বলে থামেন ফাহাদ। নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘কিছুটা দুর্ভাগ্যও আছে। শেষ ম্যাচে ভালো অবস্থাতেই ছিলাম। ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল আমার। কিন্তু হলো না। পরপর দুটি টুর্নামেন্টে নর্মের কাছাকাছি গিয়েও পারলাম না।’
ভিয়েতনামের এই টুর্নামেন্টে খেলেছেন বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদও। ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দশম হয়েছেন নিয়াজ। কাছ থেকে দেখেছেন ফাহাদকে। দেখে তাঁর মনে হয়েছে ফাহাদ মানসিক চাপের কারণেই শেষ ম্যাচে এসে ভেঙে পড়ছেন।
ভিয়েতনাম থেকে নিয়াজ প্রথম আলোকে বলছেন, ‘অনেক সময় এমনটা হতেই পারে। চাপের কারণে শেষটা ভালো হয় না। আমার সমকালীন দাবাড়ু বন্ধু দিব্যেন্দু বড়ুয়া আমার মতো খেলোয়াড় হলেও সে আমার ৪ বছর পর (১৯৯১) গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছে। আমাদের জিয়াউর রহমান আরও তিন থেকে চার বছর আগে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারত। তবে আমি মনে করি, ফাহাদ গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে যাবে। হয়তো একটু সময় লাগছে।’
একেকটি সফরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগে। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তো ভালো নয়। ফলে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলা কঠিন হয়ে পড়েছে আমার জন্যদাবাড়ু ফাহাদ রহমান
কিন্তু বিদেশে খেলতে আর আর্থিক সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না বলে চিন্তিত ফাহাদ। সেই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে বললেন, ‘এ বছর ১০টি টুর্নামেন্টে মধ্যে নিজের টাকায় অংশ নিয়েছি ৫টিতে। বাকি ৫টি স্পনসরের টাকায়। একেকটি সফরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাগে। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তো ভালো নয়। এ কারণে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলা কঠিন হয়ে পড়েছে আমার জন্য।’
কিন্তু না খেললে তো নর্ম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে উপায়? ফাহাদ চান দেশেই যেন আরও টুর্নামেন্ট হয়, ‘এ বছর দেশে এশিয়ান জোনাল ছাড়া আর কোনো টুর্নামেন্ট হয়নি। খেলোয়াড়েরা আয়ও করতে পারছে না। এটা একটা বড় সমস্যা। বিদেশে খেলার ব্যাপারে ফেডারেশন থেকে সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ফেডারেশন আরও টুর্নামেন্ট করলে সবার জন্য ভালো হতো।’
এত সমস্যার মধ্যেও অবশ্য হাল ছাড়ছেন না ২০ বছরের তরুণ। নতুনভাবে অনুশীলন পরিকল্পনা সাজাতে চান। মেডিটেশন করবেন বলে জানালেন। দেশে ফিরে শারীরিক কিছু ব্যায়াম করবেন। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন দাবাড়ুর জন্য। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা একটানা বসে ম্যাচ খেলা সহজ নয়। ফলে শারীরিক ফিটনেসে আরও উন্নতি আনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন ফাহাদ। আর বেশি মন খারাপ না করে টুর্নামেন্টে খেলে যেতে চান। লক্ষ্য তো খুব দূরে নয়। গ্র্যান্ডমাস্টার হতে ২৫০০ রেটিং লাগে। ভিয়েতনামের টুর্নামেন্টে ৪ যোগ হয়ে ফাহাদের রেটিং এখন ২৪১৪।