১০ লাখ টাকা পেয়েই আশরাফুল অনেক খুশি
বাংলাদেশের শীর্ষ স্তরের একজন ক্রিকেটারের বার্ষিক আয় কোটি ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। শীর্ষ ফুটবলারদের কারও কারও পারিশ্রমিকও বছরে কোটিতে পৌঁছেছে।
কিন্তু বাংলাদেশের শীর্ষ স্তরের একজন হকি খেলোয়াড়ের বার্ষিক আয় একদমই বলার মতো নয়। হকি খেলোয়াড়দের আয় বলতে প্রিমিয়ার লিগ। সেই লিগও হয় না নিয়মিত। তিন বছরে একটা লিগ হলে এবং সেই লিগে জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় পাঁচ লাখ টাকা পেলে গড়ে বছরে কত পড়ে? দুই লাখও নয়।
তারপরও হকি খেলোয়াড়েরা যা পান, তাতেই খুশি। ২৮ মাস পর ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার হকি লিগের যে দলবদল শুরু হতে চলেছে, হকি খেলোয়াড়দের কারও কারও কাছে তা ঈদ-আনন্দের মতোই। কিছু খেলোয়াড়ের মুখে হাসি ফুটছে। ক্লাবগুলোর কাছে থেকে ডাক পাচ্ছেন, নিজেরা দরদাম করছেন।
এরই মধ্যে আবাহনী লিমিটেড সবার আগে ঘর গুছিয়ে ফেলেছে। আকাশি নীলেরা নিয়েছে দেশের একঝাঁক শীর্ষ খেলোয়াড়কে। সেই তালিকায় সবচেয়ে বড় নাম জাতীয় দলের অপরিহার্য ডিফেন্ডার আশরাফুল ইসলাম।
দেশসেরা পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ হিসেবে আশরাফুলের পরিচিতি বেশি। ২০২২ সালের শেষ দিকে ঢাকায় হওয়া প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগে তাঁর গোল ছিল স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২টি। তর্কযোগ্যভাবে অনেকের মতে আশরাফুল এই মুহূর্তে দেশের সেরা হকি খেলোয়াড়।
২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে আশরাফুল খেলেছেন মোহামেডানে। এবারও তাঁকে সাদাকালোরা ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না। স্থানীয়দের মধ্যে এবার এখন পর্যন্ত সম্ভবত আশরাফুলই সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাচ্ছেন বলে খবর।
নিজের পারিশ্রমিক নিয়ে আশরাফুল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘গত লিগে মোহামেডান থেকে পেয়েছিলাম সাড়ে ৮ লাখ টাকা। সেটা ছিল গতবারের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। এবার অন্য কে কত পাচ্ছে, ঠিক জানি না। তবে নিজেরটা বলতে পারি, আবাহনীতে আমি ১০ লাখ টাকায় যাচ্ছি। সব চূড়ান্ত।’
আবাহনী ক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে জানিয়েছেন আজ আশরাফুলকে নিয়ে হকি স্টেডিয়ামে এসে টোকেন তুলে আজই তা নিজেদের কাছে নিয়ে গেছেন।
বিকেএসপির ছাত্র হিসেবে ২০১২ সালে ২৯ হাজার ৫০০ টাকায় প্রথমবার ঢাকা লিগে (মেরিনার্সে) খেলেন আশরাফুল। সময়ের সঙ্গে পারিশ্রমিক বেড়েছে। এতে বেশ খুশি আশরাফুল, ‘হকি খেলোয়াড়দের চাওয়া বেশি কিছু নয়। আমরা চাই লিগটা নিয়মিত হোক। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আমরা কষ্ট পাই। ফুটবলার বা ক্রিকেটাররা যেখানে বছরব্যাপী খেলতে খেলতে অবসরই পায় না, সেখানে গত ৫ বছরে হকি লিগ হয়েছে মাত্র একটা। আসলে লিগটা না হলে খেলোয়াড়দের রুটিরুজিও থাকে না। লিগ হলে খেলোয়াড়েরা কিছু টাকার মুখ দেখে।’
মোহামেডান ছাড়লেন কেন? এই প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল বললেন, ‘মোহামেডান আমাকে রাখতে চেয়েছিল। ক্লাবটির এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, “তোমার যত টাকা লাগে নিয়া যাও।” কিন্তু আমি এবার মোহামেডানের আগেই আবাহনীকে কথা দিয়ে দিই।’
১১ বছরের ঘরোয়া ক্যারিয়ারে এবার নিজের ষষ্ঠ লিগ খেলতে চলেছেন আশরাফুল। আবাহনীতে এর আগেও খেলেছেন ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। ২০১২ ও ২০১৬ সালে খেলেছিলেন মেরিনার্সে।