বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৫ দেশের সাবেক অ্যাথলেটদের মিলনমেলা
সুসজ্জিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঢুকতেই দেখা মিলল নাজমুন নাহার বিউটির। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১৭ বারের দ্রুততম মানবীর মুখে চওড়া হাসি। হাসির কারণ—একটু আগে ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছেন, শটপুটে হয়েছেন দ্বিতীয়। খেলেছেন বাংলাদেশ কাস্টমসের জার্সিতে।
২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ের খেলা থেকে অবসরে যাওয়া বিউটি কি তাহলে আবার খেলায় ফিরেছেন? তিনি বললেন, ‘খেলা ছাড়লেও খেলা যে ভুলিনি, সেটা আবার পরখ করলাম।’ বাংলাদেশের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের একসময়ের রানী খেলায় ফিরেছেন ঠিকই, তবে সেটা দেশের জাতীয় কোনো প্রতিযোগিতায় নয়। ফিরেছেন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ৫ দেশের সাবেক অ্যাথলেটদের নিয়ে আয়োজিত ভেটেরান অ্যাথলেটিকসে।
ভেটেরান অ্যাথলেটিকস নতুন কিছু নয়। কিন্তু নতুন হলো বাংলাদেশে বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতা প্রথমবারের মতো হচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সহযোগিতায় ও বাংলাদেশ ভেটেরানস অ্যাথলেট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় ইন্টারন্যাশনাল ওপেন ভেটেরান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৪ আজ শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। তিন দিনের প্রতিযোগিতা চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহৎ এই ভেটেরান অ্যাথলেটদের ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজনে বাংলাদেশ কাস্টমস, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিমানবাহিনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের ৩৬টি সংস্থার ২৫৩ জন অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও সাফের ৪টি দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের ৯৪ জনসহ মোট ৩৫৩ জন সাবেক অ্যাথলেট এসেছেন প্রতিযোগিতায়। ভারতের ৬০ জন, শ্রীলঙ্কার ১৫ জন খেলেছেন।
স্টেডিয়ামে কথা হলো ৬২ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কার নারী অ্যাথলেট কুমারী বিজয় সিংহের সঙ্গে। খেলোয়াড়ি জীবনে হাঁটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। এখানেও সেই হাঁটা প্রতিযোগিতাতেই নেমেছেন প্রথম দিনে। কলম্বোর এই বাসিন্দা প্রথমবার এসেছেন বাংলাদেশে। এসে ভালোই লাগছে, ‘প্রথমবার বাংলাদেশ এ ধরনের আয়োজন করল। তাতে অংশ নিতে পেরে দারুণ লাগছে। হাঁটা প্রতিযোগিতায় আমার অনেক অভিজ্ঞতা। এশিয়ান মাস্টার্সে খেলেছি চীনে, ফিলিপাইনে।’
কথা হলো, শ্রীলঙ্কার মাস্টার্স দলের আরেক নারী অ্যাথলেট চন্দ্রকান্তের সঙ্গে। তিনিও হাঁটা প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। তাঁদের পাশে বসে শ্রীলঙ্কার পুরুষ অ্যাথলেট প্রেমরত্ন জানালেন, আগামীকাল তিনি খেলবেন ট্রিপল জাম্পে। আজ নিজের বয়স বিভাগে লংজাম্পে সোনা জিতেছেন।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখা বাংলাদেশের নারী অ্যাথলেটিকসের কিংবদন্তি সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে। ৭৪ বছর বয়সী পাকিস্তানের সাবেক দ্রুততম মানবী সুফিয়া কোনো ইভেন্ট করেননি, তবে এই মিলনমেলায় এসে আনন্দটা ভাগ করে নিয়েছেন অন্যদের সঙ্গে। স্বাধীনতার পর জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ৪০০ মিটার দৌড়ে টানা ১২ বার জয়ী রাজিয়া সুলতানা অনু ছিলেন তাঁর পাশেই। তিনিও অংশ নেননি। তবে খেলা দেখতে এসে বললেন, ‘দারুণ উদ্যোগ। বিভিন্ন দেশের সাবেকদের সঙ্গে পরিচয় হলো। কথা হলো অভিজ্ঞতা বিনিময় করলাম। সারা জীবন এটা মনে থাকবে।’
ভারত থেকে আসা দলটির সাবেক অ্যাথলেটরা সবাই বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের। কলকাতা, কোচবিহার, আসানসোল, দুর্গাপুর থেকে এসেছেন বেশি। বাংলায় কথা বলছেন সবাই। পশ্চিমবঙ্গ দলটির দলনেতা ব্যস্ত ছিলেন তাঁর প্রতিযোগীদের ছবি তোলায়। এক ফাঁকে কোচবিহারের মানুষ পরশ চন্দ্র বিশ্বাস বললেন, ‘এখানকার পরিবেশটা বেশ ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে দুই বাংলার মিলনমেলা। সবাই বাংলায় কথা বলছে, আমরাও বলছি। এই অনুভূতি দারুণ।’
কোচবিহারের ৫২ বছর বয়সী অ্যাথলেট প্রিয়নাথ দেউড়ি শটপুটে সোনা জিতে খুব বেশি। খুশি দুর্গাপুর দলের ম্যানেজার অপূর্ব মণ্ডলও। বললেন, ‘আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকে পদকজয়ী অ্যাথলেট অশ্বিনী কুমার পাঁজা এসেছেন আমাদের এই দলের সঙ্গে। বাংলাদেশে এসে খুব ভালো লাগছে।’
এক ফাঁকে দেখা বাংলাদেশের সাবেক দ্রুততম মানব গোলাম আম্বিয়ার সঙ্গে। পায়ে ব্যথার কারণে তিনি অংশ নেননি এই আয়োজনে। তবে খেলেছেন বনি আমিন, গোলক নিক্ষেপে নিজের বয়স বিভাগে পেয়েছেন সোনাও। ভারোত্তোলক শাহরিয়া সুলতানা ৪০ বছর বয়স বিভাগে ৪০০ মিটার দৌড়ে ও শটপুটে প্রথম হন। ভারোত্তোলক হয়েও মোল্লা সাবিরা সুলতানাও মাস্টার্স অ্যাথলেটিকসে নাম দিয়েছেন। একসময় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে খেলেছেন। কাল মাস্টার্স অ্যাথলেটিকসে খেলবেন ২০০ মিটার স্প্রিন্ট, ৮০০ মিটার দৌড়, হার্ডলসে।
প্রথম দিনে ৫৮টি ইভেন্ট হয়েছে। ২৩টি সোনা, ১১টি রুপা ও ৭টি ব্রোঞ্জসহ ৪১টি পদক জিতে তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশ কাস্টমস। ১৭টি সোনা, ১৪টি রুপা ও ৬টি ব্রোঞ্জসহ ৩৭টি পদক পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে মাস্টার্স গেমস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল, ইন্ডিয়া। ৬টি সোনা, ৩টি রুপাসহ ৯টি পদক নিয়ে তৃতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কা।
পুরুষদের ৩৫-৭০ বছর বয়সের মধ্যে ৮টি বয়স গ্রুপ করা হয়েছে। ১৬টি ইভেন্ট হচ্ছে তাতে। মহিলাদের ৩৫-৬৫ বছর বয়সের মধ্যে ৭টি বয়স গ্রুপে করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ১৫টি ইভেন্ট হচ্ছে। বয়স গ্রুপ ৩৫ বছর থেকে প্রতি ৫ বছর পরপর নির্ধারণ করা হয়েছে।