এশিয়ান ট্যুরে সিদ্দিকুর রহমান সর্বশেষ শিরোপা জিতেছেন ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর, হিরো ইন্ডিয়ান ওপেনে। এরপর বেশ কবারই কাছাকাছি গিয়েও আর শিরোপা জেতা হয়নি বাংলাদেশ গলফারের।
১০ বছর এশিয়ান ট্যুরে কোনো শিরোপা না জেতা সেই সিদ্দিকুর আরেকবার সম্ভাবনা জাগিয়েছেন খরা দূর করার। থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ গলফে আজ স্বপ্নের মতো একটা রাউন্ডই পার করেছেন সিদ্দিকুর। ব্ল্যাক মাউন্টেন গলফ ক্লাবে আজ তৃতীয় রাউন্ডে খেলেছেন পারের চেয়ে ৮ শট কম। যেটি তাঁর ১৮ বছরের পেশাদার গলফ ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা রাউন্ড!
তিন রাউন্ড মিলিয়ে সিদ্দিকুর খেলেছেন পারের চেয়ে ১৫ শট কম। তিন রাউন্ড শেষে তিনজনের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশের এই গলফার। পারের চেয়ে ১৫ শট কম খেলে তাঁর সঙ্গে যুগ্মভাবে শীর্ষে আছেন ভারতের গলফার এস চিক্কারাঙ্গাপ্পা, অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক মারে ও থাইল্যান্ডের জাজ জানেওয়াত্তানান্দ।
এ বছর এর আগে মাত্র দুটি টুর্নামেন্টে খেলেছেন সিদ্দিকুর। সৌদি ইন্টারন্যাশনাল গলফে হয়েছেন ৬৯তম। ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ ওমানে ৫২তম। থাইল্যান্ডে প্রথম রাউন্ডে অবশ্য বেশি ভালো খেলতে পারেননি সিদ্দিকুর। পারের চেয়ে ২ শট কম খেলে প্রথম রাউন্ডে ছিলেন ২৩ জনের সঙ্গে যৌথভাবে ৬৩তম স্থানে।
প্রথম দিন খেলেন ৪টি বার্ডি ও ২টি বগি। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে ছন্দে ফিরতে শুরু করেন সিদ্দিকুর। সেদিন বগিবিহীন একটি দিন কাটান সিদ্দিকুর। ৫টি বার্ডি করেন, খেলেন পারের চেয়ে ৫ শট কম। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে সিদ্দিকুর ১৮ জনের সঙ্গে যৌথভাবে ১৪তম স্থানে উঠে আসেন।
আজ সিদ্দিকুর খেলেছেন পারের চেয়ে ৮ শট কম। তৃতীয় রাউন্ডে মোট ৯টি বার্ডি করেছেন। এদিন একমাত্র বগি করেন ১৭ নম্বর হোলে। তিন রাউন্ড মিলিয়ে ১৫ শট কম খেলা সিদ্দিকুরের পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়েছে লিডারবোর্ডে, এক লাফে উঠে এসেছেন শীর্ষে।
এমন একটি স্মরণীয় দিন কাটানোর পর উচ্ছ্বসিত সিদ্দিকুর। থাইল্যান্ড থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দিন শেষে এমন স্কোর দেখে সত্যি ভালো লাগে। আমি অনেক দিন ধরেই ভালো খেলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটা আসলে সময়ের ব্যাপার ছিল। আমি একটা ভালো সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই খেলেছি আজ। এখন শুধু একটা দিন বাকি আছে। শেষ রাউন্ডেও এমন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।’
গত কয়েক বছর অনেকবারই তীরে এসে তরি ডুবেছে সিদ্দিকুরের। ২০১৮ সালে ভারতে প্যানাসনিক ওপেনে, ২০১৭ সালে বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে এবং ২০১৬ সালে আফ্রো-এশিয়া ব্যাংক মরিশাস ওপেনে জিততে জিততে হয়েছিলেন রানারআপ।
শিরোপার সুবাস পেতে পেতেও চাপের মুখে ভেঙে পড়েন। তবে এবার মোটেও চাপ নিতে চান না সিদ্দিকুর। শেষ দিন শুধুই খেলাটা উপভোগ করতে চান, ‘এখানে চাপের কিছু নেই। আমি খুব নির্ভার হয়ে খেলছি। যেভাবে খেলছি, সেটাই ধরে রাখতে চাই।’
থাইল্যান্ডের গলফ কোর্স, কন্ডিশন—সবই সিদ্দিকুরের অনুকূলে। দীর্ঘদিন পর যেন মনের মতো খেলতে পারছেন তিনি, ‘এখানে যেভাবে খেলতে চাইছি, বলে-ব্যাটে মিলে যাচ্ছে সবকিছু। যে শটগুলো মারতে চাই, সেগুলো মারতে পারছি। গ্রিনগুলো খুব ফাস্ট, আমি যেটাকে ট্রু গ্রিন বলি। এই গ্রিনে খেলতে পছন্দ করি। সব মিলিয়ে শিরোপা জেতার সুবাস পাচ্ছি। এগুলো আমাকে অনেক সহযোগিতা করছে।’
আগামীকাল শেষ রাউন্ডে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেই চ্যাম্পিয়ন হতে চান সিদ্দিকুর, ‘কোনো চাপ নিতে চাই না, শুধু কোর্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলে যাব কাল। এখানে আমার হারানোর কিছু নেই। জিততে হবে, এমন কোনো চাপ নিচ্ছি না। তবে ভালো খেলতে পারলে এমনিতেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারব।’