নারী কাবাডি লিগ মাতাতে ঢাকায় চার নেপালি কন্যা
নতুনভাবে সেজেছে পল্টনের জাতীয় কাবাডি স্টেডিয়াম। কোর্টে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ১১টি দলের খেলোয়াড়েরা। উপলক্ষ নারী কাবাডি লিগের উদ্বোধন। আজ বিকেলে উদ্বোধন হয়ে গেল নারী কাবাডি লিগ। সার বেঁধে দাঁড়ানো খেলোয়াড়দের ভিড়ে চারটি মুখ আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।
নেপাল জাতীয় দলের খেলোয়াড় তাঁরা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হাংজু এশিয়ান গেমসে নারী কাবাডিতে নেপালের কাছে হেরে বাংলাদেশ ব্রোঞ্জ জিততে পারেনি। হাংজুর কাবাডি কোর্টে বাংলাদেশকে ৩৭-২৪ পয়েন্টে হারিয়ে দেয় নেপাল। সেই জয়ে ব্রোঞ্জ জিতে বিরাট চমক দেখিয়েছিলেন নেপালের মেয়েরা। এশিয়ান গেমসের নেপাল দলের চার খেলোয়াড় এসেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া নারী কাবাডি লিগে খেলতে। এই প্রথম বাংলাদেশের নারীদের কাবাডি লিগে বিদেশি খেলোয়াড়েরা এলেন খেলতে।
মেঘনা কাবাডি ক্লাব নিয়ে এসেছে নেপালি খেলোয়াড়দের। এসেছেন কাঠমান্ডুর মেয়ে গঙ্গা ঘিমিরে, শ্রীজানা কুমারী থারু, অনুজা কুলং রাই ও জয়ন্ত বাডু। চার খেলোয়াড়ের সঙ্গে কর্মকর্তা হিসেবে এসেছেন ভগবতী অধিকারী। নারী কাবাডি লিগে গতবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ পুলিশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে এনেছে দুজন খেলোয়াড়।
নারী কাবাডি লিগে বিদেশিরা এলেও বাংলাদেশের মেয়েদের এখনো সৌভাগ্য হয়নি বিদেশি লিগে খেলার। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ রয়েছে বাংলাদেশ নারী কাবাডি দলের সাবেক অধিনায়ক শাহনাজ পারভীনের। কাবাডি কোর্টে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘নেপালের মেয়েরা অনেক সৌভাগ্যবান। তারা বিদেশি লিগে খেলছে। কিন্তু আমরা কখনো সেই সুযোগ পেলাম না। জানি না কখনো সেই সুযোগ আসবে কি না।’
নেপালের মেয়েরাও এই প্রথম দেশের বাইরে খেলতে এসেছেন। জানালেন এটা তাদের নতুন এক অভিজ্ঞতা। সফর স্মরণীয় করে রাখতে নিজেদের সেরাটা দিতে চান কোর্টে। চ্যাম্পিয়ন করতে চান মেঘনা কাবাডি ক্লাবকে। বাংলাদেশ পুলিশ দলের পাশাপাশি মেঘনা কাবাডি ক্লাবও নেপথ্যে পরিচালনা করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তাঁদের উদ্যোগে বাংলাদেশের নারী কাবাডিতে তৈরি হয়েছে নতুন এক অধ্যায়।
নেপালের চার খেলোয়াড়ের দুজন নেপাল আর্মি দলে খেলেন। একজন নেপাল পুলিশে, অন্যজন আরেকটি ক্লাবে খেলেন। নেপালে নারী কাবাডি লিগ হয় না। এ নিয়ে কিছুটা হতাশাবোধ আছে গঙ্গা ঘিমিরের। নিজেদের দেশের কাবাডি নিয়ে বলতে গিয়ে সেই হাতাশা ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘আমরা ১২-১৩ বছর বয়সে কাবাডি খেলা শুরু করেছিলাম। নেপালের অনেক মেয়েই এখন খেলাটার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ওখানে এভাবে লিগ হয় না। টুর্নামেন্ট হয়। ঢাকায় এসে দেখলাম মেয়েদের বিরাট লিগ হচ্ছে।’
দুই গ্রুপে ১১ দলকে ভাগ করে এই লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গ্রুপে একে অন্যের সঙ্গে খেলার পর থাকছে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল; টুর্নামেন্টের আদলেই। যদিও কাবাডি ফেডারেশন এটিকে লিগ বলছে। ৯ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় সর্বশেষ নারী কাবাডি লিগ হয় ২০২১ সালে। গত বছর করপোরেট নারী কাবাডির আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। এক বছর পর আবার লিগ আয়োজন করছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। এতে বড় আকর্ষণ নেপালের মেয়েরা।
নেপালের মেয়েদের এগিয়ে চলা দেখে বাংলাদেশের নারী কাবাডির সাবেক কোচ আবদুল জলিল কিছুটা অবাক, ‘এই নেপাল আমাদের কাছে একসময় পাত্তা পেত না। কিন্তু এখন ওরা অনেক এগিয়ে গেছে। এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জেতা সহজ কথা নয়। ওরা আরও সামনে এগিয়ে যাবে।'
২০১৯ সালে কাঠমান্ডুতে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস কাবাডিতে রুপা জেতেন নেপালের মেয়েরা। এবার এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো পদক নিয়ে ফিরেছেন। তবে এমন সাফল্যের পরও তেমন কোনো আর্থিক প্রণোদনা পাননি নেপালের মেয়েরা। চার নেপালি কন্যার একজন কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘এশিয়ান গেমসে আমরা পদক জেতায় দেশের মানুষ খুব খুশি হয়েছে। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে আমাদের। কিন্তু আমরা আসলে তেমন কোনো আর্থিক পুরস্কার পাইনি। তবে চাকরিতে আমাদের পদোন্নতি হয়েছে। আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। জীবন চলে যাচ্ছে। খেলাটা খুব ভালোবাসি বলে খেলছি।’
নেপালে ফুটবল এক নম্বর খেলা। ক্রিকেটও হালে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কাবাডি অতটা নয়। তবু কাবাডি খেলতে এগিয়ে আসছেন মেয়েরা। কাঠমান্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টার মাঠে তাঁরা অনুশীলন করেন নেপালি কোচের অধীনে। সুযোগ–সুবিধা বলতে তেমন কিছু নেই। তবু নেপালের মেয়েরা অদম্য ইচ্ছার জোরে এগিয়ে চলেছেন। এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জিতে এখন ঢাকা জয় করতে চান চার নেপালি কন্যা।