জার্মান কোচের ‘বাঙালিয়ানা’, দিয়া সিদ্দিকীদের সঙ্গে ভাষা দিবস উদ্যাপন
জাতীয় দলের আর্চার রামকৃষ্ণ সাহা–দিয়া সিদ্দিকীরা আজ একটু অন্য রকম দিন কাটালেন টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে। প্রতিদিনের রুটিন অনুশীলন তো ছিলই, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও উদ্যাপন করেছেন মাঠে।
আর্চারি মাঠে ঢোকার মুখে ভিআইপি গ্যালারির নিচে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করেছে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন। সেখানেই ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আর্চাররা। শুধু আর্চাররা নন, টঙ্গী স্টেডিয়ামের শহীদ মিনারে আজ আর্চারদের সঙ্গে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁদের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখও। পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে আছেন তিনি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাঙালির আত্মত্যাগের দিনটি এখন শুধু বাংলার নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তথ্যটি জানেন ফ্রেডরিখ, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে ভালো ধারণা আছে আমার। বাংলাদেশে কাজ করতে আসার আগে এ দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষাশহীদদের ব্যাপারে জেনেছিলাম। অবশ্যই আমি এই দিনের গুরুত্বটা ভালোভাবে জানি। জানি এই দিনের পেছনের ইতিহাস, কীভাবে ভাষার জন্য একদল বাঙালি প্রাণ দিয়েছিল। এই দিনটিকে যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেটাও আমার জানা।’
প্রভাতফেরিতে কখনো যাওয়া হয়নি ফ্রেডরিখের। কিন্তু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একবার গিয়েছিলেন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে, ‘বাংলাদেশে আসার পর প্রথম বছর শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম।’ বাংলা ভাষাটা একটু একটু করে ফ্রেডরিখের মুখের ভাষা হয়ে গেছে। বাঙালিয়ানা যেন মনে ধরেছে এই কোচের। বাংলা ভাষা কতখানি শিখেছেন? প্রশ্নটা করতেই হেসে স্পষ্ট বাংলায় বলছিলেন, ‘আমি বাংলায় কথা বলি। রিকশায় উঠে বলি, সোজা যাও, বাঁ দিকে, ডান দিকে। এখানে থামো...ভাঙতি আছে?’
অনুশীলনেও বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করেন ফ্রেডরিখ, ‘যখন ছেলেমেয়েরা কথা শোনে না, খুব ধীরে অনুশীলন করে তখন বলি, হেই তাড়াতাড়ি করো।’ স্কোর ভালো হলে বলি হেই সুন্দর...শাবাশ।’ এই দিনটিকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা নেই কোচের। তবে জানালেন, বিকেলে পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পরে ঘুরতে বের হবেন।
বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষাটা ফ্রেডরিখের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে ভালোই। বাঙালি খাবারেও নিয়মিত অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি, ‘এখানকার বাঙালি খাবারের স্বাদ অসাধারণ। তবে মসলাটা একটু বেশি থাকে। ঝাল লাগে খেতে।’
বাংলাদেশের শাকসবজি পছন্দ তাঁর। খাবারের মেনুতে তাই থাকে এ দেশের সবজি, ‘লাল শাক ইউরোপে দেখা যায় না। এখানকার লাল শাক পছন্দ আমার। এ ছাড়া ঢ্যাঁড়স ও অন্য সবজিও বেশ লাগে।’ মৌসুমি ফলের মধ্যে আমের প্রেমে পড়েছেন ফ্রেডরিখ। বাংলায় বলছিলেন, ‘আম খেতে খুব ভালো লাগে। ইউরোপে তো এক প্রজাতির আম খাই আমরা। কিন্তু এখানে ১৫ জাতের আম খেয়েছি। বাংলাদেশে এসেই প্রথম কাঁঠালের স্বাদ পেয়েছি।’