দেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান মশাল জ্বাললেন। তখনই বেজে ওঠে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের থিম সং, ‘বুকভরা নিশ্বাসে আকাশ পানে চাই।’
সারা দেশের প্রতিভাবান অ্যাথলেটরা বুক ভরে নিশ্বাস নিতেই যেন এবার জড়ো হয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন ভেন্যুতে। খেলা শুরু হয়ে গেছে গতকাল থেকে। আজ ঢাকার বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় শেখ কামাল বাংলাদেশ যুব গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুব গেমসের প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল ২ জানুয়ারি, উপজেলা পর্যায়ে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৬ জানুয়ারি, জেলা পর্যায়ে।
২০১৮ সালে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৭ বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসিসিয়েশন (বিওএ)। তখন ২১টি খেলা হয়। এবার খেলা ২৪টি।
প্রথমবার সব খেলা হয় ঢাকার ভেন্যুতে। এবার জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় পেরিয়ে তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে উঠে এসেছেন চার হাজার অ্যাথলেট। ১৯৩টি ইভেন্টের ১৯৩টি করে সোনা ও রুপা এবং ২৮৭টি ব্রোঞ্জের জন্য লড়বেন আগামী দিনের খেলোয়াড়েরা।
যুব গেমসের আজকের প্রায় দুই ঘণ্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল জাঁকজমকপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্মি স্টেডিয়ামে আসেন সন্ধ্যা সাতটায়। আর্মি ব্যান্ড জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর স্টেডিয়ামের মাঝখানে বসানো বড় পর্দায় দেখানো হয় গেমস নিয়ে তিন মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র। এরপর একে একে মাঠে ঢোকেন আট বিভাগের অ্যাথলেটরা। অ্যাথলেটদের শপথবাক্য পড়ান দেশের ১৪ বারের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার।
গেমসের মাস্কট বাবুই পাখি অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের ওপর দিয়ে সারা মাঠ ঘুরে বেড়ায়। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শেখ কামালের বেশে মাঠে ঢুকে সবাইকে চমকে দেন এক যুবক। একজন তো শেখ হাসিনার সাজে আসেন স্টেডিয়ামে।
শুরুতে শহীদ আনোয়ার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বর্ণিল নৃত্য মুগ্ধ করে দর্শকদের। মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে ছিল আর্মি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড স্পোর্টস দলের সৈনিকদের। ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীরা কখনো তৈরি করেছেন ওয়েলকাম, কখনো নৌকার প্রতিকৃতি এঁকে দেখিয়েছেন। তাঁদের এই প্রদর্শনীর সময় করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন দর্শকেরা।
শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ কামালের নামে আয়োজন করা হয়েছে এবারের যুব গেমস। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে এসে শেখ কামালের স্মৃতিচারণায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিবারটাই ছিল খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত। কামাল একাধারে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ও বিভিন্ন খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিল। কামাল প্রথম আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করে। সে যেভাবে খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাতে আমাদের যুব সমাজ আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এর বাইরেও সে চমৎকার সেতার বাজাতে পারত। শেখ কামাল আমার ছোটবেলার খেলার সাথি। তার সঙ্গে আমি প্রতিটি খেলায় যোগ দিতাম। আমি যখন পুতুল খেলতাম, তখন সে আমার সঙ্গেও যোগ দিত।’
প্রধানমন্ত্রীর আশা, এই গেমস হবে স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরির কারখানা, ‘আগামী দিনের তারকা অনুসন্ধানে এই যুব গেমস এনে দেবে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশ আমাদের স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরি করবে। এবং আমরা সারা বিশ্বে যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করব। আমি চাই এই খেলাধুলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।’
বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘এই গেমসের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে নবজাগরণ হবে এবং আগামীর ক্রীড়াবিদদের আমরা খুঁজে বের করতে পারব।’
অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের শুভকামনা জানান বিওএ সভাপতি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল আতশবাজি। তিন মিনিটের আতশবাজির আলোয় ভরে ওঠে আর্মি স্টেডিয়ামের আকাশ।