প্রিমিয়ার হকি লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ তখন শেষের পথে, স্কোরলাইন ১-১। প্রেসবক্সে এক সাংবাদিক বললেন, কখনো আবাহনী-মোহামেডানের এত নিষ্প্রভ ম্যাচ দেখা যায়নি। তাহলে কি এই ম্যাচ উত্তাপ আর উত্তেজনা ছাড়াই শেষ হবে! তাঁর কথা বোধ হয় কানে গেছে দুই দলের খেলোয়াড়দের। শেষক্ষণে ঠিকই উদয় হলো চিরন্তন সেই ঝামেলা।
গোল বিতর্ক, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা—আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে সাধারণত যা হয়, যথারীতি ফিরে এল তা। ৬০ মিনিটের ম্যাচ শেষ হলো প্রায় আড়াই ঘণ্টায়। শেষ ৫৮ সেকেন্ড খেলা শেষ হতে লাগল পাক্কা ৩৫ মিনিট!
ম্যাচ যখন শেষের পথে, মাত্র ৫৮ সেকেন্ড বাকি, ঠিক তখন বড়সড় বিতর্ক বাধে। ওই সময় মোহামেডান বল পাঠায় আবাহনীর পোস্টে। সেটি গোল হলে মোহামেডান এগিয়ে যেত ২-১ ব্যবধানে। তবে শ্রীলঙ্কার আম্পায়ার দায়ান দেশনায়েক গোল দেননি, তিনি পেনাল্টি কর্নারের (পিসি) বাঁশি বাজান। এ নিয়ে আপত্তি ছিল মোহামেডানের, গোলের দাবি করছিল সাদাকালোরা। রিভিউতে পিসিই দেওয়া হয়। কিন্তু পিসি কাজে লাগাতে পারেনি মোহামেডান।
এরপর যখন শেষ বাঁশি বেজে গেছে, এমন সময় মোহামেডান পেনাল্টি কর্নারের দাবি করে। আবাহনীর ভাষ্য ছিল—খেলা তো শেষ, কিসের পিসি! আম্পায়ার রিভিউ নেন এবং রিভিউ মোহামেডানের পক্ষে যায়। এবার আবাহনী বেঁকে বসে। তারপর আবার খেলা বন্ধ। ঝামেলা মিটিয়ে খেলা শুরু হলে মোহামেডান পিসি নেয় এবং তা থেকে আবাহনীর পোস্টে বল। তবে বল পোস্টে যাওয়ার আগমুহূর্তে ফাউলের বাঁশি দেন আম্পায়ার। ফলে গোল হয়নি। মোহামেডান গোলের দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত স্কোরলাইন ১-১ থাকে।
অনিচ্ছাকৃতভাবে জিমির স্টিক লেগে যায় ম্যাচে আবাহনীর মেহরাব হোসেনের কপালে। আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন এই ডিফেন্ডার। তার কপালে ৮টি সেলাই লেগেছে বলে জানা গেছে।
শেষের নাটকীয়তা না ঘটলে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটা ম্যাড়মেড়েই হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল না, এটা দুই প্রধানের লড়াই। দুই দলের দেশি-বিদেশি কারও কাছ থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল না দৃষ্টিনন্দন কিছু।
তবে এক মাস আগে ক্লাব কাপের সেমিফাইনালে এই দুই দলের লড়াটা হয়েছিল উপভোগ্যই। সেদিনও ম্যাচের শেষক্ষণে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত আবাহনী জেতে ৩-২ গোলে। সেই আবাহনী আজ যেন খোলসের ভেতর ছিল। তুলনায় মোহামেডান ভালো খেলেছে। জয়টা মোহামেডানেরই প্রাপ্য ছিল। পিছিয়ে থেকেও মোহামেডান ম্যাচে ফিরে আসে আমিরুলের পেনাল্টি কর্নার গোলে। তার আগে আবাহনীকে এগিয়ে নেন রাকিবুল হাসান।
ম্যাচ শেষে দুই দলই সমালোচনা করেছে দুই বিদেশি আম্পায়ারের। আবাহনীর ম্যানেজার মাহবুব হারুন বলেন, ‘আম্পায়ার মাঠে আসতে দেরি করায় ম্যাচ শুরু হয়েছে ১০ মিনিট পর। এটা হতে পারে?’ মোহামেডানের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমির কথা, ‘আম্পায়ার আমাদের ন্যায্য গোল দেননি। নইলে এই ম্যাচ আমরা জিততে পারতাম।’
এই ড্রয়ে লাভ হলো আবাহনীর। প্রথম পর্বে ৯ ম্যাচে তারা অপরাজিত। এক ড্র আর ৮ জয়ে পয়েন্ট ২৫। অন্যদিকে ৮ ম্যাচে দুই ড্র আর ৬ জয়ে মোহামেডানের ২০ পয়েন্ট।
ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় আজই হঠাৎ না–ফেরার দেশে চলে যাওয়া হকি ফেডারেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফের জন্য। চট্টগ্রামের এই নিবেদিতপ্রাণ হকি সংঠকের আকস্মিক মৃতুতে শোকে মুহ্যমান হকি অঙ্গন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছে হকি ফেডারেশন।