এশিয়াডে আর্চারির বড় পরীক্ষা
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের অবস্থান ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে। বাইরে ট্রাক–বাসের হর্নের তীব্র আওয়াজ। রাস্তায় চলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। তাই স্টেডিয়ামে যাওয়া–আসার পথ বেশ কঠিন। তবে তীব্র ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে মাঠে ঢুকতেই ভেতরের পরিবেশ অন্য রকম। সেখানে চলছে বাংলাদেশ আর্চারি দলের আবাসিক ক্যাম্প, সেই সঙ্গে এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতি। দেশের ১৬ সেরা আর্চার হাংজু এশিয়ান গেমসে যাচ্ছেন একটা স্বপ্নকে সঙ্গী করেই। সেই স্বপ্ন, দেশকে সাফল্য এনে দেওয়া। এশিয়াডে সাফল্য বলতে তো পদক জয়, তবে সেটি বেশ কঠিনই।
খেলাটি অবশ্য বড় কিছুর স্বপ্ন দেখে। সিটি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষণায় অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই এগিয়ে যাচ্ছে আর্চারি। ঝড়ঝাপটা এসেছে। তবে সামলে উঠে আর্চারি লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়েনি। তারকাও তৈরি করতে পেরেছে। রোমান সানা বা দিয়া সিদ্দিকীকে সাধারণ খেলাপ্রেমীরা চেনেন। তাঁরা সাফল্যও এনেছেন। এশিয়ান আর্চারিতে সোনার পদকসহ আছে কিছু পদক। আছে বৈশ্বিক সাফল্যও। বিশ্ব আর্চারিতে পদক জিতেছেন রোমান ও দিয়া। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে রিকার্ভের মিশ্র ইভেন্টে তাঁরা লড়েছেন চূড়ান্ত পর্বে। ২০১৯ সালে কাঠমান্ডু এসএ গেমসে আর্চারি জিতেছিল ১০ সোনার পদক। যদিও শক্তিশালী ভারত ছিল না সেবার।
এসএ গেমসের চেয়ে এশিয়াড অনেক বড় মঞ্চ, যেখানে বাংলাদেশ আর্চারি দল কখনো পদক জেতেনি। পদকের আশাও আসলে আগে ছিল না। কারণ, বাংলাদেশ তখন মাত্রই উঠে আসছে। এখনো আসলে নিশ্চিত পদক জেতার মতো অবস্থায় যেতে পারেনি। তবে নির্দিষ্ট দিনে অঘটন ঘটবে না কে বলতে পারে! ২০১৮ জাকার্তা এশিয়াড সম্ভাবনার দুয়ার খোলে বাংলাদেশের সামনে। রিকার্ভ ইভেন্টে রোমান র্যাঙ্কিং রাউন্ডে তৃতীয় হয়ে খেলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। এশিয়াড আর্চারিতে এটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। রিকার্ভ মিশ্রেও সেবার কোয়ার্টারে খেলেন লাল–সবুজের আর্চাররা। সপ্তম হয়ে স্বপ্ন দেখার সাহসও পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১০, ২০১৪ গেমসেও খেলেছে বাংলাদেশ। বড় প্রশ্ন এবার কী হবে?
জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখের আশা হাংজুতে তাঁর শিষ্যরা ভালো কিছু করবেন। তবে তিনি জানেন, এশিয়ান গেমস বড় পরীক্ষার জায়গা, ‘এশিয়াডে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। এখানে খেলবে এশিয়ার সেরা দলগুলোই। পদক জিততে হলে আমাদের আর্চারদের সামর্থ্যের পুরোটা দিতে হবে।’
এশিয়াডে রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড বিভাগের সব ইভেন্টেই অংশ নেবে বাংলাদেশ। রিকার্ভ ও কম্পাউন্ডে আটজন করে যাচ্ছেন। প্রতি বিভাগে চারজন পুরুষ, চারজন নারী। এর বাইরে দলীয় ইভেন্ট আর মিশ্র ইভেন্টেও থাকবে বাংলাদেশ। রোমান ও দিয়া দুজনই রিকার্ভ শ্রেণির আর্চার। কোচ ফ্রেডরিখের আশাও রিকার্ভ নিয়েই বেশি, ‘আমরা ১০টা ইভেন্টের সব কটিতেই লড়ছি। পদক জেতার কথা জোর গলায় বলতে পারব না। না জিতলেও মন খারাপ করব না। কারণ, আমাদের আর্চারদের অভিজ্ঞতা বড় দেশগুলোর প্রতিযোগীদের তুলনায় কম। কিন্তু তাদের সামর্থ্য আছে। রিকার্ভের আমাদের সম্ভাবনা বেশি দেখছি।’
তবে নারী দল কিছুটা শক্তি হারিয়েছে। সেনাবাহিনীর আর্চার নাসরিন আক্তার গত ১৩ জুন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে গেছেন। রোকসানা আক্তার জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যাবেন বলে ক্যাম্প ছেড়েছিলেন। তবে মিশনে তাঁর যাওয়া হয়নি। ক্যাম্পেও এখনো যোগ দেননি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দুই আর্চারেরই আছে একাধিক পদক। নাসরিন ও রোকসানার দলের বাইরে থাকা আর্চারির জন্য বড় ধাক্কাই।
আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীবউদ্দিন আহমেদ তবু এশিয়াড নিয়ে আশাবাদী, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো আর্চারদের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতির ব্যবস্থা করেছি। বড় বড় প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী দেশের আর্চারদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য খুব অল্প পয়েন্টে হয়। আর এই পার্থক্যটা পূরণ করাই এখন চ্যালেঞ্জ।’
কোচই তো বলেছেন, সেই চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারার সামর্থ্য আর্চারদের আছে।