লেডেকির ইতিহাস, ইতিহাসে লেডেকি
‘লেডেকি যখন প্রথম অলিম্পিক সোনা জিতেছিল, তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম। এই এত বছর পরও ও–ই সেরা। অবিশ্বাস্য।’
কেটি লেডেকিকে নিয়ে করা মন্তব্যটি অ্যারিয়ার্নে টিটমাসের। ২৩ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান এখন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে। এরই মধ্যে ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের সোনা গলায় ঝোলানো এই সাঁতারুকে ৮০০ মিটারেও চ্যাম্পিয়ন ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু যে পুলে লেডেকি উপস্থিত, সেখানে টিটমাস কোন ছার! কাল মেয়েদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছেন ২৭ বছর বয়সী লেডেকি, যিনি এই ইভেন্টের সোনা নিয়ে গেছেন সর্বশেষ তিন অলিম্পিক থেকেও। ০১.২৫ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে রুপা জেতা টিটমাসের মুখে তাই লেডেকির দীর্ঘ রাজত্বেরই গুণগান!
২০১২ লন্ডন অলিম্পিক দিয়ে শুরু করা লেডেকি এবার প্যারিসে এসে আগেই ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছেন। যে জয় তাঁকে অলিম্পিক নারী সাঁতারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সোনাজয়ীর সিংহাসনে তুলে দেয়। সাঁতারের শীর্ষে উঠে যাওয়ার পর সামনে ছিল অন্য খেলাগুলোকেও চ্যালেঞ্জ জানানো। শনিবার ৮০০ মিটারে সোনা জিতে লেডেকি এখন অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সোনাজয়ী নারী ক্রীড়াবিদ, তাঁর মতো ৯টি সোনা আছে জিমন্যাস্টিক কিংবদন্তি লারিসা লাতিনিনা। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে তিনটি অলিম্পিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
তবে সবচেয়ে সোনাজয়ী নারী অ্যাথলেটের চেয়েও লেডেকির বেশি খুশি অন্য দুটি কারণে। এবার নিয়ে টানা ৪ অলিম্পিকেই ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের সোনা তাঁর। এর মধ্যে আবার লন্ডনে জেতা প্রথমটি এবং প্যারিসে জেতা সর্বশেষটি একই তারিখে—৩ আগস্ট। প্যারিসের লা ডিফেন্সে অ্যারেনায় তাই নবম সোনা জয়ের পর উচ্ছ্বসিত লেডেকি বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে বড় (অর্জন) টানা চারবারের রেকর্ড। ২০১২ সালের ৩ আগস্ট আমি সোনা জিতেছিলাম। আমি চাইনি এবারের ৩ আগস্ট আমি পেছনে পড়ে থাকি। নিজেকে নিজে তাড়না দিয়েছি। কাজটা ঠিকঠাক হওয়ায় ভালো লাগছে।’
লেডেকি প্যারিসে জিতেছেন চারটি পদক। দুটি সোনা এবং একটি করে রুপা ও ব্রোঞ্জ। টোকিওতেও জিতেছিলেন দুটি সোনা, সঙ্গে দুটি রুপা। আর ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে তো রেকর্ড চার সোনাই জিতেছিলেন। সব মিলিয়ে অলিম্পিকে লেডেকির পদক এখন ১৪টি। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি পদক জয়ের কীর্তি আছে মাত্র তিনজনের।
একজন তাতিয়ানা, যিনি ৯ সোনাসহ জিতেছিলেন ১৮ পদক। আরেকজন মাইকেল ফেল্প্স, যাকে ছোঁয়া রীতিমতো অসম্ভব (২৩ সোনাসহ ২৮টি)। লেডেকির সামনে এখন শুধুই নিকোলাই আন্দ্রিয়ানভ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই জিমন্যাস্টের পদক ১৫টি। এবারের প্যারিসে তাঁর আর কোনো ইভেন্ট নেই। আন্দ্রিয়ানভের তৃতীয় স্থানও আপাতত অক্ষতই।
তবে লেডেকি যদি পরের অলিম্পিকে আবার ফেরেন? ২০২৮ অলিম্পিক হবে লেডেকির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। তত দিনে তাঁর বয়স হবে ৩১, অন্তত দূরপাল্লার সাঁতারে তো অংশ নিতেই পারবেন। লেডেকিও সে আশাবাদই শুনিয়েছেন প্যারিসে নিজের শেষ দিনে, ‘জানি সহজ হবে না, তবু পরের আসরে আমি খেলতে চাই। বছর ধরে ধরে এগোব। আমার মধ্যে যতক্ষণ কিছু অবশিষ্ট থাকবে, ততক্ষণই চেষ্টা করব।’
লেডেকি যদি লস অ্যাঞ্জেলেসে অংশ না–ও নেন, তবু পুল তাঁকে রানি হিসেবেই স্মরণ করবে বলে মনে করেন ২০০৪ অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে ব্রোঞ্জ জেতা স্টিভ প্যারি, ‘নিঃসন্দেহে লেডেকিই পুলের রানি। টানা ১৩ বছর ধরে দূরপাল্লার ইভেন্টে কাউকে এমন দাপুটে খেলতে দেখাটাই দুর্দান্ত ব্যাপার।’