বক্সিং রিংয়ে নামতে ঢাকায় ইরানি অভিনেত্রী
চেহারায় কোথায় যেন একটা মায়াবী সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে টিনা আখুন্দোতাবারের। অথচ, প্রথম দেখায় এতটুকু বোঝার উপায় নেই যে মায়াময় এই চেহারা কতটা ভয়ংকর হয়ে ওঠে বক্সিং রিংয়ে নামলে। প্রতিপক্ষকে ঘুষিতে ঘায়েল করেই যেন স্বস্তি মেলে টিনার। ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিং টুর্নামেন্ট। প্রতিযোগিতাটির পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু বক্সিং ফেস্টিভ্যাল। এটির আয়োজক বাংলাদেশ প্রফেশনাল বক্সিং সোসাইটি। আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টে খেলতে আজ ঢাকায় এসেছেন ইরানের পেশাদার বক্সার টিনা। বক্সার ছাড়াও টিনার আরেকটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ইরানের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রীও।
ইরানের বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন টিনা। এর মধ্যে ‘মোতেল ঘো’, ‘স্ক্যান্ডাল’, ‘বাজ’, ‘তালাঘ বে সাবকে ইরুনি’ সিনেমাগুলো সে দেশে বেশ জনপ্রিয়। রোমান্টিক-কমেডি ধাঁচের সিনেমা মোতেল ঘোতে সাদাসিধা তরুণী সাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পান টিনা।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে গতকাল দুপুরে পাওয়া গেল বক্সার টিনাকে। মাথায় হিজাব নেই। চুলে ড্রেডলক স্টাইলের বিনুনি। হাতে ধরা বেল্ট। অভিনেত্রী থেকে বক্সার হয়ে ওঠার মজার গল্পটা শোনালেন টিনা, ‘আমার বক্সিং ক্যারিয়ারের শুরু সাত বছর আগে। একজন পরিচালক আমাকে চ্যাম্পিয়ন নারী বক্সারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁকে বলি, আমি তো বক্সিং পারি না, কীভাবে অভিনয় করব? এরপর আমি বক্সিং শিখতে শুরু করি। একসময় বক্সিং ভালো লেগে যায় এবং ওই চরিত্রকে ভালোবেসে ফেলি। এর পর থেকে আমি নিয়মিত বক্সিং খেলছি।’
ইরানে মেয়েদের বক্সিং নিষিদ্ধ। কিন্তু অনুশীলন থেমে থাকে না টিনার, ‘আমাদের দেশে বক্সিং নিষিদ্ধ। কিক বক্সিং, কারাতে, জুডো, কুস্তি খেলে মেয়েরা। কিন্তু বক্সিং রিংয়ে নামার কল্পনা করাও অসম্ভব। আমি অনুশীলন করি লুকিয়ে। কখনো বাড়িতে, কখনো পার্কে।’
ইরানে কঠোর পর্দাবিধি লঙ্ঘন করায় গত সেপ্টেম্বরে পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন মাসা আমিনি নামের এক তরুণী। ইরানে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলেছে হিজাববিরোধী আন্দোলন। রক্ষণশীল ইসলামিক শাসনের আওতায় থাকা ইরানে হিজাব আইন বেশ কঠোর। দেশে থাকলে তাই হিজাব ছাড়া মোটেও বাইরে বের হন না টিনা, ‘আসলে আমাদের সরকার ও দেশ এটা পছন্দ করে না। আমি কখনো তাই আইন ভাঙি না। কখনো সীমা অতিক্রম করি না। এ জন্য আমার সেখানে চলতে–ফিরতে কোনো সমস্যা হয় না।’
এ পর্যন্ত আটটি পেশাদার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন টিনা। এর মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছেন। ঢাকায় খেলবেন বাংলাদেশের বক্সার তাজরিন আক্তারের বিপক্ষে। যদিও বাংলাদেশের বক্সিং সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেই জানালেন, ‘এর আগে আমি ভারতে তিনবার বক্সিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি এখানে এসেছি নতুন একটি অভিজ্ঞতা নিতে।’
মারামারির খেলা বক্সিংয়ে চোটশঙ্কা সব সময়ই থাকে। টিনাও একবার বক্সিং রিংয়ে প্রতিপক্ষের ঘুষিতে মারাত্মক আহত হন, ‘একবার আমার নাক ভেঙে গিয়েছিল। ওই অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। আমি তো ভয়ই পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, চেহারা নষ্ট হয়ে গেলে সিনেমার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন টিনা। বাবা কার্পেট ব্যবসায়ী। পরিবার থেকে খেলাধুলার ব্যাপারে বাবার সমর্থন পান, ‘বাবা আমাকে সব ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন। কখনো বলেন না, তুমি এটা কোরো না, ওটা কোরো না। আমি বক্সিং খেলি দেখে পরিবারের সবাই খুশি।’
পেশাদার বক্সিংয়ে মেয়েদের বিভাগে একদিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন টিনা, ‘আমার দেশের প্রথম নারী বক্সার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আমি আসলে বক্সিংটা ভীষণ উপভোগ করি।’