বয়স চুরি আর নানা বিতর্কের মধ্যে গত বছরের মার্চে শেষ হয়েছে প্রথম শেখ কামাল স্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকস। সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে হয় এই প্রতিযোগিতা। অ্যাথলেটিকসে নবীন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের এই আয়োজনে অংশ নেয় সাড়ে তিন লাখ প্রতিযোগী। তার মধ্য থেকে সেরা প্রতিভা হিসেবে বাছাই করা হয় ৩৫ জনকে।
অনেক সমালোচনা শেষে প্রায় এক বছর পর সেই খেলোয়াড়দের নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্যাম্প শুরু হয় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ওই ৩৫ জনের মধ্যে বিকেএসপির ১০–১২ জন খেলোয়াড় ক্যাম্পেই আসেনি। দুই মাস ক্যাম্প চলার কথা থাকলেও ২০-২২ দিন চলার পরই তা বন্ধ হয়ে যায় ফেডারেশনের পরিকল্পনাহীনতা ও দূরদর্শিতার অভাবে।
এর কারণ হিসেবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আবাসনসংকটকে দায়ী করছে। এটা ঠিক যে অ্যাথলেটদের রাখার মতো নিজস্ব ব্যবস্থা নেই অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের। কিন্তু সেটা তো তাদের জানাই ছিল। তাহলে এত বিশাল আয়োজন থেকে বাছাই করা খেলোয়াড়দের পরিকল্পনা করে কোথাও রেখে কেন ক্যাম্প করানো হলো না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সাত কোটি টাকার বিশাল আয়োজনের প্রাপ্তি নিয়েও।
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেছেন, ‘সাত কোটি টাকার এত বড় কর্মসূচিতে বিরাট উন্নয়ন হওয়ার কথা। কিন্তু বাছাই করাদের নিয়ে ঠিকমতো ক্যাম্পাই করা না গেলে আর লাভ হলো কী?’
বাছাই করা অ্যাথলেটরা ক্যাম্প করতে ঘুরছে যাযাবরের মতো। ছেলেদের প্রথমে রাখা হয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম–সংলগ্ন ভলিবল স্টেডিয়ামের হোস্টেলে। মেয়েদের রাখা হয় রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে। ভলিবলের ক্যাম্প শুরু হলে ছেলেদেরও নিয়ে আসা হয় রোলার স্কেটিংয়ের হোস্টেলে। কিন্তু রোলার স্কেটিংয়ের নিজস্ব সূচির কারণে সেখানেও বেশি দিন তাদের রাখা সম্ভব হয়নি।
বাকিদের নিয়ে অবশ্য আবার ক্যাম্প করার কথা বলছেন ফেডারেশন সম্পাদক আবদুর রকিব। তিনি জানিয়েছেন, ২৪-২৬ মে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জাতীয় জুনিয়র প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেখ কামাল টুর্নামেন্টের বাছাই করাদের নিয়ে নতুন করে ক্যাম্প হবে। সেই ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা ২৮ মে।
কিন্তু সাধারণ সম্পাদকও জানেন না কোথায় হবে ক্যাম্প হবে, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে ভলিবল, হ্যান্ডবল, রোলার স্কেটিংয়ের কাছে আমরা হোস্টেল চাইব। তাদের কাছ থেকে সহায়তা পেলে এখানেই ক্যাম্প করব।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের সমস্যা হলো ক্যাম্প করার জায়গা নেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের করপোরেট বক্সগুলো অ্যাথলেটদের থাকার উপযোগী করে দিতে প্রায় দুই বছর ধরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অনুরোধ করলেও কোনো সাড়া পাইনি। চাইলেও তাই আবাসনের অভাবে ক্যাম্প করতে পারছি না।’
গত ১৩ নভেম্বর শুরু হয়েছিল জাতীয় দলের ক্যাম্প। অ্যাথলেটিকসে তখন আবাসিক ক্যাম্প হয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে। কিন্তু সেখানে আবাসনব্যবস্থা ভালো নয় বলে ক্যাম্প স্থগিত হয়ে যায় ৭ ডিসেম্বর। সে সময় ফেডারেশন বলছিল, জাতীয় প্রতিযোগিতার পর ক্যাম্প আবার শুরু হবে। জাতীয় প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ক্যাম্প শুরু হয়নি।
এত কিছুর মধ্যেও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের স্বীকৃতি পেয়েছেন অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান। আগামীকাল বিশ্ব অ্যাথলেটিকস দিবস উপলক্ষে বিকেএসপিতে ‘কিডস ফেস্টিভ্যাল’ করতে যাচ্ছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। প্রশ্নটা তবু থেকেই যাচ্ছে, সাত কোটি টাকার প্রকল্প থেকে প্রাপ্তি কী অ্যাথলেটিকসের।