স্বাধীনতা দিবসে জার্মানির রাস্তায় উড়ল বাংলাদেশের পতাকা
২৬ বছর ধরে তিনি দৌড়াচ্ছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। সব সময় সঙ্গে থাকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। কাকতলীয়ভাবে এবার সেই প্রাণের পতাকা উড়ল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে।
ছুটির দিনে জার্মানির হ্যানোভার শহরে নেমেছিল মানুষের ঢল। ঐতিহ্যবাহী ম্যারাথন দৌড় দেখতে রাজপথের ধারে হাজার হাজার মানুষ। ১৯৯১ সালে শুরু হওয়া হ্যানোভার ম্যারাথনের এবার ৩১ বছর পূর্তি। এ বছর ৩১তম ম্যারাথনে ৩৫টি দেশ থেকে যোগ দেওয়া অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার।
দেশ–বিদেশের ২৫ হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি শিবশঙ্কর পাল। তিনি দৌড়াচ্ছেন সেই ১৯৯৭ সাল থেকে। এটি তাঁর ১২১তম ম্যারাথন। পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নিউইয়র্কে নিজের শততম ম্যারাথনে দৌড়েছিলেন শিবশঙ্কর।
শিবশঙ্কর দৌড়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। নিউইয়র্ক, হনুলুলু, ভিয়েনা, লন্ডন, সাইপ্রাস, জুরিখ, নেপালসহ যেখানেই ম্যারাথন শেষ করেন, সেখানেই টাচ মার্কের কাছে এসে যত্নের সঙ্গে রাখা বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাটি দুই হাতে মেলে ধরেন।
হ্যানোভার শহরের ম্যারাথনটি সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশ আর বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠিত হওয়ায় মনের ভেতর এক অন্য অনুভূতি কাজ করেছে বলে জানান শিবশঙ্কর পাল। এই ম্যারাথনে অংশ নিতে তাই তিনি মিউনিখ থেকে দুই দিন আগে হ্যানোভারে এসেছেন।
স্বাধীনতা দিবসে ম্যারাথনে দৌড়ানো তাঁর কাছে পরম পাওয়া, ‘জীবনের পরম প্রাপ্তি বলে যদি কিছু থাকে, তবে আজকের দিনটি আমার জীবনের পরম প্রাপ্তির দিন। কারণ, লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। দেশের স্বাধীনতা দিবসে লাল–সবুজ পতাকা দুই হাতে মেলে ধরে অতুলনীয় এক অনুভূতি কাজ করছে আমার ভেতর।’
শিবশঙ্কর পাল বুকের মধ্যে সব সময়ই বাংলাদেশকে ধারণ করেন। আর এই ম্যারাথনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করাতে চান তিনি।
ঢাকার দোহার নবাবগঞ্জের অধিবাসী শিবশঙ্কর পাল জানান ম্যারাথনের প্রতি তাঁর আকর্ষণের শুরুর গল্পটা, ‘আমি সমতলের মানুষ। তবে ইউরোপে আসার পর থেকে পাহাড় দেখে পাহাড়ের প্রতি একটা অন্য রকম টান অনুভব করি। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল পাহাড় বা সমতল সর্বত্রই ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করার।’
ম্যারাথনের প্রস্তুতিটা তিনি শুরু করেছিলেন মিউনিখেই। প্রতিদিন কাজের শেষে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দৌড়ান। ছুটির দিনগুলোতেও অনুশীলন চালিয়ে গেছেন একইভাবে। অনুশীলনের জন্য তিনি বেছে নেনে ঢালু ও উঁচু–নিচু জায়গাগুলো।
মিউনিখ শহরেই শিবশঙ্কর পালের একটি ইলেকট্রনিকসের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। ব্যবসাসফল এই প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে মিউনিখ সিটি করপোরেশনে সফল অভিবাসী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছে।