ভলিবল মাঠে কেন আন্তর্জাতিক কাবাডি
চারপাশে রঙিন আলোর রোশনাই। একটু পরপর ডিজে বক্সে বেজে উঠছে গান। কাবাডি ম্যাটের চারপাশের ডিজিটাল পর্দায় ভেসে উঠছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বাহারি বিজ্ঞাপন। খেলোয়াড়দের মাঠে ঢোকার জন্য তৈরি করা হয়েছে টানেল। খেলার বিরতিতে হয় গানবাজনা।
ভারতের পেশাদার কাবাডি লিগ প্রো-কাবাডির আদলেই ১৩ মার্চ ঢাকায় শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডি। ১২টি দেশের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণভাবেই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। কিন্তু এমন যে চমৎকার আয়োজন, সেটি কাবাডি স্টেডিয়ামে হচ্ছে না! পল্টনের শহীদ নূর হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে ম্যাট বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিকল্প কাবাডি কোর্ট।
তিন বছর আগে পল্টনের জাতীয় কাবাডি স্টেডিয়ামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। পুরোনো ভবন ভেঙে করা হয়েছে ছয়তলা ভবন। খেলোয়াড়দের জন্য আছে জিমনেসিয়াম, আছে পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়দের আবাসন ব্যবস্থাও।
কিন্তু কাবাডি খেলা আয়োজনের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, সেই কাবাডি কোর্টটাই হয়ে গেছে ত্রুটিপূর্ণ। আর এ কারণেই এত সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ঠিকানায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারছে না কাবাডি ফেডারেশন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডির আগের দুটি আসরও হয়েছে এই ভলিবল মাঠে।
আসলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করতে যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন, সেটাই নেই কাবাডি স্টেডিয়ামে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান অসহায় কণ্ঠে বললেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক মাপের কোর্ট নেই। তাই ভলিবল মাঠে খেলা চালাতে হচ্ছে। বিকল্প ভেন্যু তৈরি না করা পর্যন্ত এখানেই খেলা চালিয়ে নিতে হবে।’
আন্তর্জাতিক কাবাডি কোর্ট দৈর্ঘ্যে ১৩ মিটার ও প্রস্থে ১০ মিটার হতে হয়। কোর্টের চারপাশে তিন মিটার করে জায়গা রাখতে হয় বিজ্ঞাপন বোর্ডের জন্য। রেফারিদের বসার টেবিলও কোর্টের পাশেই রাখতে হয়। টেলিভিশন সম্প্রচারের সরঞ্জাম ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করতেও বেশ বড় জায়গা লাগে।
তা ছাড়া এখন খেলোয়াড়দের বসার জায়গা করা হয় কোর্টের পাশে দুই দিকে। মাঠ আয়তাকার না হলে গ্যালারি থেকে দর্শকেরা সুন্দরভাবে খেলা দেখতে পারেন না। কিন্তু কাবাডি স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে নতুন ভবন ও গ্যালারি নির্মাণ করায় জায়গা অনেক কমে গেছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো না সেখানে। তাই বাধ্য হয়েই কাবাডির ভলিবল মাঠে যাওয়া।
ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক রেফারি আবদুল মান্নানের দাবি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অদূরদর্শিতার কারণেই কাবাডি স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন করা যাচ্ছে না, ‘আমরা যদি আর মাত্র ১০ মিটার জায়গা বাড়তি পেতাম, তাহলে এই সমস্যা হতো না। এই মাপে কোর্ট তৈরি করতে গেলে শেষ সীমানা রাস্তায় মিশে যাবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যখন ২০১০ সালে স্টেডিয়াম বানায়, তখনই তাদের এসব বিষয়ে ভাবা উচিত ছিল।’
তবে এনএসসির সচিব পরিমল সিংহ ভুলের দায় ফেডারেশনের ওপরই চাপালেন, ‘সাধারণত এনএসসির পক্ষ থেকে যখন কোনো কমপ্লেক্স বা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, তখন যারা এটা ব্যবহার করবে, তাদের চাহিদা অনুযায়ীই কাজটা করা হয়। কাবাডি স্টেডিয়াম যখন তৈরি হয়েছিল, ওই সময়ে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই জানি না তখন কী হয়েছিল। কিন্তু এখন কোনো ফেডারেশনের সংস্কার বা নতুন কিছু নির্মাণ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের কর্মকর্তা বা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেই করি। কারণ তাঁরাই সেখানে খেলবে। কাবাডি যে এতটা এগিয়ে যাবে, ওই সময় হয়তো বিষয়টা এভাবে চিন্তায় আসেনি।’
তবে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে যখন কাবাডি ও ভলিবলের জন্য ছয়তলা ভবন নির্মাণ ও গ্যালারি সংস্কারের কাজ শুরু হয়, তখন এর নকশায় আপত্তি জানিয়েছিল ভলিবল ফেডারেশন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবনা ছিল যেন একই শেডের মধ্যে দুটি মাঠ তৈরি করা হয়, তাহলে সেটাকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হিসেবে বিবেচনা করা যেত।’
সেটা যে করা যায়নি, তার দায় অবশ্য নিতে হবে কাবাডি এবং ভলিবল ফেডারেশনকেও। সংস্কারের সময় দুই ফেডারেশনকেই মাঠ নিয়ে তাদের প্রস্তাব দিতে বলেছিল এনএসসি। কিন্তু নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে তা দিতে পারেনি কাবাডি ও ভলিবল ফেডারেশন।