ছিলেন অলিম্পিক তারকা, এখন এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়

সাবেক স্নোবোর্ডার রায়ান ওয়েডিং এখন দাগি অপরাধীছবি: কানাডিয়ান অলিম্পিক কমিটি

কানাডার জনপ্রিয় স্নোবোর্ডার ছিলেন রায়ান ওয়েডিং। ২০০২ শীতকালীন অলিম্পিক দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। কিন্তু অবসরের পর সেই যে অন্ধকার জগতে পা বাড়ালেন, আর বেরোতে পারলেন না।

দোষী সাব্যস্ত হয়ে চার বছর জেলও খেটেছেন ওয়েডিং। মুক্ত হওয়ার পর নিজেকে শোধরানো দূরে থাক, আবারও অপরাধে জড়িয়েছেন। খুন, মাদক পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ওয়েডিংকে শীর্ষ ১০ মোস্ট ওয়ান্টডে বা পলাতক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাঁকে ধরিয়ে দিতে বা খোঁজ দিতে পারলে ১ কোটি মার্কিন ডলার (১২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা) পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। ৪৩ বছর বয়সী ওয়েডিং বর্তমানে মেক্সিকো বা লাতিন আমেরিকার কোনো দেশে অবস্থান করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেওয়ার কিছুদিন পরই অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন ওয়েডিং, বিশেষ করে মাদক পাচারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ২০১০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত তাঁকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন। ছাড়া পাওয়ার পর আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, রায়ান ওয়েডিংয়ের একটি সংগঠন ছিল, যেটি সবচেয়ে মারাত্মক দুটি মাদকদ্রব্য কোকেন ও ফেন্টানাইল প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করত। মাদকগুলো কলম্বিয়া থেকে মেক্সিকোতে পাঠানো হতো। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে সংরক্ষণ করে রাখা হতো। এরপর পাঠানো হতো কানাডায়। অপরাধীদের নেটওয়ার্কের নেতা হিসেবে তিনি কোটি কোটি ডলারের চেতনানাশক মাদক পাচার করেন, যার ফলে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য চোরাচালানের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

রায়ান ওয়েডিং বর্তমানে মেক্সিকো বা লাতিন আমেরিকার কোনো দেশে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের
ছবি: এফবিআই

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ওয়েডিংকে হত্যা, মাদক পাচারের ষড়যন্ত্রসহ একাধিক গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের নভেম্বরে কানাডার অন্টারিওতে মাদকের চালান চুরির প্রতিশোধ হিসেবে দুই ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ওয়েডিংয়ের নেটওয়ার্কই চরম সহিংসতা সৃষ্টি করেছিল।

বছরের পর বছর ধরে ওয়েডিং ‘এল জেফে’, ‘জায়ান্ট’, ‘পাবলিক এনিমি’সহ বেশ কয়েকটি ছদ্মনামে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন এবং সিনালোয়া কার্টেলের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সিনালোয়া কার্টেল হলো মেক্সিকোর বৃহৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা অবৈধভাবে মাদক ও অর্থ পাচার করে থাকে। কর্তৃপক্ষের অনুমান, ওয়েডিংয়ের সংগঠন প্রতিবছর প্রায় ৬০ টন কোকেন ও মাসে ৫ টন ফেন্টানাইল লস অ্যাঞ্জেলেসের মধ্য দিয়ে পরিবহন করত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করত।