২৭ বছরের এক সম্পর্ক ছিন্ন করলেন টাইগার উডস

নাইকির সঙ্গে আর চুক্তি হচ্ছে না, জানিয়েছেন টাইগার উডসএএফপি

নাইকির সঙ্গে দীর্ঘদিনের চুক্তি শেষ করার ঘোষণা দিয়েছেন টাইগার উডস। গলফের প্রথম কোটিপতি হতে তাঁকে সহায়তা করেছে যে কোম্পানি, তাদের সঙ্গে প্রায় তিন দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গলফ কিংবদন্তি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ১৫ বারের মেজরজয়ী উডস নাইকিকে তাদের দীর্ঘদিনের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে নাইকির সঙ্গে প্রথম চুক্তি করেন উডস। পরের ২৭ বছর এ চুক্তি থেকে তিনি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করেছেন বলে জানা যায়।  

উডস বলেছেন, ‘২৭ বছর আগে বিশ্বের অন্যতম আইকনিক একটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি শুরু করতে পেরে সৌভাগ্যবান ছিলাম। এরপরের দিনগুলো দুর্দান্ত কিছু মুহূর্ত ও স্মৃতিতে পূর্ণ, নাম বলতে গেলে অনন্তকালেও শেষ হবে না।’

এরপর উডস যোগ করেন, ‘(নাইকির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ফিল নাইটের প্যাশন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নাইকি এবং নাইকি গলফের এ চুক্তি সম্ভব করেছে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ধন্যবাদ দিতে চাই। পাশাপাশি নাইকির সব কর্মী এবং দুর্দান্ত সব অ্যাথলেট, যাঁদের সঙ্গে এ পথে কাজ করার আনন্দ পেয়েছি আমি।’

নতুন কোনো স্পনসরের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু না বললেও লস অ্যাঞ্জেলেসে পরের মাসে জেনেসিস ইনভাইটেশনালে ‘আরেকটি অধ্যায়’-এর ইঙ্গিত দিয়ে উডস লিখেছেন, ‘লোকে জিজ্ঞাসা করবে, নতুন কোনো অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে কি না। হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবেই আরেকটি অধ্যায় আছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে দেখা হবে! টাইগার।’

প্রাথমিকভাবে নাইকির সঙ্গে উডসের চুক্তি শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ ছিল
এএফপি

৪৮ বছর বয়সী গলফারের ক্যারিয়ারে উডস ও নাইকি সমার্থকই হয়ে গিয়েছিল। যার শুরুটা ছিল ১৯৯৬ সালে নাইকির বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেইনে, যেখানে উডস শুধু বলতেন, ‘হ্যালো ওয়ার্ল্ড।’

প্রাথমিকভাবে নাইকির সঙ্গে উডসের চুক্তি শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পরে ক্রীড়াসামগ্রীর বড় এই প্রতিষ্ঠান বল ও ক্লাব উৎপাদনও শুরু করে। যার পেছনে গলফের বিশ্বব্যাপী আকর্ষণ বাড়াতে উডসের সাফল্যের অবদানও ছিল।

‘দুর্দান্ত এক রাউন্ড’
উডসের ঘোষণার পর ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে তাঁকে তাঁর অর্জনের জন্য ‘স্যালুট’ জানিয়েছে নাইকি। ‘সানডে রেড’ নাইকি শার্ট পরা উডসের ছবি দিয়ে বানানো গ্রাফিকসে লেখা হয়েছে, ‘অবিশ্বাস্য এক রাউন্ড, টাইগার’।

সে পোস্টে তারা লিখেছে, ‘টাইগার, আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রচলিত রীতি, ঘরানা, চিন্তাভাবনার প্রাচীন উপায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। আপনি পুরো প্রাতিষ্ঠানিক গলফকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। আপনি আমাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার—নিজেকে জানিয়েছেন। আর সেই চ্যালেঞ্জের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’

পৃথক আরেকটি বিবৃতিতে নাইকি বলেছে, আফ্রিকান-আমেরিকান বাবা ও থাই মায়ের সন্তান উডস ‘খেলার সব বাধা পেরিয়ে গেছেন’।

১৯৯৬ সালে নাইকির সঙ্গে প্রথম চুক্তি করেন টাইগার উডস
এএফপি

তারা বলেছে, ‘আমরা তাকে রেকর্ড গড়তে দেখেছি, প্রচলিত চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দেখেছি এবং বিশ্বজুড়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে দেখেছি।’

১৯৯৬ সালে প্রথম চুক্তির সময় উডসের বয়স ছিল মাত্র ২০। বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডানের মতো উডসকেও তারা ‘প্রজন্মে একজন’ হিসেবেই দেখেছে। যেমন দেখেছিল টেনিস কিংবদন্তি রজার ফেদেরারকে। অবসর নেওয়ার ২০ বছর পরও জর্ডানের নামে বাস্কেটবল সামগ্রি বিক্রি করে নাইকি। ফেদেরার অবশ্য ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে নাইকি থেকে জাপানিজ ব্র্যান্ড ইউনিকলোতে চলে গিয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে গলফে নাইকির বিক্রি ১০ বিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড়িয়ে গেছে, ২০১৩ সালেই ৭৯১ মিলিয়ন ইউএস ডলার মুনাফা ছিল তাদের। অনুমান করা হয়, সব মিলিয়ে নাইকির কাছ থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করেন উডস।

২০০৯ সালে যৌন কেলেঙ্কারিতে উডসের ক্যারিয়ার যখন টালমাটাল হয়ে পড়েছিল, নাইকি তখনো তাঁর পাশে ছিল ভালোভাবেই। সে সময় অন্য স্পনসররা সরে গেলেও নাইকি থেকে গিয়েছিল ঠিকই।

আরও পড়ুন

উডসও সে ঋণ শোধ করেন—২০১৬ সালে গলফের সামগ্রী উৎপাদন থেকে নাইকি সরে গেলেও তাদের পোশাক পরে চলেন তিনি। অবশ্য ২০২১ সালে উডসের ভয়ংকর গাড়ি দুর্ঘটনার পর আবার ধাক্কা খায় নাইকির সঙ্গে তাঁর চুক্তির ভবিষ্যৎ। ক্যালিফোর্নিয়ার সেই দুর্ঘটনায় উডসের ডান পা কেটে ফেলতে হতে পারে—এমন শঙ্কাও ছিল।

সেই দুর্ঘটনার পর থেকে উডস ফুটজয় নামের একটি কোম্পানির জুতা পরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, তাঁর অ্যাঙ্কেলের জন্য তাদের জুতা বেশি আরামদায়ক। নাইকির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় আবারও।

২০২৩ সালে নাইকির সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভবিষ্যৎ কী, এ ব্যাপারে গত মাসে পিএনসি চ্যাম্পিয়নশিপে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উডস বলেন, ‘আমি এখনো তাদের জিনিস পরছি।’

তবে এখন আর তা পরবেন না উডস, ২৭ বছর ধরে যা পরেছিলেন।