২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

স্মরণীয় দিনে আরও উজ্জীবিত ইমরানুর

পুরস্কার নিয়ে কথা বলছেন ২০২৩ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ইমরানুর রহমানশামসুল হক

‘ইমরানুরের সঙ্গে আজই আমার প্রথম দেখা। তবে আমরা বিভিন্নভাবে যোগাযোগের মধ্যে থাকি। ইমরানুরের অর্জন বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। দারুণ সাফল্য।’

মঞ্চে সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস যখন কথাগুলো বলছিলেন, হলভর্তি অতিথির চোখ তখন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার ও ২০০৬ সালে প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারের বর্ষসেরার পাশে দাঁড়ানো অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানের দিকে। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব এই প্রথম এমন মঞ্চে উঠলেন। ক্রিম কালারের স্যুটে দারুণ লাগছিল তাঁকে।

শাহরিয়ার নাফীস ইমরানুরের নাম ঘোষণা করেন ২০২৩ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে। আর তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিতে গিয়ে শাহরিয়ার দিলেন দারুণ এক তথ্য, ‘ইমরানুরের সেই এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জয়ের ভিডিওটা আমি আমার ফেসবুকে দিয়েছিলাম। তাতে ভিউ হয়েছে আড়াই মিলিয়ন!’

আরও পড়ুন

হওয়ারই কথা। এশিয়ান পর্যায়ে অ্যাথলেটিকসে বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেটের জন্য একটা পদক জেতাই যেখানে স্বপ্ন, সেখানে ইমরানুর রীতিমতো সোনা জিতেছেন! এশিয়ান র‍্যাঙ্কিংয়ে চলে আসেন যৌথভাবে শীর্ষে। ২০২৩ সালে থাইল্যান্ডে এশিয়ান অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে হন ১১তম, হাঙ্গেরিতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে প্রথম রাউন্ডে (হিটে) প্রথম। লন্ডনে একটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ১০.১১ সেকেন্ড সময় নেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। এই টাইমিং এখন বাংলাদেশের জাতীয় রেকর্ড হিসেবেও গণ্য হচ্ছে। এমন কৃতিত্ব বাংলাদেশিদের মধ্যে তাঁরই প্রথম এবং একমাত্র। প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারে কোনো অ্যাথলেটেরও এই প্রথম বর্ষসেরা হওয়া।

ইমরানুরকে এভাবে জড়িয়ে ধরেন শাহরিয়ার নাফীস (বাঁয়ে)
প্রথম আলো

ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইমরানুরের। ২০২২ সালে প্রথমবার বাংলাদেশের জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েই রেকর্ড গড়ে ১০০ মিটার জয়। সেই থেকে ৩০ বছর বয়সী এই অ্যাথলেটই দেশের দ্রুততম মানবের আসনে। দুই বছরের মধ্যেই দেশের ক্রীড়ায় নিজেকে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাথলেট। সেটারই প্রাপ্তি বর্ষসেরার পুরস্কার এবং এই পুরস্কার নিতে কাল সকালেই দোহা থেকে ঢাকা আসেন ইমরানুর। দোহায় অনুশীলন করতে গেছেন কদিন আগে। সেখানে স্ত্রী আর তিন বছরের একমাত্র কন্যাকে রেখে এসেছেন। ঢাকা থেকে তাঁদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন দারুণ এক উপহার। গত রাতেই তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা দোহায়।

ইমরানুর বাংলা বলতে অভ্যস্ত নন। বাংলা যেটুকু পারেন তা সিলেটের ভাষায়, যেখানে তাঁর বাবার বাড়ি
প্রথম আলো

যাওয়ার আগে ঢাকায় কাটানো কয়েকটা ঘণ্টা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইমরানুরের কাছে। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ইমরানুর বাংলা বলতে অভ্যস্ত নন। বাংলা যেটুকু পারেন তা সিলেটের ভাষায়, যেখানে তাঁর বাবার বাড়ি। ভাঙা ভাঙা সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘পুরস্কার পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’ তবে বেশির ভাগ কথা বলেছেন ইংরেজিতেই। অনুষ্ঠান শেষে সেলফিশিকারিদের আবদার মেটাতে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা হয় তাঁর। টানা সেলফির আবদার মিটিয়েছেন ঘণ্টাখানেক ধরে। সঙ্গে অ্যাথলেটিকস পরিবারের সবার অভিনন্দনে সিক্ত হয়ে বলছিলেন, ‘থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ’। ইমরানুর বারবারই বলছিলেন নিজের স্বপ্নের কথা, ‘এই পুরস্কার পেয়ে আমার স্বপ্নটা অনেক বড় হয়ে গেছে। আমি চাই দেশকে আরও কিছু দিতে, এসএ গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিততে চাই।’

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডে হিসাবরক্ষকের চাকরির টাকায় অনুশীলন খরচ মিটত না ইমরানুরের। বাড়তি আরেকটা চাকরিও করতে হতো তাঁকে। সেসব কঠিন দিন আরও বেশি শক্তি দেয় ইমরানুরকে। দোহায় অনুশীলন বিরতি দিয়ে কাল কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় এসেও বসে থাকেননি। হালকা স্ট্রেচিং করেছেন হোটেলেই। নিজেই বলেন, ‘আমার কাছে পরিশ্রমই শেষ কথা। আমি পরিশ্রম করে যাব এবং থামব না। এই পুরস্কার আমাকে আরও উজ্জীবিত করবে। এটা আমার জীবনে অন্যতম, স্মরণীয় এক দিন।’

দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের গোটা অ্যাথলেটিকস পরিবারের জন্যই। ইমরানুর নিজে যেমন আলোকিত হয়েছেন, আলোকিত করেছেন দেশের অ্যাথলেটিকসকেও। অনুষ্ঠানে আসা সাবেক অ্যাথলেটদের সবাই ইমরানুরের এই অর্জনকে পাথেয় করে দেশের অ্যাথলেটিকসকে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ফেডারেশন কর্মকর্তাদের।