এই যুগেও বাসে–ট্রেনে ভারত যাত্রা যুব হকি দলের
আকাশপথে যাওয়ার সুযোগ থাকলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে সড়কপথে যাতায়াত যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে সবাই। অথচ বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের আর্থিক অবস্থা এমনই যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দল পাঠাতে হচ্ছে সড়কপথে! ঢাকা থেকে আজ রাতে বাসে বেনাপোল হয়ে কলকাতা যাবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। তবে তাদের এই ভ্রমণ কলকাতাতেই শেষ হবে না।
কলকাতা থেকে ট্রেনে দিল্লি হয়ে দল যাবে হরিয়ানার নারওয়ানাতে। সেখানে ছয়টি ম্যাচ খেলে গন্তব্য পাঞ্জাবের জলন্ধর। জলন্ধরে চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশ দল এশিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ হকি টুর্নামেন্টে খেলতে আকাশপথে যাবে ওমানের রাজধানী মাসকটে।
এতটা পথ কেন দলকে সড়ক আর রেলপথে পাঠানো হচ্ছে, আজ এই প্রশ্ন উঠেছে অনূর্ধ্ব-২১ দলের সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ পরোক্ষে আর্থিক সমস্যাকেই কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।
তাঁর কথার সারমর্ম—দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে হকি ফেডারেশনের বিলাসিতার সুযোগ নেই। ট্রেনে স্লিপিং কোচ আছে, খেলোয়াড়েরা ঘুমিয়ে যেতে পারবেন। আর বিমানে গেলেও দিল্লি থেকে হরিয়ানা বাসেই যেতে হতো।
মমিনুল হক বলেছেন, ‘আমাদের কোনো স্পনসর নেই, বাজেটও নেই। আমরা কর্মকর্তারা একত্রিত হয়ে ছেলেদের পাশে থাকছি। ফেডারেশনের কর্মকর্তারা নিজেদের পয়সা দিয়ে স্পোর্টসের জন্য কাজ করি। রাষ্ট্র থেকে ফেডারেশন যে অর্থ পায়, তা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারি না। যেখানে কিছুই নেই, সেখানে আপনি কীভাবে পরিকল্পনা করবেন?’
গত নভেম্বরে বড় পৃষ্ঠপোষক নিয়ে প্রথমবার দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগ হয়েছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, পৃষ্ঠপোষক নেই! এ প্রসঙ্গে হকি ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘আমাকে একটা স্পনসর এনে দেন। আপনাদের সবার কাছে আমন্ত্রণ, হকি ফেডারেশনের জন্য স্পনসর আনেন। আমরা সাদরে গ্রহণ করব।’
সফরের জন্য ফেডারেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সমন্বয়কারী মাহবুবুল এহসান (রানা)।
বাসে-ট্রেনে ভারতে যেতে অবশ্য সমস্যা দেখছেন না দলের কোচ মামুন উর রশিদ, ‘ট্রেনে গেলাম না বাসে গেলাম, সেটা কোনো বিষয় নয়। সেটা নিয়ে আমরা ভাবছিও না। আমাদের মূল ফোকাস ভালো ফল করা। ফেডারেশন যে ব্যবস্থা করেছে, সেটা ঠিক আছে।’ ভারতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প এবং সেখানে নামীদামি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েই খুশি তিনি, ‘ছেলেদের ফিটনেস ভালো আছে। আশা করি, তারা টুর্নামেন্টে ভালো করবে।’
বাংলাদেশের হকিতে এর আগে তিন মাসের বেশি সময় কোনো দলের ক্যাম্প হয়নি। এই সফরকে তাই দেশের হকির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। একই কথা কোচ মামুন উর রশিদেরও।
এবারের ক্যাম্পের উদ্দেশ্য আগামী ২৩ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত ওমানের সালালায় অনুষ্ঠেয় ১০ দলের অনূর্ধ্ব-২১ জুনিয়র হকি টুর্নামেন্ট। টুর্নামেন্টের ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ওমান ও উজবেকিস্তান। ‘এ’ গ্রুপে আছে ভারত, পাকিস্তান, জাপান, থাইল্যান্ড ও চায়নিজ তাইপে।
হরিয়ানায় ১ মে প্রথম অনুশীলন ম্যাচ। সেখানে ৯ মে পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলে যুবারা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে বলে আশা ফেডারেশনের। প্রিন্স, রকিরা খেলবেন হরিয়ানা প্রাদেশিক দল, শহীদ ভগত সিং হকি একাডেমি ও নারওয়ানা সিটির একটি একাডেমি দলের বিপক্ষে। ১০ মে জলন্ধরে যাবে দল। সেখানে লাভলি ইউনিভার্সিটি দল ও সুরজিৎ একাডেমির বিপক্ষে বাকি চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে দিল্লি হয়ে ১৭ মে ওমানের উদ্দেশে রওনা দেবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল।
হরিয়ানা ভারতের প্রাদেশিক হকির চ্যাম্পিয়ন। সেখানকার দলগুলোতে ভারতের জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় আছে। বাংলাদেশের ছোটদের এই দল হরিয়ানায় খেলবে সিনিয়র দলের বিপক্ষে। টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতা ভারতের ৯ জন খেলোয়াড় ছিল জলন্ধরের। জলন্ধরের সুরজিৎ একাডেমির ছাত্র তাঁরা। এই একাডেমির বিপক্ষেও খেলবেন বাংলাদেশের যুবারা। সফরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের অধিনায়ক পুরান ঢাকার ছেলে প্রিন্স লাল সীমান্ত।