ইউক্রেনের দুই শাটলারের মন পড়ে আছে দেশে
দেশ ছেড়েছেন সেই কবে। প্রায় বছর তিনেক হতে চলেছে। কিন্তু তাঁদের মন পড়ে আছে দেশেই, ইউক্রেনে।
ঢাকায় চলমান ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে খেলছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইউক্রেনের দুই নারী খেলোয়াড়। দুজনেরই বাড়ি রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা খারকিভের বাসিন্দা, যেটি রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরপরই তাঁরা দেশ ছাড়েন। প্রথমে ফ্রান্সে যান, বর্তমানে থাকেন ইতালিতে। সেখানেই ব্যাডমিন্টন অনুশীলন করছেন আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে যাচ্ছেন।
দুজনের একজন পলিনা ব্রুরোভা, অন্যজন ইয়াভহানিয়া কানতেমা। নারী দ্বৈতে দুজনই জুটি গড়ে সেমিফাইনালে উঠেছেন। আজ পল্টন শহীন তাজউদ্দীন ইনডোরে কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ২১-১৬-২১-১৩ পয়েন্টে হারিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ভারানগানা-রেশমি জুটিকে। দ্বৈতে দুজনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা বেঁচে থাকলেও নারী এককের কোয়ার্টার ফাইনালে থেকে বিদায় নিয়েছেন ইয়াভহানিয়া। তবে পলিনা সেমিফাইনালে উঠেছেন।
নারী এককের কোয়ার্টার ফাইনালে আজ ভারতের নাইশা কোর ভাটয়িকে ১৮-২১,২১-১৩ ও ২১-১৪ পয়েন্টে হারিয়েছেন পলিনা। ২০ বছর বয়সী পলিনার বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৫৯। এই প্রতিযোগিতায় ১৪ দেশের ১৩০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কধারী খেলোয়াড় তিনিই। ২০২১ ও ২০২৩ সালে ইউক্রেনের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ১৩৪ র্যাঙ্কধারী ১৯ বছরের তরুণী ইয়াভহানিয়া শেষ আটে হেরে গেছেন ভারতের ইশিতা নেগির কাছে।
ইউক্রেনীয় এই দুই শাটলারই চান দ্রুত দেশে শান্তি ফিরুক, যাতে আবার তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন। পলিনা যুদ্ধের সেই সময়ে ফিরে বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর সময়টা ছিল ভয়ংকর। আমরা দিশেহারা ছিলাম আর সুযোগ খুঁজছিলাম অন্য কোথাও চলে যাওয়ার। যুদ্ধ শুরুর পাঁচ দিন পর আমরা খারকিভ ছাড়ি। তখন টিভেতে খবর দেখে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়তাম। পরে আস্তে আস্তে আমি ব্যাডমিন্টনে ফিরি।’
ইউক্রেনীয় এই দুই শাটলারই চান দ্রুত দেশে শান্তি ফিরুক, যাতে আবার তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন।
ইয়াভহানিয়ার গল্পটাও প্রায় একই। পেছন ফিরে বলেন, ‘আমাদের এলাকা খারকিভ রাশিয়ার খুব কাছাকাছি। ফলে সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার বাবা, মা ও ভাই এখনো ইউক্রেনে আছেন। তাঁদের জন্য প্রতিনিয়তই মন কাঁদে। ঢাকার এই টুর্নামেন্টে এককে সেমিফাইনালে উঠতে পারিনি, তবে চেষ্টা করব দ্বৈতে সেরা হতে।’
নারী দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অসম্ভবও নয় তাঁদের পক্ষে। প্রতিযোগিতায় শীর্ষ বাছাই পলিনার সঙ্গী ইয়াভহানিয়া তৃতীয় বাছাই। ফলে শিরোপা বড় দাবিদার তাঁরাই।
প্রতিযোগিতার তৃতীয় দিনে আজ পুরুষ দ্বৈতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের রাহাতুল নাইম-মিজানুর রহমান জুটি। তারা হারিয়েছে বাংলাদেশেরই সিফাত উল্লাহ-সিবগাত উল্লাহ জুটিকে। পুরুষ দ্বৈতের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের রাজিন অবিমুন্নু-আমান নানডাল জুটিকে ১২-২১, ২২-২০, ২১-১৫ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও মোয়াজ্জেম হোসেন জুটি।
পাঁচ দিনের টুর্নামেন্টে পুরুষ দ্বৈতেই শুধু বাংলাদেশে দুই জুটি সেমিফাইনালে উঠছে। মিশ্র দ্বৈতে আল আমিন জুমার-উর্মি আক্তার জুটি কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছে ভারতের রাহুল আজাদ-জাহনাভি জে শেঠি জুটির কাছে। এ ছাড়া মহিলা এককে সেমিফাইনালে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইশিকা জাইশওয়াল, ইশিতা নেগি, থাইল্যান্ডের লালিন লাট। পুরুষ এককের শেষ চারে শ্রীলঙ্কার বিরেন নাতাসিংহে, ভিয়েতনামের নাগুয়ান হায় ড্যাঙ্গ ও লে ডু পাত এবং কানাডার সিয়াও সেঙ্গ।