প্যারিস অলিম্পিক
‘ভালোবাসার শহর’ প্যারিসেই প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব আর্জেন্টাইন অ্যাথলেটের
প্যারিসকে বলা হয় ‘সিটি অব লাভ’। অর্থাৎ ভালোবাসার শহর। সেই শহরে অলিম্পিক আসর বসবে আর অ্যাথলেটরা সেখানে ভালোবাসা আদান–প্রদান করবেন না, তা কীভাবে হয়!
অলিম্পিকে এমন ঘটনাও তো নতুন নয়। প্রায় প্রতিটি আসরেই দেখা যায়, কোনো না কোনো অ্যাথলেট অন্য কোনো অ্যাথলেটকে প্রেম নিবেদন কিংবা বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন। কেউ কেউ সেই নিবেদন গ্রহণ করেন, আবার কেউ হয়তো পত্রপাঠ না। আর্জেন্টিনার নারী ফিল্ড হকি দলের খেলোয়াড় পিলার ক্যাম্পয় পরেন প্রথম তালিকায়। দীর্ঘদিনের প্রেমিকের দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব তিনি না করবেন কীভাবে!
রোমান্টিক এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল অলিম্পিক ভিলেজে। ইএসপিএন জানিয়েছে, আর্জেন্টিনার ছেলেদের হ্যান্ডবল দল ও মেয়েদের ফিল্ড হকি দল অলিম্পিক ভিলেজে একসঙ্গে ছবি তুলেছে। তখন দুই দলের খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে খোশগল্পে মজেছিলেন, আর সেই মুহূর্তকেই বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেন হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় পাবলো সিমোনেত।
খেলোয়াড়দের জটলা থেকে বের হয়ে এসে ক্যাম্পয়ের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে একটি ছোট্ট বাক্স খুলে আংটি নিবেদন করেন সিমোনেত। ক্যাম্পয় ততক্ষণে বিস্ময় ও আবেগে দিশাহারা হয়ে হাসিমুখেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন। সতীর্থরাও ততক্ষণে মধুর এ মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দী করতে শুরু করেন। আর করতালি তো ছিলই।
চিলিতে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত প্যান আমেরিকান গেমসে নিজ নিজ ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন সিমোনেত ও ক্যাম্পয়। এবার প্যারিস অলিম্পিকে পদক জয়ের লক্ষ্য তাঁদের। তবে ক্যাম্পয় যদি পদক না–ও জিততে পারেন, তবু ধাতব একটি অর্জন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। বুঝতেই পারছেন সেটা কী—আংটি!
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনবিসি জানিয়েছে, সিমোনেত তাঁর বাগ্দত্তাকে আংটি নিবেদন করার সময় তাঁর বড় ভাই দিয়েগোও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দিয়েগো নিজেও আর্জেন্টিনার হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড়। তাঁদের বড় ভাই সেবাস্তিয়ান আর্জেন্টিনা হ্যান্ডবল দলের হয়ে সর্বশেষ তিনটি অলিম্পিকে খেললেও এবার সুযোগ পাননি।
সিমোনেত ও ক্যাম্পয়ের মন দেওয়া-নেওয়া চলছে ২০১৫ সাল থেকে। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ও প্রেমের সম্পর্ক ছিল দুজনের। সেবারের অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হ্যান্ডবল দল দশম স্থান অর্জন করে। ফিল্ড হকি দল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। তবে দুজনের প্রথম দেখা কিন্তু প্যারিসেই।
বিয়ের প্রস্তাব দিতে ভালোবাসার এ নগরীকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল ফেডারেশনকে সিমোনেত বলেছেন, ‘আমি প্যারিসকেই বেছে নিতে চেয়েছি; কারণ, এখানেই আমাদের দেখা হয়েছিল। তখন আমি ফ্রান্সের ইভরিতে খেলছিলাম। তাই আমি ভেবেছি কাজটি করার জন্য এটাই সেরা জায়গা আর অলিম্পিক গেমস তো আছেই। সব মিলিয়ে এটাই সেরা মুহূর্ত। যখন আমরা নিজ নিজ দলে জায়গা পেলাম, তখনই বুঝেছি এখানেই (প্যারিস) কাজটি করতে হবে।’
সিমোনেতের এই পরিকল্পনা জানতেন শুধু তাঁর ভাই দিয়েগো এবং দলের অন্য দুই সতীর্থ পেদ্রো ও জেমস। আংটি নিবেদনের পরিকল্পনার ব্যাপারে সিমোনেত বলেছেন, ‘আমার ভাই দিয়েগো কিছুটা সাহায্য করেছে। জানতাম আর্জেন্টিনার সব অ্যাথলেট একসঙ্গে ডিনার করবে অলিম্পিক ভিলেজে। যখন সবাই মিলে ছবি তুলছিল তখনই বুদ্ধিটা মাথায় এসেছে—হাঁটু মুড়ে বসে তাকে আমার স্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেব। ভালো লেগেছে। কারণ, প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছে। আমার ভাই দিয়েগো এবং অন্য দুই সতীর্থ পেদ্রো ও জেমস ছাড়া কেউ কিছুই জানত না।’
গত বছর নভেম্বরে প্যান আমেরিকান গেমসে আর্জেন্টিনার হ্যান্ডবল ও ফিল্ড হকি দল খেলার সুযোগ পাওয়ার পর প্রথম এ বিষয়ে ভেবেছিলেন সিমোনেত। ৩২ বছর বয়সী লেফটব্যাক আংটি উপহার দেওয়া নিয়ে বলেছেন, ‘আর্জেন্টাইন ডেলিগেশনের জুলিয়ার সাহায্য পেয়েছি। তিনি ছবি তোলার আয়োজন করেছেন। সবকিছু খুব ভালোভাবে শেষ হয়েছে। প্রতিক্রিয়া তো সবাই দেখেছে। সে (ক্যাম্পয়) খুব বিস্মিত হয়েছে। একসঙ্গে কিছু বছর থাকলেও সে অন্তত এখন এটা আশা করেনি। কিছু ছবিতে দেখবেন অন্তত ১০ জন লোকের মুখ বিস্ময়ে ঝুলে পড়েছে। আর এ কারণেই মুহূর্তটি ছিল বিশেষ কিছু।’