অলিম্পিককে কোকাকোলার সঙ্গ ছাড়তে বললেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা

প্যারিসে চলছে অলিম্পিক গেমসএএফপি

কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কোকাকোলার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুজন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ। তাঁদের যুক্তি, অলিম্পিকের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের স্পনসর চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের চিনিসমৃদ্ধ অস্বাস্থ্যকর পানীয়কে ‘স্পোর্টসওয়াশ’ করছে।

স্পোর্টসওয়াশ—শব্দটি সাম্প্রতিক সময়ে খেলাধুলার জগতে বেশ আলোচিত। কোনো ব্যক্তি, জাতি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান বা যে কেউ যখন খেলাধুলাকে ব্যবহার করে নিজেদের ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে, তখন তাকে ‘স্পোর্টসওয়াশ’ বলা হয়। প্যারিস অলিম্পিকের ইভেন্টগুলোয় কোকাকোলার বিজ্ঞাপন সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯২৮ সাল থেকে অলিম্পিকের স্পনসর।

আরও পড়ুন

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গোষ্ঠী ‘ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস’–এর দুই বিশেষজ্ঞ ট্রিশ কটার ও সান্দ্রা মুলিনের যুক্তি, কোকাকোলার চিনিসমৃদ্ধ পানীয়তে পুষ্টি ‘খুবই কম কিংবা নেই’। এমন অস্বাস্থ্যকর পানীয়র খেলাধুলায় কোনো জায়গা নেই বলেই মনে করেন তাঁরা। বিএমজে গ্লোবাল হেলথ জার্নালে লেখা নিবন্ধে তাঁরা দাবি করেন, বৈশ্বিকভাবে মানুষের গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার মূলে রয়েছে চিনিসমৃদ্ধ এই পানীয়। এতে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাও হতে পারে।

দুই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক থেকে সৃষ্টি হওয়া দূষণেও দায় রয়েছে কোকাকোলার। এ ছাড়া গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন এবং প্রচুর পানির ব্যবহারের জন্যও কোকাকোলাকে অভিযুক্ত করেছেন তাঁরা। নিবন্ধে তাঁরা লিখেছেন, ‘কোকাকোলার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ধরে রেখে অলিম্পিক মুভমেন্ট বৈশ্বিক পুষ্টিহীনতা, পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পাল্টানোয় অবৈধ কাজের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখার ঝুঁকি নিচ্ছে। অ্যাথলেট, দর্শক এবং এই গ্রহের কথা ভেবে কোকাকোলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সম্পর্কচ্ছেদের এখনই সময়।’

আরও পড়ুন

কোকাকোলা এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০২০ সালে অলিম্পিকের সঙ্গে পথচলার মেয়াদ বাড়াতে ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যৌথ চুক্তি করে। এই চুক্তির মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত।

কটার ও মুলিন জানিয়েছেন, গত বছর অন্য যেকোনো ব্র্যান্ডের তুলনায় বেশি খেলাধুলাসম্পর্কিত স্পনসরশিপ চুক্তি করেছে কোকাকোলা। খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাইকিও তাদের সঙ্গে এই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। দুই বিশেষজ্ঞের নিবন্ধে এ বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘এই কৌশল একটি অস্বাস্থ্যকর পণ্যের “স্পোর্টসওয়াশ” এর মাধ্যমে সোনার পদক জয়ের সুযোগ।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চিনিজাত বিভিন্ন পানীয়ের ওপর কর আরোপের আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলোর প্রতি। প্যারিস অলিম্পিক শুরুর আগে ‘কিক বিগ সোডা আউট অব স্পোর্ট’ নামে একটি পিটিশন চালু করা হয়েছিল। সেখানে এই দাবির পক্ষে ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি সই পড়েছে। ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফাউন্ডেশনসহ আরও কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠান এই পিটিশনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।