ইন্টারনেটে আলোড়ন তুললেন তুরস্কের ৫১ বছরের যে শুটার

১০ মিটার এয়ার পিস্তলের মিশ্র ইভেন্টে রুপা জিতেছেন তুরস্কের ইউসুফ দিকেচঅলিম্পিক

‘পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখলে সাফল্য আসে না।’

ইউসুফ দিকেচের অলিম্পিক প্রোফাইলে তাঁর জীবনদর্শনে আছে এ উক্তি। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে সফল হওয়া যায় না—ইউসুফ নিশ্চয়ই এমনটিই বুঝিয়েছেন। তবে উক্তিটি আক্ষরিক অর্থে ধরলে যা দাঁড়ায়, তিনি করেছেন ঠিক সেটির বিপরীত। আক্ষরিক অর্থে পকেটে হাত ঢুকিয়েই সফল হয়েছেন তুরস্কের এ শুটার!

গত ৩০ জুলাই প্যারিস অলিম্পিকের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সেভাল লাদিয়া তারহানের সঙ্গে মিশ্র ইভেন্টে রুপা জিতেছেন ইউসুফ। শুটিংয়ে অলিম্পিকে তুরস্কের ইতিহাসেই এটি প্রথম পদক। এরপর ইন্টারনেট ভেঙে পড়েছে তাঁর ‘আউটলুক’ বা বেশভূষায়। সাধারণত শুটিংয়ের এমন ইভেন্টে যেমনটি থাকে কোনো অ্যাথলেটের, ইউসুফ তার ধারেকাছে দিয়েও যাননি!

ফাইনালে তুরস্কের প্রতিপক্ষ ছিল সার্বিয়া। হাড্ডাহাড্ডি ও দীর্ঘ এক লড়াই শেষে শেষ পর্যন্ত সোনা জিতেছে সার্বিয়াই। তবে দেশটির পুরুষ শুটার দামির মিকেচের একটি ছবি পাশে রাখলেই বোঝা যায়, ইউসুফ কেন ইন্টারনেটে এখন ‘সবচেয়ে বিখ্যাত’। মিকেচের চোখে বিশেষ ধরনের লেন্স, শুটারদের জন্য যা নিয়মিত একধরনের ‘গিয়ার’। কানে ইয়া বড় ‘ইয়ারমাফ’ বা শব্দনিরোধক হেডফোন।

দুই শুটারের পার্থক্য!
অলিম্পিকের ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

অন্যদিকে ইউসুফের চোখে সাধারণ একটি চশমা। ৫১ বছর বয়সী অ্যাথলেট যেটি সব সময়ই পরেন। কানে ইয়ারমাফ বলতে ছোট এক জোড়া ‘বাড’ বা তুলার মতো গুঁজে রাখা। ইউসুফের পকেটে বাঁ হাত। আর ডান হাতে পিস্তল তাক করা। হুট করে মনে হতেই পারে, বিশেষ কোনো মিশনে নেমেছেন। সেটি শেষ করেই ফিরে যাবেন।

আরও পড়ুন

ইউসুফকে নিয়ে এক্সে একজন লিখেছেন, ‘তুরস্ক ৫১ বছরের এক লোককে পাঠিয়েছে, যার কোনো বিশেষ লেন্স নেই, চোখ ঢেকে রাখার কিছু নেই, কানের সুরক্ষায় কিছু নেই। তিনি রুপা পেয়েছেন।’ ইউরোস্পোর্ট ওই পোস্টটা শেয়ার করে আবার ক্যাপশনে দিয়েছে, ‘দা নেম ইজ দিকেচ। ইউসুফ দিকেচ।’ আরেকজন আবার লিখেছেন, ‘তুরস্ক কি কোনো “হিটম্যান”কেই পাঠিয়ে দিয়েছে?’

৫১ বছর বয়সী দিকেচ শুটিংয়ে আছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। একসময় তুরস্কের সেনাবাহিনীর নন-কমিশনড অফিসার হিসেবে ছিলেন, শুটিংয়ে আগ্রহ সেখান থেকেই। আঙ্কারার গাজি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ফিজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশনে পড়েছেন। সেলজুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরে মাস্টার্স ডিগ্রিও পান।

শুটিংয়ে তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম অলিম্পিক পদক পেয়েছেন সেভাল লাদিয়া তারহান ও ইউসুফ দিকেচ (ডানে
এএফপি

প্যারিস ইউসুফের পঞ্চম অলিম্পিক। এর আগে অংশ নিয়েছেন ২০০৮, ২০১২, ২০১৬ ও ২০২০ সালে। তবে অলিম্পিকে এবারই প্রথম পদক জিতলেন তিনি। যদিও ২০১৪ সালে স্ট্যান্ডার্ড পিস্তল ও সেন্টার ফায়ার পিস্তলে ‘ডাবল’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এয়ার পিস্তলসহ সাতবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নও তিনি।

অলিম্পিকে পদক পাওয়ার পর ইনস্টাগ্রামে ইউসুফ লিখেছেন, ‘আমি খুবই খুশি যে আমরা নিজেদের ইতিহাসে প্রথম অলিম্পিক পদক জিতেছি। সাড়ে আট কোটি মানুষ যারা আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন…এ পদক তুরস্কের প্রজাতন্ত্রের জন্য!’

আরও পড়ুন

এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার নারী শুটার কিম ইয়েজির বেশভূষা আলোচিত হয়েছিল এবারের অলিম্পিকে। ইয়েজিকে দেখে হুট করে মনে হতে পারে যেন কোনো অ্যানিমে মুভির চরিত্র। ইয়েজি আবার বাঁ হাতে মেয়ের খেলনা একটা পুতুলও রাখেন। তবে ইউসুফ আসার পর কিমও যেন চলে গেছেন একটু আড়ালেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অলিম্পিকের অফিশিয়াল হ্যান্ডল থেকে অবশ্য দুজনের ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘অলিম্পিকের শুটিং তারকারা, যাদের প্রয়োজন ছিল বলে ভাবতে পারিনি আমরা।’

৫১ বছর বয়সে এসে ইউসুফ জিতবেন তাঁর প্রথম অলিম্পিক পদক, তিনি নিজে কি সেটা ভাবতে পেরেছিলেন!