অ্যাথলেটিকসের দাবি মাসিক ভাতা, কাবাডির চাওয়া শক্তিশালী কমিটি
ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটি বিভিন্ন ফেডারেশনের সঙ্গে মতবিনিয়ম শুরু করেছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে প্রথম দিনে কমিটি বসেছে হকি, বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার ও দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে। আজ দ্বিতীয় দিনে মতবিনিময় হয়েছে অ্যাথলেটিকস, স্কোয়াশ র্যাকেটস ও কাবাডি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে ১৬ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অ্যাথলেটিকস থেকে গেছেন ৪০ জনের বেশি। বিশাল এই বহরে অ্যাথলেটিকসের বর্তমান কমিটির সদস্য ফারুকুল ইসলামসহ দু–একজন ছিলেন। বাকিরা ছিলেন মূলত ‘বঞ্চিত কর্মকর্তা’ ও সাবেক অ্যাথলেট।
অনুষ্ঠানে ‘সত্যিকারের অ্যাথলেট ও সংগঠকদের’ নিয়ে ফেডারেশনের কমিটি করার দাবি জানানো হয়েছে। আগের দিন দাবাড়ুরা যেমন ফেডারেশনের নির্বাচনে তাঁদের কাউন্সিলর করার দাবি করেছেন, অ্যাথলেটিকস-কাবাডিতেও একই দাবি উঠেছে। অ্যাথলেটিকসে জাতীয় পর্যায়ে সোনাজয়ী এবং রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের জন্য মাসিক ভাতাও দাবি করা হয়েছে সরকারের কাছে।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে সোচ্চার এ ফেডারেশনেরই সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মতবিনিয়ম শেষে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, একসময় অ্যাথলেটিকসে অংশ নেওয়া সরকারি সংস্থা বিজেএমসি, কাস্টমস, রেলওয়ে, ওয়াপদার মতো দলগুলো আবার যেন খেলায় আসে।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরে এলে খেলাধুলার মান বাড়বে। অ্যাথলেটরা যেন সম্পৃক্ত থাকতে পারেন এবং ফেডারেশনে কাজ করতে পারেন, এমন বিধান রেখে গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হবে। আমাদের মূলকথা, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খেলোয়াড়েরা যাতে ফেডারেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর হতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা দরকার।’
সাবেক অ্যাথলেট খুরশিদা খুশির ভাষায়, ‘আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল ফেডারেশনের সংস্কার। খেলার সঙ্গে সম্পৃক্তদের নিয়েই যাতে কমিটি হয়, সেটার ওপরই সাবেকরা জোর দিয়েছেন বেশি।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ছিলেন সাবেক অ্যাথলেট মজিবর রহমান মল্লিক, মিলজার হোসেন, মহিউদ্দিন মোস্তাক, ফরিদ খান চৌধুরী, ইকবাল হোসেন, আল আমিন, ফিরোজা বেগম, নেলী জেসমিন, জ্যোৎস্না আক্তার, জ্যোৎস্না আফরোজ, ফৌজিয়া হুদা জুঁইসহ অনেকে। বর্তমান অ্যাথলেটদের মধ্যে ছিলেন জহির রায়হান, শিরিন আক্তারসহ বেশ কয়েকজন। ফেডারেশনের বর্তমান সদস্য ফারুকুল ইসলাম, ফারহাদ জেসমিন লিটিও অংশ নেন মতবিনিময়ে।
অ্যাথলেটিকসের মতো কাবাডির উন্নয়নেও নানা পরামর্শ এসেছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনে শীর্ষ তিনটি পদেই ছিলেন পুলিশের তিন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে। সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগরের সাবেক পুলিশপ্রধান হাবিবুর রহমানকে। দুই যুগ্ম সম্পাদকের একজন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক এখনো আছেন। তিনি আজকের মতবিনিয়ম অনুষ্ঠানেও ছিলেন।
আরেক যুগ্ম সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বর্তমান কমিটির সদস্য আমির হোসেন পাটোয়ারি, এস এম এ মান্নান, জাতীয় খেলোয়াড় ও কোচদের মধ্যে ছিলেন আবদুল জলিল, আসগর আলী, মাসুদ করিম, আরদুজ্জামান, মিজানুর রহমানসহ ২০ থেকে ২২ জন।
গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কাবাডির উন্নয়ন নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি। স্বচ্ছ সংগঠক ও সাবেক খেলোয়াড়–কোচদের নিয়ে কমিটি করার দাবি তুলেছেন কাবাডি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফেডারেশন সদস্য আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, অ্যাডহক কমিটি হলে সেটি যেন শক্তিশালী হয়। সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্যে সিনিয়র ভিত্তিতে দুজনকে এবং রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে একজনকে কাউন্সিলর করার প্রস্তাব এসেছে।’
এদিকে সার্চ কমিটির সদস্য মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবিতে আগামীকাল সকাল ১১টায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশ হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক রাসেল খান বাপ্পি।