জাতীয় আর্চারিতে রিকার্ভ ইভেন্টে কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। সেই আপনিই অলিম্পিকে সরাসরি খেলবেন, ভেবেছিলেন এটা?
সাগর ইসলাম: দেশে সেরা না হলেও ইরাকে এশিয়া কাপে মিশ্র ও দলগত বিভাগে পাওয়া রুপা এবং ইসলামিক গেমসে পাওয়া পদক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে আমাকে। টানা পরিশ্রম করে গেছি। দেশে থাকলে ঈদে বাড়ি পর্যন্ত যাইনি। আশা ছিল, ইনশা আল্লাহ কিছু একটা হবে। কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখও বলেছিলেন, সেরাটা দিতে পারলে ভালো কিছু হতে পারে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন আইওসির কাছে বিভিন্ন খেলার ছয়জনের জন্য ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদন করেছে। তার আগে বাংলাদেশ থেকে শুধু আপনিই প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলা নিশ্চিত করেছেন। এ অনুভূতি কেমন?
সাগর: খুবই ভালো। তুরস্কের টুর্নামেন্টের রিকার্ভ এককে অলিম্পিকে সরাসরি খেলার কোটা ছিল পাঁচটি। বাংলাদেশ থেকে ইভেন্টটিতে আমি, হাকিম ও রামকৃষ্ণ ছিলাম। আমি সবার ছোট। কিন্তু দিন শেষে আমি লক্ষ্য পূরণ করে ফাইনালেও পৌঁছাই।
প্রি-কোয়ার্টারে হাকিম এবং কোয়ার্টারে রামকৃষ্ণ হেরে যাওয়ার পর একটু কি বাড়তি চাপে ছিলেন?
সাগর: চাপ তো থাকেই। তবে র্যাঙ্কিংয়ে আমি ৬ নম্বর হওয়ায় ১/৪৮ ও ১/২৪ স্তরে খেলতে হয়নি। ফলে প্রস্তুতির বাড়তি সুযোগ পেয়ে যাই। প্রতিপক্ষ হিসেবে পাই তুলনামূলক পেছনের র্যাঙ্কিংয়ের খেলোয়াড়কে। ভাগ্যেরও কিছু সহায়তা ছিল।
২০২০ টোকিও অলিম্পিকে রোমান সানা ১/৩২ পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন?
সাগর: যতটুকু সম্ভব ভালো করার চেষ্টা করব। তবে অলিম্পিক গেমস অনেক কঠিন পরীক্ষার মঞ্চ।
আর্চারিতে কীভাবে আসা?
সাগর: ছোটবেলায় দুষ্টু ছিলাম, খেলাধুলা করতাম। আম্মু তখন চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালান। এভাবে ঘোরাফেরা না করে তাঁর কথায় রাজশাহীর এসবি আর্চারি ক্লাবে আর্চারি অনুশীলন শুরু করি। ২০১৯ সালে ভর্তি হই বিকেএসপিতে। বিকেএসপিতে ভালো করে জাতীয় দলে আসি। এখানে কোচ মার্টিনের নির্দেশনায় অনেক কিছু শিখেছি। তবে আমি যেটুকু অর্জন করেছি, তাতে মায়ের অবদানই বেশি। মা চা বিক্রি করে আমাকে এত দূর এনেছেন।
আপনার বাবা সম্পর্কে কিছু বলুন...
সাগর: বাবা শাহ আলম টেম্পোর ভালো মেকানিক ছিলেন। টেম্পো চালাতেনও শুনেছি। ২০০৯ সালে আমার ৩ বছর বয়সে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। চার ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। মা তখন চার সন্তান নিয়ে অথই সাগরে। রাজশাহীর ছোট বনগ্রাম হাউজিং কোয়ার্টারের পাশে যেখানে থাকি, তার পাশে চা বিক্রি শুরু করেন। মায়ের মুখে শুনেছি, প্রতিদিন ১৯-২০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও নাকি চা বানাতেন।
তাহলে তো মা থাকলেও তাঁকে তেমন একটা কাছে পাননি?
সাগর: ভোর ৫টায় চা বিক্রি করতে চলে যেতেন, ফিরতেন রাত ১১টায়। একাই সব করতেন। আমরা ভাইবোনেরা তাঁকে খুব একটা কাছে পেতাম না। রাজশাহী বঙ্গবন্ধু কলেজ মোড়ে এখনো তিনি চায়ের দোকান চালান।
ছেলের অভাবনীয় সাফল্যে মা আজ নিশ্চয়ই খুব খুশি...
সাগর: অনেক খুশি। তাঁর পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। তিনিও এখন গর্বিত আমাকে নিয়ে।