অলিম্পিকের স্বপ্ন ভাঙলেও জীবন বদলে দিয়েছে কাবাডি
স্কুল ফাঁকি দিয়ে সারা দিন থাকতেন খেলার মাঠে। যে কারণে বাবার হাতে অনেকবার মার খেতে হয়েছে মিজানুর রহমানকে। মজা করে বলছিলেন, ‘বাবার তাড়া খেয়েই স্প্রিন্টার হয়েছি।’
একসময় নিয়মিত অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক মাতানো মিজানুর এবার আলো ছড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডিতে। এরই মধ্যে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পাঁচ ম্যাচের দুটিতে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ১৪ মার্চ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেরা মিজানুর সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন গত পরশু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও।
অথচ মিজানুর কাবাডি খেলোয়াড় হয়েছেন নিছকই ঘটনাচক্রে। তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল অ্যাথলেটিকস। ২০১৬ সালে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে লং জাম্প ও ২০০ মিটারে সোনাও জিতেছেন। ১০০ মিটারে রুপা। জুনিয়র মিটের পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের ক্যাম্পে ডাক পান মিজানুর।
একসময় স্বপ্ন দেখতাম অলিম্পিকে খেলব। যুব অলিম্পিকে যাওয়ার কথা ছিল আমার। সেটা বাতিল হওয়ায় ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলাম। এরপর খেলা ছেড়ে বাড়ি চলে যাই। তখন এলাকাতে একবার কাবাডি টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাই। প্রথম টুর্নামেন্টে আমার খেলা দেখে হাবিবুর রহমান স্যার পুলিশে চাকরি দেন।
৪০০ মিটারে সোনাজয়ী জহির রায়হান ও মেয়েদের ২০০ মিটারে সোনাজয়ী দিশা সুলতানার সঙ্গে ছয় মাসের অনুশীলন ক্যাম্প করেন বিকেএসপিতে। এই তিন অ্যাথলেটকে বুয়েনস এইরেসে অনুষ্ঠিত ২০১৮ যুব অলিম্পিক গেমসে পাঠাতে চেয়েছিল ফেডারেশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেডারেশন কাউকে পাঠায়নি। যুব অলিম্পিকে অংশ নিতে না পারার হতাশায় অ্যাথলেটিকসই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মিজানুর।
দিনাজপুরের যুবক মিজানুরের পরের গল্পটা কাবাডির। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে এসেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ আবদুল জলিলের হাত ধরে। এনএসসির ক্যাম্পে ভালো করে মিজানুর জায়গা করে নেন দিনাজপুর জেলা কাবাডি দলে। ২০১৭ সালে ফেডারেশন দেশব্যাপী আয়োজন করে স্বাধীনতা কাপ কাবাডি। এই টুর্নামেন্টে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন মিজানুর। এরপর ঢাকায় চূড়ান্ত পর্বেও সেরা খেলোয়াড়। মিজানুরের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি দেন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান।
অ্যাথলেটিকসে ভবিষ্যৎ না দেখে খেলা ছেড়েছিলেন। তবে কাবাডি খেলে জীবনটাই বদলে গেছে মিজানুরের, ‘একসময় স্বপ্ন দেখতাম অলিম্পিকে খেলব। যুব অলিম্পিকে যাওয়ার কথা ছিল আমার। সেটা বাতিল হওয়ায় ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলাম। এরপর খেলা ছেড়ে বাড়ি চলে যাই। তখন এলাকাতে একবার কাবাডি টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাই। প্রথম টুর্নামেন্টে আমার খেলা দেখে হাবিবুর রহমান স্যার (সাধারণ সম্পাদক, কাবাডি ফেডারেশন) পুলিশে চাকরি দেন। আমার বাবা দরিদ্র কৃষক। পুলিশের চাকরিটা পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে আমার। স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখন মনে হয় অ্যাথলেটিকস ছেড়ে কাবাডিতে এসে ভুল করিনি।’
২০১৯ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে মিজানুরের নেতৃত্বে ব্রোঞ্জ জেতে বাংলাদেশ। যুব দলের পর এবার জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে। এশিয়ান গেমসে তিনবার কাবাডিতে রুপা জিতেছে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই ২০১০ সাল থেকে এশিয়াডে পদকশূন্য। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে জিতেছে ব্রোঞ্জ পদক। কিন্তু মিজানুরের চোখে বড় স্বপ্ন। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান গেমসের কাবাডিতে বাংলাদেশকে পদক জেতানোর স্বপ্ন, ‘এশিয়ান গেমসে আমরা পদক পাই না দীর্ঘদিন। এবারের গেমসে ভালো কিছুই হবে, আশা করি পদক জিততে পারব।’