ট্রফিটা হাতে নিয়ে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে যখন ঢুকছিলেন, প্রিন্স লাল সামন্তর চেহারায় রাজ্যের ক্লান্তি। ওমানকে হারিয়ে গতকাল জুনিয়র এএইচএফ (এশিয়ান হকি ফেডারেশন) কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা নিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের খেলোয়াড়েরা যখন হকি স্টেডিয়ামে পৌঁছায়, তখন সবার মধ্যেই ছিল রুমে ফেরার তাড়া।
প্রায় ১৮ ঘণ্টার লম্বা বিমান ভ্রমণ শেষে খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা—সবাই বিশ্রামের জন্য ছুটছিলেন। মাসকট থেকে ঢাকায় সাধারণত পাঁচ ঘণ্টার বিমানভ্রমণ হওয়ার কথা থাকলেও দল বেশ দেরিতেই ঢাকায় পৌঁছেছে।
গতকাল রাতে স্টেডিয়াম থেকে ফাইনাল শেষে ওমানের স্থানীয় সময় রাত ১০টায় তড়িঘড়ি করে টিম হোটেলে ফেরে বাংলাদেশ দল। এরপর রাত দুইটায় বিমানে ওঠেন খেলোয়াড়েরা। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সকালে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে পারেনি তাঁদের বিমান।
এরপর সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামেন খেলোয়াড়েরা। সেখান থেকে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর সেই বিমান তাঁদের নিয়ে যায় সিলেট বিমানবন্দরে। সেখান থেকে যখন ঢাকায় ফেরেন খেলোয়াড়েরা, বিকেল গড়িয়ে ততক্ষণে সন্ধ্যা হওয়ার পথে।
মাত্র ২০ দিনের অনুশীলনে ওমানে গিয়ে জুনিয়র এএইচএফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য। তারপরও চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুশি কোচ মামুনুর রশীদ, ‘এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাজটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল। অল্প প্রস্তুতিতে গিয়েছিলাম বলে পরিকল্পনা অন্যভাবে সাজাতে হয়েছে। ফিটনেস নিয়ে ভালোভাবে কাজ করেছি, যে কারণে ছেলেরা ৬০ মিনিট একই ছন্দে খেলেছে।’
টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে দিয়েছে ২৮ গোল। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গোল দিয়েছে ওমান। ৫ ম্যাচে ওমানের গোলসংখ্যা ৩০। জুনিয়র দলগুলোর সঙ্গে যদিও জাতীয় দলের পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। হকির বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শক্তিমত্তার বিচারে সেই হিসাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে ওমানের চেয়ে। তবে এই র্যাঙ্কিং ধরলে অন্য দলগুলোর চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কা র্যাঙ্কিংয়ে ৩৪তম, হংকং ৬৫তম ও উজবেকিস্তান ৬৬তম স্থানে। শুধু ওমানই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ওমানের বর্তমান র্যাঙ্কিং ২৬তম। তারপরও ওমানের মাটিতে ওমানকে হারাতে পেরে খুশি মামুনুর, ‘ওমান যথেষ্ট ভালো দল। কিন্তু আমাদের ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে টুর্নামেন্টে।’
জুনিয়র এইচএফ কাপের সেরা পাঁচ দল খেলবে জুনিয়র এশিয়া কাপে। আগামী জুনে ওমানে অনুষ্ঠিত হবে জুনিয়র এশিয়া কাপ। এএইচএফ কাপের সেমিফাইনালে ওঠার পরই বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে এশিয়া কাপ। বাংলাদেশের সামনে জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলারও হাতছানি। এশিয়া কাপের সেরা চার দল খেলবে আগামী বছর জুনিয়র বিশ্বকাপে। কোচ মামুনুর রশীদ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে খেলানোর স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমাদের যেটা হয়, সাধারণত বাছাইপর্ব নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলো আরও পেশাদারত্বের সঙ্গে করা উচিত। এই দলটাকে ভবিষ্যতের জাতীয় দল বলা হচ্ছে। ওদের সবার মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে ভালো করার। এশিয়া কাপের সেরা চারে থাকলে আমরাও বিশ্বকাপে খেলতে পারব।’
অধিনায়ক প্রিন্স লাল সামন্তও এশিয়া কাপ ছাপিয়ে বিশ্বকাপে চোখ রেখেছেন, ‘আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে ওমানে গিয়েছিলাম, সেটা সফল হয়েছে। এবার এশিয়া কাপের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বিশ্বকাপে খেলতে চাই।’
এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পের পাশাপাশি বিদেশে গিয়ে বেশি বেশি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চান মামুনুর, ‘আমি চাই ভারতে অন্তত এক মাসের সফর করুক এই দল। সেখানে ২০টির বেশি ম্যাচ খেলব আমরা। তাহলে এই টুর্নামেন্টের ভুলগুলো শোধরাতে পারব।’
ওমানের জুনিয়র দলের সঙ্গে সাতজনের কোচিং স্টাফ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফ মাত্র দুজনের। এটা নিয়েও আক্ষেপ মামনুরের, ‘আমাদের কোনো ফিজিও, ভিডিও অ্যানালিস্ট নেই। আমরা প্র্যাকটিস করাই, আমরা খেলা শেষে ভিডিও করি। কাজটা আমাদের জন্য কঠিন।’
মাত্র ২০ দিনের অনুশীলন, কোচিং স্টাফের অপ্রতুলতা, টুর্নামেন্ট শুরুর এক দিন আগে খেলতে যাওয়া—অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশের যুব দলটি ওমানে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এবার এশিয়া কাপেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান রকিবুল হাসান, প্রিন্স লাল সামন্তরা।