সাক্ষাৎকারে মনন রেজা

‘ক্রিকেট ব্যাট কিনতে গিয়ে দাবার বোর্ড কিনি’

১৯৮১ সালে ১৫ বছর ৫ মাস বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) হয়েছিলেন নিয়াজ মোরশেদ। ১৪ বছর ৩ মাস বয়সে আইএম হয়ে বাংলাদেশের কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসেবে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার রেকর্ড এখন মনন রেজার। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে শুক্রবার গ্রান্ডমাস্টার্স দাবায় নিজের তৃতীয় আইএম নর্ম পূরণ করে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নও এই কিশোর। এই টুর্নামেন্টে গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম করার সুযোগ থাকলেও সেটি অবশ্য হয়নি। বুদাপেস্ট থেকে ফোনে দেওয়া নারায়ণগঞ্জের ফিলোসোফিয়া স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মনন রেজার এই সাক্ষাৎকারে তার পথচলা আর স্বপ্নের কথা—

প্রথম আলো:

বুদাপেস্টে দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবায় ফিদে মাস্টার থেকে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার গৌরব। ৯ ম্যাচে ৪ জয়, ৫ ড্র। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন—সব মিলিয়ে কতটা খুশি?

মনন রেজা: অনেক খুশি। তবে গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মটা পেলে বেশি খুশি হতাম। আমি আসলে আইএম হওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে অত ভাবিনি। কারণ, জানতাম আইএম হয়ে যাব। এ বছরই তিনটি আইএম নর্ম করেছি। আইএম হতে ২৪০০ রেটিং লাগে, আমার এখন ২৪১৯। বুদাপেস্টে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডের পর তিনটি প্রাইভেট টুর্নামেন্ট খেলছি মূলত জিএম নর্মের জন্যই। জিএম নর্ম না হওয়ায় খারাপও লাগছে।

আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে দরকার ২৪০০ রেটিং। মনন রেজার রেটিং এখন ২৪১৯
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

শেষ রাউন্ডে হাঙ্গেরির ফিদে মাস্টারের সঙ্গে জিতলেই জিএম নর্ম হতো। ওই খেলোয়াড়ের রেটিংও কম ছিল। হলো না কেন?

মনন: জেতার মতো অবস্থাতেই ছিলাম। কিন্তু একটা ভুল চাল দিয়ে বসি। ফলে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। এর আগেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এ বছর থাইল্যান্ডে। আইএম নর্ম হওয়ার পর শেষ রাউন্ড জিতলে জিএম নর্ম। কিন্তু মিস করেছি।

প্রথম আলো:

জিএম নর্ম না হলেও আইএম হওয়াও কম বড় প্রাপ্তি নয়। এখন লক্ষ্য নিশ্চয়ই গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া? এ নিয়ে কী পরিকল্পনা?

মনন: দুই বছরের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চাই। কারণ, দুই বছরের মধ্যে না হলে পড়াশোনার চাপ বাড়বে। এখন শুধু স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা দিই। বাড়িতে থাকলে সব পরীক্ষায় অংশ নিই। কলেজে উঠলে এই সুযোগটা না–ও পেতে পারি। আর পরিকল্পনা বলতে বিদেশে প্রচুর টুর্নামেন্ট খেলতে হবে, আপাতত এটাই ভাবছি। 

প্রথম আলো:

গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘দুই–তিন বছরের মধ্যে তুমি গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে যাবে।’ নিয়াজ ২১ বছরে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন। বাংলাদেশের দাবাড়ুদের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে কম বয়সে জিএম হওয়ার রেকর্ডও ভেঙে যাবে বলেও নিয়াজ নিশ্চিত। 

মনন: নিয়াজ স্যারকে ধন্যবাদ। তিনি সব সময় অনুপ্রেরণা দেন। চেষ্টা করব, তাঁর আশা পূরণ করতে।

আর্থিক সহায়তা পেলে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারবেন বলে বিশ্বাস মনন রেজার
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার লক্ষ্য পূরণে কোনো চাওয়া আছে?

মনন: বড় চাওয়া, স্পনসর। দুই বছরে বিদেশে ১৪–১৫টি টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। অনেক টাকার প্রয়োজন। স্পনসর না পেলে দুই বছরের মধ্যে জিএম হওয়া কঠিন। আর আমার একজন কোচও দরকার। ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার নীলোৎপল স্যারের কাছে অনলাইনে পাঁচটি ক্লাস করেছি। জিএম হতে গেলে কোচিংটা খুব জরুরি। স্পনসর পেলে সামনে ভারতে বিশ্বনাথন আনন্দ স্যারের একাডেমিতে গিয়ে কোচিং করতে চাই।

প্রথম আলো:

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে নিয়মিত দাবা খেলা কতটা কঠিন ছিল?

মনন: অনেক কঠিন। নারায়ণগঞ্জ থেকে আগে ঢাকায় আসতে অন্তত দুই ঘণ্টা লেগে যেত। এখন অতটা লাগে না। এই যাত্রায় আমি মায়ের সহায়তা পেয়েছি। তিনি পাশে ছিলেন সব সময়। আমার এত দূর আসার পেছনে তাঁর অনেক অবদান।

মায়ের সঙ্গে মনন রেজা
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

এখনকার কিশোর-তরুণেরা ক্রিকেট, ফুটবলেই বেশি আগ্রহী। সেসবে না গিয়ে দাবায় আসার গল্পটা কী?

মনন: ৬–৭ বছর বয়সে বাবা আমাকে ক্রিকেট ব্যাট কিনে দিতে নিয়ে যান নারায়ণগঞ্জেরই এক মার্কেটে। দোকানের কোনায় দাবার বোর্ড দেখি প্রথম। তার আগে বাবাকে কম্পিউটারে দাবা খেলতে দেখতাম। তো দোকানে দাবার বোর্ড দেখে খানিকটা অবাক হয়ে ভাবলাম, আরে, কম্পিউটারের খেলাটা এখানে এল কীভাবে? সেদিন ক্রিকেট ব্যাট কিনতে গিয়ে দাবার বোর্ড কিনি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

মা তো ফুটবল খেলার নেশার কথাও বললেন...

মনন: (হাসি) হ্যাঁ, ফুটবল ভীষণ পছন্দ করি। প্রতিদিন অন্তত এক বেলা আমাকে ফুটবল খেলতেই হবে। ফুটবল খেলে কয়েকবার ব্যথাও পেয়েছি। কবজিতে একবার ফাটলও ধরে। মেসি আর বার্সেলোনার ভক্ত আমি। 

মনন রেজা প্রিয় দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রথম আলো:

প্রিয় দাবাড়ু কে?

মনন: অবশ্যই ম্যাগনাস কার্লসেন। অনলাইনে তাঁর খেলা দেখে শেখার চেষ্টা করি।