বক্সিং রিংয়ে ‘ব্যাডেস্ট’ টাইসনের সামনে প্রবলেম চাইল্ড
নেটফ্লিক্সে প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। টিজারও ছাড়া হয়েছে, দেখানো হচ্ছে প্রস্তুতির ভিডিও। আর বেশি দেরিও নেই। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় বা বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ৭টায় এনএফএলের দল ডালাস কাউবয়েজ স্টেডিয়ামের রিংয়ে মুখোমুখি হবেন তাঁরা। ৮০ হাজার আসনের সব বিক্রি হয়ে গেছে।
নেটফ্লিক্সও স্ট্রিমিং করে বিশ্বব্যাপী তাঁদের ২৮ কোটি সাবস্ক্রাইবারকে এই লড়াই দেখাবে। খেলাধুলার ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম ‘কমব্যাট’ স্পোর্টস, যা স্ট্রিমিং করে নেটফ্লিক্সে দেখানো হবে। আপনি প্রস্তুত তো?
ওহ, বলাই হয়নি লড়াইটি কাদের মধ্যে। অবশ্য ইন্টারনেটের এই যুগে এতক্ষণে জেনে যাওয়ার কথা। বক্সিং রিংয়ে মুখোমুখি হবেন ‘আয়রন মাইক ও দ্য প্রবলেম চাইল্ড।’ ভক্তরা তাদের এই নামে ডাকেন। অন্যভাবে বললে ইউটিউবার জ্যাক পলের মুখোমুখি হবেন সর্বকালের অন্যতম সেরা বক্সার মাইক টাইসন। ২০০৫ সালে অবসর নেওয়ার পর এই প্রথম পেশাদার বক্সিং ম্যাচে নামবেন ‘দ্য ব্যাডেস্ট ম্যান অন দ্য প্লানেট’ নামে খ্যাতি পাওয়া টাইসন।
৫৮ বছর বয়সী এই বক্সারকে এখনো চিনে না থাকলে একটু ধরিয়ে দেওয়া যায়। ইভান্ডার হলিফিল্ডের নাম শুনে যদি ‘টাইসন’কে মনে না পড়ে তাহলে জানাতে হয়, ১৯৯৭ সালে রিংয়ে হলিফিল্ডের কান কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিলেন একটি অংশ। সেই লড়াইয়ে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পাশাপাশি পরে জরিমানা এবং টাইসনের বক্সিং লাইসেন্সও বাতিল হয়। তবে টাইসনের আরেক রূপও আছে। সেটি ভীষণ রকম লড়াকু—মাত্র ২০ বছর ৪ মাস ২২ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে জিতেছেন হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব।
প্রথম হেভিওয়েট বক্সার হিসেবে একই সঙ্গে জিতেছেন ডব্লুবিএ, ডব্লুবিসি ও আইবিএ খেতাব। হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারানোর পর ফ্লয়েড প্যাটারসন, মোহাম্মদ আলী, টিম উইদারস্পুন, ইভান্ডার হলিফিল্ড ও জর্জ ফোরম্যানের পর ষষ্ঠ বক্সার হিসেবে তা পুনরুদ্ধারও করেছেন। রিংয়ে ভয় ধরিয়ে দেওয়া আচরণের জন্যও আলাদা খ্যাতি ও কুখ্যাতি দুটোই আছে টাইসনের। ‘দ্য রিং’ সাময়িকীর বিবেচনায় সর্বকালের সেরা ১০০ ‘পাঞ্চার’দের মধ্যে টাইসন ১৬তম।
অর্থাৎ বক্সিংয়ে কালজয়ী এক কিংবদন্তিরই মুখোমুখি হবেন ২৭ বছর বয়সী জ্যাক পল, যিনি টাইসনের চেয়ে বয়সে ৩১ বছরের ছোট। ইউটিউবার হিসেবে যাত্রা শুরু করা পল অভিনয়ের জগতেও জড়ান। বক্সিংয়ে নামেন ২০১৮ সালে, দুই বছর পর অভিষেক পেশাদার বক্সিংয়ে। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো পেশাদার বক্সার টিম ফিউরির মুখোমুখি হয়ে হেরে যান।
এবার বয়সের ভারে ন্যুব্জ টাইসনের বিপক্ষে কি পারবেন? উত্তর শুনুন পলের মুখেই, ‘আমি সেই পুরোনো বর্বর মাইককে চাই। সেই খুনে মানসিকতার মাইক, যার বিপক্ষে শুক্রবার সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটি খেলতে চাই। তাকে নকআউটে হারানোর পর কারও কাছ থেকে অজুহাত শুনতে চাই না।’
লড়াইটি গত জুনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মায়ামি থেকে লস অ্যাঞ্জেলস যাওয়ার পথে বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়েন টাইসন। রক্তবমি করেন। আলসার ধরা পড়ে তাঁর শরীরে। এ কারণে গত মে মাসে নির্ধারিত সেই লড়াইয়ের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই টাইসন এখন কেমন আছেন? ম্যাচের আগে গতকাল চূড়ান্ত সংবাদ সম্মেলনেই জানিয়ে দিয়েছেন, আগেই বাগ্যুদ্ধে জড়াতে চান না।
বোঝা গেল আশির দশকজুড়ে টাইসনের মনের ভেতরকার সেই লেলিহান আগুন আর নেই। তবে ছাইচাপা কিছু একটা যে আছে ভেতরে, সেটাও বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘আমি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। লড়াই করতে মুখিয়ে আছি।’ ছাইচাপা সেই আগুনের কিছুটা দেখিয়েছেনও টাইসন, ‘আমি হারব না।’ এটুকু বলে সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘শুনেছেন আমি কি বলেছি?’
টাইসনের বয়স ও শারীরিক অবস্থায় তাকিয়ে এই লড়াইয়ে বিপক্ষে সোচ্চারও হয়েছেন কেউ কেউ। ব্রিটেনের খ্যাতিমান বক্সিং সংগঠক এডি হিয়ার্ন তাঁদের একজন।
টাইসনের বয়স ও শারীরিক অবস্থায় তাকিয়ে এই লড়াইয়ে বিপক্ষে সোচ্চারও হয়েছেন কেউ কেউ। ব্রিটেনের খ্যাতিমান বক্সিং সংগঠক এডি হিয়ার্ন তাঁদের একজন। ২০০৫ সালে সর্বশেষ পেশাদার লড়াইয়ে কেভিন ম্যাকব্রাইডের কাছে টাইসনের হেরে যাওয়ার উদাহরণ টেনে হিয়ার্ন বলেছেন, ‘২০ বছর আগে মাইক টাইসন বক্সিং থেকে অবসর নিয়েছেন এবং তাঁকে সেই লড়াইয়ে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলা হয়েছিল, ঠিক তো? মানে পুরোপুরি ধসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন কেউ যদি ভেবে থাকেন, টাইসনের এই বয়সে রিংয়ে নামা উচিত, তাহলে হয় আপনার ওই মানুষটির প্রতি কোনো মায়া নেই কিংবা আপনি বোকার হদ্দ। এই লড়াই হওয়া উচিত নয়।’
১৯ বছর আগে অবসর নেওয়ার আগে ৫০টি বাউট জয়ের বিপরীতে ৬টি হেরেছিলেন টাইসন। এর মধ্যে ৪৪টিই ছিল নকআউটে জয়। পল পাঁচ বছরের কম সময়ের মধ্যে বক্সিং শুরু করে ১০০ জয়ের বিপরীতে ১টি হেরেছেন। এর মধ্যে ৭টি নকআউট। তবে বেশির ভাগ লড়াইয়েই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মিক্সড মার্শাল আর্ট এবং অপেশাদার বক্সাররা। এই লড়াইয়ে পলের পক্ষে বাজির দর -২০০। যার মানে তিনিই ফেবারিট ও তাঁর পক্ষে ২০০ ডলার বাজি ধরলে এবং তিনি লড়াইয়ে জিতলে পাওয়া যাবে ১০০ ডলার।
পেশাদার বক্সিংয়ে তিন মিনিটের প্রতি রাউন্ডের মতো লড়বেন না দুজন। মোট ৮ রাউন্ডের এই লড়াইয়ে প্রতিটি রাউন্ডের মেয়াদ ২ মিনিট। পাঞ্চের শক্তি কমাতে দুই বক্সারকে প্রথাগত ১০ আউন্স গ্লাভসের পরিবর্তে ১৪ আউন্স ওজনের গ্লাভস পরতে হবে। ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, মাথায় কোনো ধরনের গার্ড তাঁরা পরবেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত আগস্টে পল জানিয়েছিলেন তিনি এই লড়াই থেকে ৪ কোটি ডলার আয় করবেন। টাইসন আয় করবেন প্রায় ২ কোটি ডলার।