বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি–যুগের প্রথম জয় চট্টগ্রামের
মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে হকি নিয়ে এমন উন্মাদনা খুব কমই চোখে পড়েছে গত কয়েক বছরে। স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে রাস্তা বন্ধ করে ইলেকট্রনিক পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখা ফুটপাতের দোকানগুলো এদিন উধাও। দীর্ঘদিন পর খুলে দেওয়া হয়েছে স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
অনেক দিন পর যেন রং লেগেছে স্টেডিয়ামে। নতুন রঙে সেজেছে গ্যালারি। ছয় দলের ব্র্যান্ডিং করা ব্যানার আর ফেস্টুনে ছাওয়া স্টেডিয়ামের চারপাশ। জোনাকি বাতি জ্বালানো হকি স্টেডিয়ামকে দেখে যেন বিয়েবাড়ি মনে হচ্ছে।
এত সব আয়োজন বাংলাদেশের হকির ফ্র্যাঞ্চাইজি যুগে প্রবেশকে স্মরণীয় করে রাখতে। ফ্র্যাঞ্চাইজি এ লিগের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। খেলা শুরুর আগে ট্রফিটা রেখে দেওয়া হয় টার্ফের পাশেই টেবিলের ওপর।
আজ সন্ধ্যায় একমি চট্টগ্রাম ও সাইফ পাওয়ারটেক খুলনার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে দেশের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি হকি লিগ। উদ্বোধনী দিনে ভিআইপি গ্যালারিতে ছিল উপচে পড়া দর্শক। অবশ্য সাধারণ গ্যালারিতেও ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল প্রায় হাজারখানেক দর্শক, ঘরোয়া হকির বিভিন্ন টুর্নামেন্টের সময় যে দৃশ্য বিরলই বলা যায়।
সাধারণত ইউরোপের হকি লিগে যেমন আয়োজন দেখা যায়, সে সব ছিল ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ঘিরে। খেলোয়াড়দের মাঠে নামার জন্য তৈরি করা হয়েছে টিউব। মাঠের খেলার সঙ্গে এমন সব বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে হকির উন্মাদনা ছড়ানোর কমতি ছিল না বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের। নীল টার্ফের পাশে দেখা গেল হকিস্টিক হাতে দাঁড়িয়ে আছে মাসকট। স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের সঙ্গে নেচেগেয়ে সময়টা ভালোই উপভোগ করেছে বিচিত্র পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকা মাসকট।
উদ্বোধনী ম্যাচ শুরুর আগে পুরো স্টেডিয়ামে হয়ে পড়ে অন্ধকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হকির নীল টার্ফের ওপর মিনিট পাঁচেকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় ছিল বিভিন্ন শিল্পীদের অ্যাভাটার সাজে নাচ আর কসরত। গ্যালারির দর্শকেরা অন্ধকারের মধ্যে মুঠোফোনে রেকর্ড করেন রেডিয়েশন আলোর পোশাক পরা নৃত্যশিল্পীদের সেই চমৎকার নাচ।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সভাপতি এয়ার চিফ মার্শাল আবদুল হান্নান। উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান।
উদ্বোধনীর পর জয় দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু করেছে একমি চট্টগ্রাম। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম ৩-২ গোলে হারিয়েছে সাইফ পাওয়ার গ্রুপ খুলনাকে। চট্টগ্রামের পক্ষে জোড়া গোল করেছেন ভারতীয় খেলোয়াড় দেভিন্দার বাল্মিকী। ফ্লোরিয়ান এলভিস স্পার্লিং করেছেন অন্য গোলটি। খুলনার হয়ে একটি করে গোল করেছেন তানজিম আহমেদ ও খোরশেদুর রহমান।
এর আগে প্রিমিয়ার হকি লিগেও বিভিন্ন বিদেশি খেলোয়াড় খেলেছেন ঢাকায়। কিন্তু এবারের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে ছয় দলে খেলছেন বিশ্বকাপে খেলা সাত খেলোয়াড়।
প্রথম ম্যাচেই যেমন দেখা গেল, খুলনার জার্সিতে নেমেছেন আর্জেন্টিনার গিদো বারেইরোস। এই ফরোয়ার্ড ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলেছেন। এ ছাড়া ২০১৫ বিশ্ব হকি লিগে খেলেছেন বারেইরোস। জার্মান লিগে খেলারও অভিজ্ঞতা রয়েছে এই আর্জেন্টাইনের। খুলনার হয়ে বারেইরোস ছাড়াও খেলেছেন জার্মানির মরিৎস ফ্রে ও মালয়েশিয়ার ফেরদৌস রোশদি।