‘নির্ভেজাল রকস্টার' লাইলসের বোল্টের পথে যাত্রা
উসাইন বোল্টের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণের তাগিদ আছে। আর আছে টোকিওর ভূত ছাড়ানোর ব্যাপার। প্যারিসের ট্র্যাকে ঝড় তুলতে পারবেন নোয়াহ লাইলস? যুক্তরাষ্ট্রের এ স্প্রিন্টার সে পথে এগিয়েছেন অনেকটাই। গত বছর বুদাপেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছেন সোনার ট্রেবল (১০০, ২০০ মিটার ও ৪x১০০ রিলে)।
সম্প্রতি অ্যাডিডাসের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন লাইলস। পুমার সঙ্গে উসাইন বোল্টের চুক্তির পর এটিকেই এখন বলা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সেবাস্তিয়ান কোয়ে তো লাইলসকে ‘নির্ভেজাল রকস্টার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
২৭ বছর বয়সী লাইলসের বুদাপেস্ট-কীর্তিকে তুলে আনা হয়েছে নেটফ্লিক্সের ‘স্প্রিন্ট’ নামের ডকু সিরিজে। আত্মবিশ্বাসী লাইলসকে ঘিরেই ওই ডকু সিরিজ। ট্র্যাককে জনমনে ফিরিয়ে আনতে তাঁকে মনে হচ্ছে দারুণ প্রস্তুত। স্প্রিন্ট ডকু সিরিজে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার থাকতে হবে ঈশ্বরের মানসিকতা। আমি বিশ্বাস করি, কোনো মুহূর্ত আমার চেয়ে বড় নয়। মুহূর্ত তৈরিই হয় আমার জন্য।’
পণ্ডিতেরা বলেন, বড় মাপের অ্যাথলেটদের এমন মানসিকতা মোটেও দুর্লভ কিছু নয়। তবে লাইলসের সাহসী কথাবার্তা নাড়িয়ে দিয়েছে অনেককেই। এনবিএর বাস্কেটবল খেলোয়াড়রা আদতে সত্যিকারের ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ কি না, এমন প্রশ্ন তুলে লিগটির খেলোয়াড় ও সমর্থকদের মাঝেও আগুন জ্বেলেছেন এরই মধ্যে।
তবে যা-ই হোক না কেন, প্যারিসে ঠিকই পাদপ্রদীপ থাকবে লাইলসের ওপর। আপাতত তাঁর লক্ষ্য টোকিওর পারফরম্যান্সের চেয়ে উন্নতি, যেখানে ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে। কয়েক দিন আগে লন্ডন ডায়মন্ড লিগে ১০০ মিটারে ব্যক্তিগত সেরা ৯ দশমিক ৮১ সেকেন্ডের টাইমিংয়ের পর লাইলস বলেছিলেন, ‘আমার বুকে এখনো আগুন ধরায় ওই ব্রোঞ্জ। আমি প্যারিসে এটি নিয়েই ঘুরব। নিজেকে মনে করিয়ে দিতে যে এবার আর এ রং নিয়ে ফিরছি না।’
লন্ডনের পারফরম্যান্সের পর লাইলস বেশ উজ্জীবিত। এ বছরের সেরা টাইমিং (৯.৭৭ সেকেন্ড) গড়া জ্যামাইকার কিশান থমসনকেও তাই ভয় পাচ্ছেন না তিনি। লাইলস বলেছে, ‘যাকেই ছুঁই, তাকেই হারায় আমি। জ্যামাইকানরাই বা কেন আলাদা হবে? আমার প্রার্থনা এটির জন্যই, বেঁচে আছি এটির জন্যই। আর আমি তো নিজেকে এগিয়েই রাখি, তাই না?’
ছোটবেলায় ক্রনিক অ্যাজমায় ভোগা লাইলস এরপর বলেছেন, ‘প্যারিসে যাওয়ার আগে জানি, আমি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে। আমার দিকে যত বেশি চোখ থাকবে, আমি তত ভালো পারফর্ম করব। অন্তত আমার থেরাপিস্ট এমনই বলেন। টিভি ক্যামেরা যখন আমার দিকে তাক করা, যখন লোকে আমাকে দেখতে আসে, আমি তখন হারি না।’
প্যারিসে লাইলস ৪x৪০০ মিটারসহ জিততে চান চারটি পদক। অবশ্য এ ইভেন্টে তাঁর অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক আছে। মার্চে গ্লাসগোতে বিশ্ব ইনডোরসে ৬০ মিটারে রুপা পাওয়ার পর তাঁকে ৪x৪০০ মিটারে নির্বাচন করা হয়। সে দলও রুপা জেতে। তবে এ ইভেন্টে লাইলসকে নেওয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেশনের বিপক্ষে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে।
লাইলস বলেছেন, ‘শুধু এটুকু বলি, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আমাকে ৪x৪০০ মিটারে দৌড়াতে দেখে খুব, খুব, খুব হতাশ হয়েছিল। বিপরীতে আমি শুধু বলব, “আমার চেয়ে জোরে দৌড়াও, আমাকে ছিটকে দাও।”’
বুদাপেস্টে লাইলসের স্প্রিন্টে ডাবল জয়ের আগে এমন কীর্তি ছিল শুধু বোল্টের—২০১৫ সালে বেইজিংয়ে সেটি করেছিলেন জ্যামাইকান কিংবদন্তি। ১১টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও ৮টি অলিম্পিক সোনা জয়ের পর ২০১৭ সালে অবসরে যান বোল্ট।
ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য বোল্টের কথাতেও প্রেরণা পান লাইলস, ‘উসাইন বোল্ট যখন আমাকে বলেন যে তিনি আমাকে দেখেছেন এবং এটিকে সম্মান করেন, সেটি তো দুর্দান্ত। আমি এমন একজন, যে শুধু ট্র্যাকের খ্যাতি ছাড়িয়ে এগোতে চাই। আমি চাই লোকে আমাকে ট্র্যাকে দেখুক। কিন্তু জিকিউ (ম্যাগাজিন) এবং আমার ডকু সিরিজও দেখুক। দেখে বুঝুক, আমি “কুল”। পদক হচ্ছে প্রথম ধাপ। কারণ এরপর লোকে আপনার দিকে মনোযোগ দেবে। এরপর আপনি বিভিন্ন দিকে যেতে পারেন—ফ্যাশন, সংগীত। অন্য মানুষ, শিল্পী এবং বিশ্বের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করতে পারবেন এরপর।’
যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকের জন্য চূড়ান্ত বৈশ্বিক চ্যাম্পিয়নশিপ অলিম্পিকে তাই লাইলসকে তাঁর দারুণ ফর্মটা ধরে রাখতে হবে। মনোযোগ পেতে গেলে তাঁকে জিততে হবে পদক। বোল্টের শক্তির জায়গা ছিল এটিই—আধিপত্য বজার রাখা আর বিশ্বমঞ্চে সোনা জেতা।
প্যারিসের মঞ্চ এখন লাইলসের অপেক্ষায়।