নিষেধাজ্ঞা থেকে রোমান সানার মুক্তি, যাচ্ছেন এশিয়ান গেমসে
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে এসেছে প্রসঙ্গটা। রোমান সানা কি খেলতে পারবেন এ মাসেই চীনের হাংজু শহরে শুরু হতে যাওয়া এশিয়ান গেমসে?
এবারের এশিয়াডে বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন এ কে সরকার জানিয়ে দিয়েছেন রোমান খেলতে পারবেন, ‘রোমানের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। সে এশিয়াডে অংশ নেবে। তার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডসহ সবকিছুই ঠিকঠাক মতো হয়েছে।’ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাও একই কথা বলেছেন।
২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া ১৯তম এশিয়ান গেমস উপলক্ষে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য আর প্রস্তুতি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। বিওএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোমানের নিষেধাজ্ঞা মুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে। তবে আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশন বিষয়টা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনো মন্তব্য না করতে বলেছে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনকে। তাই রোমানের নিষেধাজ্ঞা মুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো দেয়নি আর্চারি ফেডারেশন।
সতীর্থ এক আর্চারের সঙ্গে অসদাচরণের কারণে গত নভেম্বরে রোমানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন। তবে গত ৭ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয় দেশীয় আর্চারির সর্বোচ্চ সংস্থাটি। কিন্তু রোমানের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা জেনে আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশন স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখে এত দিন, যে কারণে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন চাইলেও তাঁকে দলে নিতে পারেনি এই সময়ে।
আর্চারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি বৈশ্বিক সাফল্যের সঙ্গেই যুক্ত রোমানের নাম। ২০১৯ সালের ১৬ জুন নেদারল্যান্ডসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ব্যক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতে টোকিও অলিম্পিকে টিকিট পেয়েছিলেন রোমান। বিশ্ব আর্চারিতে এখনো পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের একমাত্র পদক। ২০২১ সালের ২৩ মে সুইজারল্যান্ডে বিশ্বকাপ আর্চারিতে দিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে জুটি বেঁধে রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে রুপা জিতে ইতিহাস গড়েন রোমান। এশিয়ান গেমসেও তাঁকে নিয়ে ভালো কিছু আশা করছে আর্চারি ফেডারেশন।
হাংজু এশিয়াডে ১৭টি খেলায় মোট ২৪০ জনের দল যাচ্ছে বাংলাদেশের, যার মধ্যে ১৮০ জন অ্যাথলেট, দলীয় খেলায় ১৫১ জন। গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা বহন করবেন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ও জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
এশিয়ান গেমস বরাবরই অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ বাংলাদেশের কাছে। ক্রিকেট না থাকায় ২০১৮ সালে সর্বশেষ জাকার্তা এশিয়াডে বাংলাদেশ কোনো পদকই জিততে পারেনি। এবার অবশ্য ক্রিকেট ফিরেছে। তাই ক্রিকেটে (টি-টোয়েন্টি) পদকের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ক্রিকেটের সৌজন্যে এবার শূন্য হাতে ফেরার আশঙ্কা সেভাবে নেই।
বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার আশা অবশ্য আরও বড়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেট, শুটিং ও আর্চারিতে ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা আছে। ক্রিকেট থেকে আমরা আশাবাদী, হয়তো একটা ভালো ফলাফল পাব। কাবাডি এশিয়াডে আমাদের আগে রেজাল্ট দিয়েছে। এখান থেকেও ফল আমরা আশা করতে পারি। বাংলাদেশ দল আর্চারি আর শুটিং সারা বছরই অনুশীলন করে। তাই কেউ আশা করতেই পারে এই দুটি খেলায় ভালো ফলাফল আসবে।’
এশিয়াডে যেসব খেলায় অংশ নেবে বাংলাদেশ
আর্চারি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, ব্রিজ, দাবা, ক্রিকেট (পুরুষ ও নারী), ফেন্সিং, ফুটবল (পুরুষ ও নারী), গলফ, জিমন্যাস্টিকস, হকি, কাবাডি (পুরুষ ও নারী), কারাতে, শুটিং, সাঁতার, তায়কোয়ান্দো ও ভারোত্তোলন।
কয়েকজন অ্যাথলেটের ওপরও চোখ রাখার কথা বলছেন বিওএ মহাসচিব, ‘এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারী বক্সার জিনাত ফেরদৌস ও লন্ডনপ্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমানের কাছ থেকে সম্মানজনক ফল আসবে বলে আশা করতে পারি। জিনাত নিউইয়র্কে বক্সিংয়ে সপ্তম স্থানে আছে। গলফে সিদ্দিকুর, দাবায় নিয়াজ মোরশেদ যাচ্ছে। আমরা খুবই আশাবাদী অন্যবারের তুলনায় আমরা ফল ভালো করতে পারি।’
তবে কয়টা পদক জিততে পারে বাংলাদেশ, সেটা বলতে পারেননি বিওএ মহাসচিব, ‘কয়টা পদক জিতব, এটা তো কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। চূড়ান্ত ফল কী হবে আমি জানি না, তবে সেরা সম্ভাব্য দল নিয়ে আমরা যাচ্ছি এটা বলতে পারি।’
এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট চালু হয়েছিল ২০১০ সালে। ২০১৪ সালেও ক্রিকেট হয়েছে। দুবারই পদক জিতেছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে আছে সোনাও। এশিয়াডে ক্রিকেটের কল্যাণেই বাংলাদেশ প্রথম সোনা জিতেছে। কিন্তু ক্রিকেটে পদক জেতার মতো দল এবার গড়া হয়নি বলে কেউ কেউ বলছেন। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা শক্তিশালী দল গড়েছে। তাই আজকের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন—ক্রিকেট বোর্ড নাকি তাঁকে বলেছে, তারা ( বিসিবি) ভেবেছিল এবার ক্রিকেটে বয়সের কোনো বাধা আছে। ফলে তারা শক্তিশালী দল গড়তে পারেনি। এখানে কি বিওএর সঙ্গে বিসিবির কোনো যোগাযোগ বিভ্রাট ছিল?
বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন এ কে সরকার বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আমরা সব ধরনের যোগাযোগ রেখেছিলাম। তারা জানে এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে বয়সের কোনো বাধা নেই। যে কাউকে খেলাতে পারে। তারপরও বিসিবি কেন শক্তিশালী দল গড়েনি, তারাই ভালো বলতে পারবে।’