অলিম্পিকে কেন স্যামসাংয়ের ফোন দেওয়া হয়নি উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটদের
এবারের অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে দেওয়া হয়েছে স্যামসাংয়ের বিশেষ স্মার্টফোন। তবে উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটদের এই ফোন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে আইওসিকে দেওয়া পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটদের বিশেষ এই ফোনটি দেওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটদের এই ফোন দেওয়া হলে দেশটির ওপর জাতিসংঘের দেওয়া পারমাণবিক অস্ত্রবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ হতে পারত।
দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এবারের অলিম্পিকের অফিশিয়াল পার্টনার। যে কারণে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের তৈরি অলিম্পিক সংস্করণের বিশেষ স্মার্টফোন (ফোল্ডঅ্যাবল গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ) অংশ নেওয়া ১৭ হাজার অ্যাথলেট, কর্মকর্তা ও অলিম্পিক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি এবং আইওসি প্রচারণামূলক ‘ভিক্টরি-সেলফি’র কার্যক্রমও শুরু করেছে। যেখানে এই ফোন দিয়ে পোডিয়ামে দলগতভাবে ছবি তোলেন পদকজয়ী অ্যাথলেটরা।
গত সপ্তাহে টেবিল টেনিসে রুপাজয়ী অ্যাথলেটরা এ রকম একটি গ্রুপ সেলফিতে অংশ নেন। সেখানে একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটরা অংশ নেন। দুই কোরিয়ার এই বিরল সম্মিলনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়। তবে এই দৃশ্য দেখে সতর্কাবস্থা গ্রহণ করে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির সরকার গত বৃহস্পতিবার আইওসিকে জানায়, উত্তর কোরিয়ার অলিম্পিয়ানদের স্যামসাং ফোন দিলে তা পিয়ংইয়ং ওয়েপন প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে দেওয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার নিয়মকে ভঙ্গ করবে।
এ কারণে অন্য অ্যাথলেটরা স্যামসাংয়ের বিশেষ ফোন পেলেও উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটরা পাননি। শুরুতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত রেডিও ‘ফ্রি এশিয়া’ জানায়, অন্য দেশের মতো উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটরাও এই ফোন পেয়েছেন। তবে আইওসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলেটদের স্যামসাংয়ের কোনো ফোন দেওয়া হয়নি। আইওসি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। এর আগে ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে আয়োজিত শীতকালীন অলিম্পিকেও স্যামসাং স্মার্টফোন নিতে অস্বীকৃতি জানায় উত্তর কোরিয়া।
উল্লেখ্য, এ বছর দুই কোরিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক বেশ তলানিতে নেমে এসেছে। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া নিজেদের দক্ষিণ সীমান্তে ২৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার মোতায়েনের ঘোষণার পর থেকে বেড়েছে উত্তাপ। এদিকে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে জাতিসংঘ একাধিকবার নিষেধ করেছে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সব ধরনের শিল্প যন্ত্রপাতি সরবরাহ, বিক্রি কিংবা হস্তান্তর নিষিদ্ধ করেছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সিউল (দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলো ভালোভাবে কার্যকর করা যায়।
পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান অস্ত্র পরীক্ষার নানা ধরনের জবাবও দিতে শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সব মিলিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।