হকির সাধারণ সম্পাদক অনেকটাই অচেনা, কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
৯টি ক্রীড়া ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি প্রস্তাব করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সপ্তাহ তিনেক আগেই জমা দিয়েছিল সার্চ কমিটি। অবশেষে গত রাতে ওই ৯টি ফেডারেশনে সরকার মনোনীত অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে হকি, অ্যাথলেটিকস, দাবা, কাবাডি, ব্রিজ, স্কোয়াশ, টেনিস, বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার ও বাস্কেটবলে। ঘোষিত অ্যাডহক কমিটিগুলোর সদস্যসংখ্যা ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৯ পর্যন্ত।
কমিটি গঠন নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিরোধ ছিল হকিতে। হকি অঙ্গন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সার্চ কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ আনে একপক্ষ, যাঁর নেতৃত্বে ছিলেন হকি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাতীয় দলের সাবেক গোলকিপার রাসেল খান বাপ্পিসহ আরও কয়েকজন।
তাঁদের অভিযোগ ছিল সাবেক খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল, মামুন উর রশিদদের কেন হকির সমস্যা নিয়ে আলোচনায় ডেকেছিল সার্চ কমিটি। সেই অভিযোগ উড়িয়ে আরেক পক্ষ অবস্থান নেয় সার্চ কমিটির ওই সদস্যের পক্ষে। এসব নিয়ে মানববন্ধন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হয়েছে। দুই পক্ষই স্মারকলিপি দেয় এনএসসির কাছে।
শেষ পর্যন্ত হকির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিতর্কের ঊর্ধ্বে একজনকে। হকি অঙ্গনে যিনি খুব একটা পরিচিত নন। তাঁকে অনেকে চেনেন না। অন্তত ছয়জন হকি খেলোয়াড়-সংগঠকের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। পাঁচজনই নতুন সাধারণ সম্পাদককে চেনেন না। সেই মানুষটি হলেন সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)। একসময় হকি খেলেছেন।
তবে সার্চ কমিটির সদস্য মেজর ইমরোজ আহমেদ (অব.) বলেছেন, আর্মির রিয়াজ বললে সবাই চিনবে। হয়তো রিয়াজুল হাসান নামটা সেভাবে পরিচিত নয়। প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছেন। এখন অবসরজীবনে আছেন।
কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আলমগীর (অব.), শাহিন মাহমুদ ও আসিফ মাহমুদকে। তাঁরাও সেভাবে পরিচিত নন। যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া কাজী আবু জাফর তপন আবাহনী, অ্যাজাক্সে খেলেছেন। অনেক দিনের হকি সংগঠক। কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে খাজা মাঞ্জের নাদিমকে।
কমিটি নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ভালো-মন্দ দুই রকম ভাষ্যই পাওয়া গেছে। জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ মামুন উর রশিদ যেমন কমিটি নিয়ে খুশি। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি ভালো হয়েছে। যোগ্য লোকেরা এসেছেন। তবে সাধারণ সম্পাদককে আমি চিনি না। কখনো দেখাও হয়নি। অবশ্য এটাও বলব, বিখ্যাত কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে এমন নয়। ব্যক্তির নামটা বড় হওয়া উচিত নয়। তিনি যেহেতু বাহিনী থেকে এসেছেন, শৃঙ্খলা থাকবে। হকির বিরোধ মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করাই আসল।’
সরকার যা ভালো মনে করেছে, তা–ই করেছে। দায়িত্ব পাওয়াদের অভিজ্ঞতা কম। তবে দেখি তারা কী করে।মাহাবুবুল এহছান রানা, আবাহনীর হকি কর্মকর্তা
খেলাটা মাঠে থাকুক, এটাই চান মামুন। তাঁর প্রত্যাশা, ঘরোয়া হকি চালু করতে হবে। লিগ, জাতীয়, যুব, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস টুর্নামেন্টসহ সব করা উচিত। হকি এখন হয়ে গেছে জাতীয় দলকেন্দ্রিক। ২০থেকে ৩০ জন খেলোয়াড় ছাড়া যেন আর কেউ নেই। এ কারণে পাইপলাইনে হকি খেলোয়াড় নেই বলে মন্তব্য করেন মামুন।
কমিটিতে বিকেএসপি ও বাহিনীগুলোর প্রতিনিধি রাখাটা পছন্দ হয়েছে মামুনের। তবে তিনি নিজে কমিটিতে জায়গা পাননি বলে কোনো আক্ষেপ নেই। বরং বলেছেন, ‘আমি কোচিংই উপভোগ করি। এটা নিয়েই থাকতে চাই। আমি খুব খুশি।’
জীবনে এই প্রথম হকির পরিচালনা কমিটিতে জায়গায় পেয়েছেন সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ, সংগঠক হোসেন ইমাম শান্টা।
১৯৬৬-৮৪ পর্যন্ত ঢাকায় হকি খেলা শান্টা বলেন, কমিটি পছন্দ হয়েছে তাঁরও, ‘যাদের নাম দেখলাম, ভালোই মনে হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক রিয়াজের সঙ্গে খেলেছি। আশা করি ভালোই হবে। সবাই মিলে হকিকে জাগ্রত করতে হবে। এখন মৃতপ্রায় অবস্থা হকির। কমিটির কাজ হবে নিয়মিত টুর্নামেন্ট করা। স্কুলের ওপর জোর দেওয়া উচিত।’
নতুন সাধারণ সম্পাদককে চেনেন না গত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও আবাহনীর হকি কর্মকর্তা মাহাবুবুল এহছান রানা। কমিটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যা ভালো মনে করেছে, তা–ই করেছে। দায়িত্ব পাওয়াদের অভিজ্ঞতা কম। তবে দেখি তারা কী করে। এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
তবে নতুন কমিটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছেন মাহাবুবুল, ‘তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ লিগ চালানো। কিন্তু ক্লাবগুলোর প্রতিনিধি সে অর্থে নেই এই কমিটিতে। মোহামেডান, উষায় যুক্তরা কেউ নেই। জেলার একজন মাত্র প্রতিনিধি। ফলে জেলায় খেলা চালানো কঠিন হবে। সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় যারা, তারা বলতে গেলে কেউই নেই। গত কমিটির একজনও নেই। এমনকি ইউসুফ ভাইও (ইউসুফ আলী) নেই। হকি তো চালু করতে হবে। কমিটিতে আরেকটু ভারসাম্য আনলে ভালো হতো। তবে আবাহনীর পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সাবেক এক খেলোয়াড় বলেন, কমিটিটা হয়ে গেছে বাহিনীনির্ভর। বাহিনী বলতে তিন বাহিনী নয়। সাধারণ সম্পাদক বাহিনীর সাবেক সদস্য, ‘তাঁকে কতজন চেনেন, আমি জানি না। কমিটিতে ক্লাবগুলোকে সম্মান দেয়নি। খেলবে তো ক্লাব। ক্লাবগুলো এখন খেলায় এগিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। জেলার লোকজন কই? প্রজ্ঞাপনে লেখা হয়েছে, পুতুল আপা (পারভিন নাছিমা নাহার) মহিলা জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু ঘটনা হলো, তাঁদের সময় জাতীয় দল ছিল না’, বলেছেন সাবেক ওই খেলোয়াড় ও কোচ।
নতুন সাধারণ সম্পাদকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন নম্বরও দিতে পারছেন না হকি অঙ্গনের কেউ।