ঢাকার যে হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট দেখা যাবে ৪৭টি দেশে
বাংলাদেশের হ্যান্ডবল ফেডারেশনে এখন সাজ সাজ রব। ফেডারেশনসংলগ্ন শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম জেগে উঠেছে নতুনভাবে। ১৩ মে এখানেই শুরু হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ (ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশন) চ্যালেঞ্জ ট্রফি উইমেনস (যুব ও জুনিয়র) হ্যান্ডবল।
লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে টুর্নামেন্টটি দেখতে পাবেন দর্শকেরা। একই সঙ্গে টুর্নামেন্টের ফেসবুক পেজেও লাইভ দেখা যাবে। বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল ফেডারেশন তাদের ফেসবুক পেজ এবং হ্যান্ডবলে সক্রিয় বিশ্বের ৪৭টি দেশে টুর্নামেন্টটি সম্প্রচার করবে। ডিজিটাল যুগে যা হবে বাংলাদেশের হ্যান্ডবলের নতুন এক অভিজ্ঞতা। বিশ্ব হ্যান্ডবলে বাংলাদেশের পরিচিত বাড়বে। লোকজন চিনবে বাংলাদেশকে। খেলোয়াড়দের জন্যও নিজেদের তুলে ধরার একটা মঞ্চ হবে এই টুর্নামেন্ট।
চার দেশের এই নারী হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টে খেলছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মালদ্বীপ। খেলা হবে অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগে, যা শেষ হবে ১৭ মে।
এই অঞ্চলে ভারত যে টুর্নামেন্টে খেলে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকে তারাই। তাই এবারও এই টুর্নামেন্টে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চ্যাম্পিয়ন দল খেলবে পরের রাউন্ডে। বাংলাদেশের পক্ষে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিনই। বাস্তবতা মেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশার কথা বলছেন না বাংলাদেশ হ্যান্ডবল দলের কোচ-কর্মকর্তা কেউই। তবে দুই বিভাগেই ফাইনালে খেলার আশা স্বাগতিকদের।
আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ ডালিয়া আক্তার যেমন বলেছেন, ‘হ্যান্ডবলে ভারতে অলিম্পিক খেলে। নেপালও ভালো। অন্যদিকে আমার খেলোয়াড়েরা ছোট। ওদের খেলা খুব ভালো হতে পারে, খারাপও হতে পারে। আশা করি, ভালোটাই হবে। ভারত থাকায় চ্যাম্পিয়ন হব, এ কথা আমরা বলতে পারছি না। তবে স্বাগতিক হিসেবে আমরা ভালো করতে চাই। ফাইনালে খেলতে চাই।’
প্রস্তুতির সময় কম পেয়েছেন জানিয়ে ডালিয়ার সংযোজন, ‘টুর্নামেন্ট সামনে রেখে আমরা এক মাসের মতো প্রস্তুতি নিয়েছি। রমজানেও দুবেলার অনুশীলন হয়েছে। শুধু ঈদের দিন অনুশীলন বন্ধ ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ অনুশীলন করেছি। দলে সবাই তরুণ খেলোয়াড়। অধিকাংশের বয়স ১৩ / ১৪ বছর।’
অনূর্ধব-১৯ বিভাগে ৪৮ খেলোয়াড় নিয়ে অনুশীলন শুরু হয়েছিল। পরে সেটা ৪০ জনে নেমে আসে। সেখান থেকে ১৪ জনের চূড়ান্ত দল নিয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। যুব দলের মতো জুনিয়র দলের প্রস্তুতিও একই রকম হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের কোচ আমজাদ হোসেনের কথা, ‘আমরাও টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা করব।’
সেই ‘ভালো করা’র দায়িত্ব নিয়ে মাঠে যে দুজন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন, দুজনই ছিলেন আজকের সংবাদ সম্মেলনে। অনূর্ধ্ব-১৭ জুনিয়র হ্যান্ডবল দলের অধিনায়ক করা হয়েছে মোসাম্মাৎ মারফিকে এবং বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক শ্যামলী মিং।
এই টুর্নামেন্টে ২০১৪ সালে মেয়েদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত খেলেনি সেবার। টুর্নামেন্টটি এ নিয়ে ঢাকায় হচ্ছে তৃতীয়বার। শেষবার হয়েছিল ২০১৬ সালে। শেষ টুর্নামেন্টে ঢাকায় ছেলে ও মেয়েদের বিভাগে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম ঢাকায় কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে। সাত বছর পর আয়োজিত টুর্নামেন্ট নিয়ে হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুরের আশা, এর মাধ্যমে দেশের হ্যান্ডবলের প্রচার ও প্রসার হবে।
একই কথা বলেছেন টুর্নামেন্টের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলামও, এমন একটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে বলে সবাই খুব খুশি। দেশে দিনে দিনে হ্যান্ডবলের প্রচার-প্রসার বাড়ছে। দেশের ৩৪টি জেলায় এখন হ্যান্ডবল হচ্ছে।
টুর্নামেন্টের কো-চেয়ারম্যান পুলিশের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের আশা, বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ ট্রফি টুর্নামেন্ট সফল এবং সার্থক হবে। দেশের হ্যান্ডবল আরও গতি পাবে।