গেরহার্ডের হাত ধরে বাংলাদেশের হকি খেলোয়াড়দের সামনে আবার খুলছে ইউরোপের দরজা
বাংলাদেশে হকির সঙ্গে আবার গাঁটছড়া বাঁধলেন পিটার গেরহার্ড। জার্মানির এই কোচ বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ হকি দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের এপ্রিলে প্রথম আসেন বাংলাদেশ হকি দলের কোচিং পরিচালক হিসেবে। ২০১৬ পর্যন্ত কাজ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে এবং ক্লাব পর্যায়ে। তাঁর কল্যাণে ইউরোপে খেলারও সুযোগ পান রাসেল মাহমুদ জিমিসহ এক দল খেলোয়াড়। অনেক দিন সেটা বন্ধ থাকার পর আবার তা খুলতে চলেছে। আবার গেরহার্ডের হাত ধরেই, আগের চেয়েও বড় আকারে।
আট বছর পর গেরহার্ড পরশু বাংলাদেশে এসেছেন। এবার তাঁকে হকি ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন আজ সংবাদ সম্মেলনে করে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাও করা হয়েছে তা। পিটার চার বছরের চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন আপাতত এক বছরের চুক্তি করছে। চুক্তিটি পরে বাড়ানোও হতে পারে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর কেনিয়ায় কোচের চাকরি নেন গেরহার্ড। ছিলেন সেখানে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও। কেনিয়ায় কাজ করেন গত বছর পর্যন্ত। সেখানে তিনি পড়ে তুলেছেন আইটি ব্যবসা, সেটারই কাজে শুক্রবার কেনিয়া যাচ্ছেন। তারপর যাবেন ইউরোপে। জুলাইয়ে বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু হলে আবার আসবেন।
বছরের ১২ মাসের মধ্যে গেরহার্ড বাংলাদেশ দল নিয়ে পাঁচ মাস কাজ করবেন ইউরোপে। তা চলবে দুই দফায়—একবার তিন মাস, আরেকবার দুমাস, যা দারুণ সুযোগই। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলার সুযোগ আগেও দিয়েছেন গেরহার্ড। এবার বেশি করে দেবেন। ইউরোপে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জার্মানি, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসে খেলোয়াড়দের খেলার ব্যবস্থা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক বলেছেন, ‘ইউরোপে ৪০-৫০ জনকে পাঠানো হবে। ক্লাবের খেলার পাশাপাশি সেখানে জাতীয় দলের ক্যাম্পও হবে। পোল্যান্ডের সঙ্গ এরই মধ্যে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের কথা হয়েছে। সেখানে দল পাঠানোর কথা হয়েছে। গেরহার্ড জাতীয় দলের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দল নিয়েও কাজ করবেন। এসব নিয়ে পিটার পরিকল্পনা দেবেন।’
এসব পরিকল্পনায় গেরহার্ড উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশের হকির সবাই তাঁকে চেনেন। তিনিও সেটি জানেন। জার্মান কোচ বলেছেন, ‘আট বছর পর এখানে আসতে পেরে আমি খুব খুশি। ২০১৬ সালে আমি চলে গিয়েছিলাম। ফিরলাম আবার। বাংলাদেশের হকি আমি চিনি। বাংলাদেশ চেষ্টা করলে পাকিস্তানকে ধরতে পারবে। কারণ, পাকিস্তানের হকি এখন নিচের দিকে। ভারতকে সম্ভব নয়। কারণ, ওরা অলিম্পিক পদক জেতে। আমাদের সামগ্রিক লক্ষ্য হকির উন্নয়ন।’
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ইউরোপে খেলা প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন কোচ, ‘আমি যখন প্রথম আসি, জামিল উদ্দিন ছিলেন ফেডারেশন সম্পাদক। তিনি অনেক সহায়তা করেন। টাকা দেন। দলকে ইউরোপে পাঠান। আমরা রাশিয়া গিয়ে ভালো করি। হল্যান্ড (নেদারল্যান্ডস), ইতালি, চেক রিপাবলিকে যাই। আপনাদের মনে থাকতে পারে, ২০১০ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে আমরা ভারতের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করি। ১০ মিনিট আগে ৩-১ গোলে পিছিয়ে ছিলাম। আমরা ব্রোঞ্জ পাই। এগুলো আমাদের প্রেরণা দিয়েছে।’
কিন্তু বছরের বাকি সাত মাস তিনি কী করবেন? ব্যাপারটা পরিষ্কার নয়। হকি ফেডারেশন বলছে, তখন কোনো খেলা বা কোনো সূচি না থাকলে নিশ্চয়ই কোচ বসে থাকবেন না, তাঁরা চেষ্টা করবেন কোচকে কাজে লাগানোর। খেলা না থাকলে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া কঠিন বলেছেন ফেডারেশন সম্পাদক, ‘আমি তো পুরো সময় কোচকে দেশে রাখতে পারব না। খরচের ব্যাপারটা ম্যানেজ করা হলে ৭ মাসই রাখার চেষ্টা করব।’
এখন ইউরোপে বাংলাদেশের তিনজন খেলোয়াড় রিমন, মাহবুব ও সবুজ খেলছে। সংখ্যাটা আমরা বাড়াব। পাকিস্তানি, ভারতীয়দের সঙ্গে খেলা কঠিন। তবে আমাদের ছেলেরা পারে।
তবে বর্তমান নেতৃত্ব তাঁকে সহায়তা করবে বলেই বিশ্বাস গেরহার্ডের, ‘এখন ইউরোপে বাংলাদেশের তিনজন খেলোয়াড় রিমন, মাহবুব ও সবুজ খেলছে। সংখ্যাটা আমরা বাড়াব। পাকিস্তানি, ভারতীয়দের সঙ্গে খেলা কঠিন। তবে আমাদের ছেলেরা পারে। ইউরোপে আমরা যেটা করব, প্রতিদিন সকালে একত্র হয়ে অনুশীলন করব জাতীয় দলে। প্রতি বুধবার অনুশীলন ম্যাচ খেলব স্থানীয় ক্লাব দলের সঙ্গে।’
কিন্তু সমস্যা হলো, এখানে লিগ হয় তিন বছর পর। খেলা নেই। তারপরই কোচ কীভাবে আশাবাদী হন যে এই খেলোয়াড়দের একটা পর্যায়ে নেবেন? প্রশ্ন করলে গেরহার্ড বলেন, ‘তাদের প্রতিভা আছে। দরকার শুরু তাদের খেলার সুযোগ দেওয়া।’
সেখানে বাংলাদেশের হকির অবকাঠামো ভালো নয়, সেখানে গেরহার্ড কীভাবে বাংলাদেশের হকির উন্নতি করবেন? প্রশ্নটা থাকছেই।