যুব গেমসের দ্রুততম মানব নাইম, মানবী আইরিন
ফিনিশিং লাইনে পা রাখতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল আইরিন আক্তার। বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের ওপর প্রচণ্ড গতিতে পড়ে যাওয়ায় হাঁটু কেটে রক্ত বের হতে শুরু করে আইরিনের। তবে একটু পরেই যেন সব ব্যথা দূর হয়ে গেল তার!
শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের (অনূর্ধ্ব–১৭) দ্রুততম মানবীর নাম ততক্ষণে ঘোষণা করা হয়েছে। ১২.২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে গেমসের দ্রুততম মানবী হয়েছে রংপুর বিভাগের এই স্প্রিন্টার। ১০.৮০ সেকেন্ড সময় নিয়ে খুলনা বিভাগের নাইম শেখ হয়েছে দ্রুততম মানব।
সাধারণত বাংলাদেশের ঘরোয়া অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা চলার সময় স্টেডিয়ামের গ্যালারি থাকে ফাঁকা। কিন্তু নাইম ও আইরিন নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতেই পারে।
যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম উপচে পড়ছিল দর্শক। যাদের বেশির ভাগই ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুলের ছাত্র। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তাদের স্ত্রী-পরিবার তো ছিলই। অ্যাথলেটরা যখনই দৌড়েছে সমানে উৎসাহ জুগিয়েছে দর্শকেরা।
খুলনার দিঘলিয়া থানার অ্যাথলেট নাইমের বাবা দরিদ্র কৃষক। নাইমকে এক জোড়া ভালো কেডস কিনে দেওয়ার সামর্থ্যও তাঁর নেই। প্রতিদিন ভোরে বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে দিঘলিয়া ওয়াইএমএ মাঠে এসে অনুশীলন করে নাইম।
সেই অনুশীলনের ফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই স্প্রিন্টার বলেছে, ‘আজ আমার চেষ্টা ও পরিশ্রম সফল হয়েছে। ১০০ মিটারে সোনা জেতার লক্ষ্যে গেমসে এসেছি। আমার এবারের লক্ষ্য সিনিয়র মিটে ভালো ফল করা।’
গত বছর ঢাকায় জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও কোনো পদক পায়নি নাইম। এবার পদক জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ছিল তার, ‘গত বছর যখন ভালো কিছু করতে পারিনি, তখনই প্রতিজ্ঞা করি যুব গেমসে ভালো কিছু করব। শেষ পর্যন্ত পেরেছি।’
এবারের যুব গেমসে ২০০ মিটারেও সোনা জিতেছে বিকেএসপির ছাত্রী আইরিন আক্তার। তার বাবা আক্কাস আলী কুড়িগ্রামে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশের আট-দশটা পরিবারের মতোই কখনো বাবা চাইতেন না যে মেয়ে খেলাধুলা করুক। আজ সোনা জয়ের পর আইরিন বলে, ‘আমার বাবার খেলাধুলার ব্যাপারে মোটেও আগ্রহ ছিল না। মা আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ট্রেনিংয়ে পাঠাতেন। বাবা বলতেন, মেয়ে মানুষ কেন খেলবে?’
অবশ্য বিকেএসপিতে ২০১৯ সালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার পর বাবার মানসিকতা বদলে গেছে। এবারের গেমসে ২০০ মিটারে সোনা জেতার পরই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে আইরিন, ‘আমি ২০০ মিটারে সোনা জেতার পর মনে হচ্ছিল ১০০ মিটারেও পারব। শেষ মুহূর্তে আজ পড়ে গেলেও জানতাম ফিনিশিং লাইন ছুঁয়েছিলাম। আসলে দৌড়ানোর সময় শেষ মুহূর্তে আমার দুই পা এক সঙ্গে লেগে যায়। তাই ভারসাম্য রাখতে পারিনি।’
অলিম্পিকে সোনাজয়ী জ্যামাইকান স্প্রিন্টার শেলি-অ্যান ফ্রেজার প্রাইস আইরিনের প্রিয় অ্যাথলেট। ভবিষ্যতে একদিন আইরিনও অলিম্পিকে দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখে, ‘আমার প্রথম স্বপ্ন এসএ গেমসে সোনা জেতা। একদিন অলিম্পিকে দৌড়াতে চাই আমি।’