বাবা বাংলাদেশি, মা ইন্দোনেশিয়ান, কুয়েতে জন্ম নেওয়া তায়কোয়ান্দোর যমজ বোনের গল্প

যমজ বোন শেখা ইসলাম (ডানে) ও ফাতেমা ইসলামছবি: প্রথম আলো

শেখা ইসলাম আর ফাতেমা ইসলামের চোখে অনেক স্বপ্ন। একদিন তাঁরা বাংলাদেশ জাতীয় তায়কোয়ান্দো দলে খেলবেন। এরই মধ্যে জাতীয় দলে দরজায় কড়াও নাড়ছেন।  

শেখা ও ফাতেমা যমজ বোন। শেখা দুই মিনিটের বড়। জন্ম আবার ভিনদেশে—কুয়েতে। বাবা বাংলাদেশি, মা  ইন্দোনেশিয়ার। সে এক বিরাট গল্প।

তাঁদের বাবা জুয়েল মিয়া কুয়েতে গিয়েছিলেন চাকরি করতে। সেখানে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার রাজধানী সুরাবাইয়ার মেয়ে ছুলেখা বেগমও চাকরি করতেন। কাকতালীয়ভাবে তাঁদের পরিচয়, প্রেম ও বিয়ে ২০০৪ সালে।

দুই বোনের জন্ম ২০০৬ সালে। জন্মের পর এক বছর তাঁদের কুয়েতে থাকা হয়েছে। এরপর চার বছর কাটিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ায় নানার বাড়িতে। ২০১০ থেকে বাংলাদেশে আছেন একটানা। এখন ঢাকার মোহাম্মদপুরে মায়ের সঙ্গে থাকেন। বাংলাদেশে আসার পর কুয়েত বা ইন্দোনেশিয়ায় আর যাওয়া হয়নি। বাবা এই মুহূর্তে ঢাকায় আছেন। ২ জানুয়ারি চলে যাবেন কুয়েতে নিজের কর্মস্থলে। জুয়েল মিয়ার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।

বাবা–মায়ের সঙ্গে যমজ দুই বোন শেখা ইসলাম ও ফাতেমা ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন দুই বোন। ১৮ বছর বয়সী দুই যমজকে আজ পাওয়া গেল পল্টন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অডিটরিয়ামে। ২১তম জাতীয় তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে এসেছেন তাঁরা। আগে জুনিয়র পর্যায়ে খেলেছেন। এই প্রথম খেলছেন সিনিয়র পর্যায়ে।

তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানার কক্ষে বসে তাঁরা বলে যান নিজেদের উঠে আসার গল্প। ফাতেমার কণ্ঠ রোমাঞ্চিত শোনায় , ‘খুব ছোটবেলা আমরা কুয়েত আর ইন্দোনেশিয়ায় কাটিয়েছি। দুই দেশের সংস্কৃতি, পরিবেশ আলাদা। আবার শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে থেকে পুরোদস্তুর বাংলাদেশি হয়ে গেছি।’

আরও পড়ুন

তায়কোয়ান্দোতে আসার গল্পটাও বললেন ফাতেমা, ‘২০১৮ সালের কথা। কুমিল্লার মডার্ন হাই স্কুলে পড়ি তখন। একদিন স্কুলে ঘোষণা করা হয়েছিল কেউ তায়কোয়ান্দো খেলবে কি না। আমি আগ্রহী হই। এভাবে খেলাটার সঙ্গে যুক্ত হওয়া।’

দুই বোনের বাল্যকাল তিন দেশে কেটেছে
ছবি: সংগৃহীত

ফাতেমার পাশে বসে শেখার সংযোজন, ‘ফাতেমা শুরুটা করেছে। ও বাসায় এসে আমার সঙ্গে খেলত। কিন্তু ওর কাছে হারতাম। এতে আমার ভালো লাগত না। ফলে আমি নিজেও খেলায় আসি।’

যমজ দুই বোন খুব খুশি তায়কোয়ান্দো খেলায় এসে।  শুরুতে তেমন না বুঝলেও এখন খেলাটার প্রেমে পড়ে গেছেন। তাঁদের সামনে খুলছে জাতীয় দলের দরজাও।

তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সেটিই বলছিলেন, ‘ওরা পুমসে-ফাইট দুটিই করে। খেলোয়াড় হিসেবে বেশ ভালো। ওদের সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে করোনার সময়। তখন অনুশীলন করেছে টানা। অনলাইনে তিনটি লাইভ টুর্নামেন্টেও অংশ নেয় এবং পদকও জেতে। সামনে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য ওদের আমরা জাতীয় দলে ডাকব।’

শেখা ইসলাম (ডানে) ও ফাতেমা ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয় তায়কোয়ান্দো দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন বুনছেন
ছবি: প্রথম আলো

মা ছুলেখা বেগমের বিশ্বাস দুই মেয়ে অনেক দূর যাবে। পরিষ্কার বাংলায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বললেন,  ‘ওদের যখন খেলায় আগ্রহ তাই আমরা বাধা দিইনি। আমি চাই ওরা খেলায় ভালো করুক। আমি ওদের নিয়ে গর্বিত।’