গ্যালারিতে বসা সাঁতারের কিংবদন্তি মাইকেল ফেলপস। মার্কিন ‘জলমানবের’ সামনেই সাঁতারের ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডলিতে তাঁর অলিম্পিক রেকর্ড ভাঙলেন ফ্রান্সের লিওঁ মারশাঁ। রিও এবং টোকিওতে ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সোনা জেতা অ্যাডাম পিটি প্যারিসে এসেছিলেন হ্যাটট্রিকের আশায়। কিন্তু ব্রিটিশ সাঁতারুর স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে সোনা কেড়ে নিলেন ইতালির নিকোলো মার্তিনেঙ্গি।
পুলের মতো এমনই সব নৈপুণ্যের ঝলকানিতে রঙিন ছিল প্যারিস অলিম্পিকে পদকের লড়াইয়ের দ্বিতীয় দিন। এ দিনই আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসের মঞ্চে ফিরেছেন কিংবদন্তি সিমোন বাইলস। খেলেছেন টেনিস কিংবদন্তি রাফায়েল নাদালও, দ্বিতীয় রাউন্ডে যিনি মুখোমুখি হবেন টেনিসের আরেক কিংবদন্তি নোভাক জোকোভিচের।
প্যারিসের লা ডিফেনস অ্যারেনার অ্যাকুয়াটিকস সেন্টারে গতকাল ছিল তিনটি সোনার লড়াই। ঘরের ছেলে মারশাঁকে সমর্থন দিতে হাজির হয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক দর্শক। গত বছর জাপানে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ফেলপসের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছিলেন ২২ বছর বয়সী এই সাঁতারু। ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মেডলি জিতেছিলেন ৪ মিনিট ০২.৫০ সেকেন্ড সময়ে, পেছনে ফেলেছিলেন ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ফেলপসের ৪ মিনিট ০৩.৮৪ সেকেন্ডের রেকর্ডকে।
এবার অলিম্পিকে নিজের টাইমিং টপকাতে না পারলেও ফেলপসের অলিম্পিক রেকর্ড ভেঙেছেন মারশাঁ। সাঁতার শেষ করেছেন ৪ মিনিট ০২.৯৫ সেকেন্ড। দ্বিতীয় হওয়া জাপানের তোমোইয়ুকি মাতসুশিতার (৪ মিনিট ০৮.৬২) প্রায় ৬ সেকেন্ড আগেই। এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কারসন ফস্টার।
ছেলেদের ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সাঁতার-পূর্ব আলোচনায় ছিল অলিম্পিকের টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন পিটি ও চীনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কিন হায়াং। তবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতা কিন লড়াইয়ে পদকের ধারেকাছেও থাকতে পারেননি। হয়েছেন সপ্তম। চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি পিটিও। সাঁতারের বড় অংশজুড়ে তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছেন টোকিওতে ব্রোঞ্জ জেতা নিকোলো মার্তিনেঙ্গি। শেষ মুহূর্তে পিটিকে পেছনেই ফেলে দেন এই ইতালিয়ান সাঁতারু।
০.০২ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় হন পিটি। তাঁর সঙ্গে একই সময়ে শেষ করে রুপা জেতেন যুক্তরাষ্ট্রের নিক ফিঙ্কও। হ্যাটট্রিক সোনা না জেতার হতাশায় তাৎক্ষণিকভাবে পিটির চোখে দেখা যায়। পরে অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়ে ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকের নতুন চ্যাম্পিয়নকে অভিনন্দনই জানিয়েছেন, ‘যারাই খেলে, প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে উজাড় করে দেয়, তাদের কাছে হারের মতো আর কিছু হয় না। তবে আমি খুশি যে সঠিক মানুষটিই জিতেছে।’
এ ছাড়া মেয়েদের ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের সোনা জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের তোরি হুসকে। তাঁর সময় লেগেছে ৫৫.৫৯ সেকেন্ড। ৫৫.৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা একই দেশের গ্রেচেন ওয়ালশের। ৫৬.২১ সেকেন্ডে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন চীনের ইয়ুফেই ঝ্যাং।
বাইলসের ফেরা
চারবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন সিমোন বাইলস কোয়ালিফাইং রাউন্ডে অংশ নিয়েছেন। তাঁর জিমন্যাস্টিকস মঞ্চে প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তকে করতালিতে ভাসিয়েছেন দর্শক। এ সময় গ্যালারিতে ছিলেন হলিউড তারকা টম ক্রুজ, পপ তারকা লেডি গাগাও। সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকের মাঝপথে ‘টুইস্টিজ’র কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বাইলস। এটি এমন একধরনের মানসিক অবস্থা, যা জিমন্যাস্টদের বাতাসে ভেসে থাকার সময়ে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এ নিয়ে গত তিন বছরে জিমন্যাস্টিকস ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনে কাজ হয়েছে অনেক।
২৭ বছর বয়সী মার্কিন তারকা এবার কেমন করেন, সেটা দেখার কৌতূহল ছিল অনেকেরই। কোয়ালিফাইংয়ে খারাপ করেননি। বিমে চীনের জু ইয়াকিনের পর দ্বিতীয় হয়েছেন। অবশ্য ফ্লোর এক্সারসাইজের সময় কাফের অস্বস্তিতে ভুগেছেন, যদিও সর্বোচ্চ স্কোরই করেছেন। পরে সর্বোচ্চ পয়েন্ট (৫৯.৫৬৬) তুলেছেন অল-অ্যারাউন্ডেও। অবশ্য এ সবই ছিল বাছাই। মূল প্রতিযোগিতায় কেমন করেন সেটি এখনো দেখার বিষয়।
নাদাল বনাম জোকোভিচের অপেক্ষা
প্রথম রাউন্ডে রাফায়েল নাদালের প্রতিপক্ষ ছিলেন র্যাঙ্কিংয়ের ৮৩ নম্বরে থাকা মার্টন ফুসোভিচ। হাঙ্গেরির এই প্রতিযোগীকে সহজেই ৬-১, ৪-৬, ৬-৪ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছেন নাদাল। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় নোভাক জোকোভিচ। টেনিস এককের শেষ ষোলোয় ওঠার লড়াইয়ে দুজন খেলবেন আজই। ২৪ বারের গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জোকোভিচের সঙ্গে রোঁলা গাঁরোর ‘ঘরের ছেলে’র এটি ৬০তম দেখা। ৩৮ বছর বয়সী নাদাল এগিয়ে রাখছেন সার্বিয়ান তারকাকেই, ‘আমার ক্যারিয়ারে যে দুজন বড় প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে খেলে এসেছি, তাদের একজনকে এই কোর্টে পাওয়া চমৎকার। তবে দুজনের জন্যই পরিস্থিতিটা ভিন্ন। জোকো খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমি গত দুই বছর খুব একটা নই। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, আমার চেয়ে সে-ই পরিষ্কার এগিয়ে।’
এ দিন বাস্কেটবল দিয়ে কোর্টে ফিরেছেন কেভিন ডুরান্ট। যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল তারকা চোটে ছিলেন। কাল সার্বিয়ার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ১১০-৮৪ ব্যবধানের জয়ে ২৩ পয়েন্ট স্কোর করেছেন। অন্য খেলার মধ্যে জাপানের ১৪ বছর বয়সী কোকো ইয়োশিজাওয়া মেয়েদের স্ট্রিট স্কেটবোর্ডের সোনা জিতেছেন। দিন শেষে ৪ সোনার ২ রুপা ও ১ ব্রোঞ্জ নিয়ে পদক তালিকার শীর্ষেও জাপানই।