উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্মভিটা স্ট্রাটফোর্ডে গিয়ে ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ। ফেসবুকে সেই ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘অ্যামেইজিং ভিজিট’। এটা দোষের কিছু নয়। তবে বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে গলায় পদক জড়ানো বাংলাদেশি কোনো সাঁতারুর সঙ্গে এ রকম একটা ছবি তুলতে পারলে সেটাই বেশি ‘অ্যামেইজিং’ হতো বোধ হয়।
সাঁতারসহ সব ইভেন্টে বরাবরের মতো হতাশা দিয়েই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের আরেকটি কমনওয়েলথ গেমস। সাঁতারুরা থেকেছেন হিটে সবার পেছনে। প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ছেন বক্সাররা। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক থেকেও সুখবর আসেনি। ভারোত্তোলনে কেউ ডিসকোয়ালিফাই হয়েছেন, কেউ আটজনে অষ্টম। জিমন্যাস্টিকস আর কুস্তির ম্যাটেও হারের গল্প। শুধু টেবিল টেনিসেই একটু সম্ভাবনা ছিল। পুরুষ দলগত ইভেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে চমক দেখান রামহিম লিয়ন বম, মুহতাসিন আহমেদরা।
কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন ২টি সোনা, ৪টি রুপা ও ৪টি ব্রোঞ্জ। সব কটিই শুটিং থেকে। পদকপ্রসবা সেই শুটিং আর সম্ভাবনাময় আর্চারি না থাকায় টানা পাঁচ আসর পর এবার খালি হাতে ফিরছে বাংলাদেশ। যদিও আন্তর্জাতিক গেমস থেকে খালি হাতে ফেরাটা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ব্যর্থতার গল্পটাই নতুন করে শোনা গেছে বার্মিংহামে।
ব্যর্থতার দায় কি শুধু খেলোয়াড়দেরই নয়। যে দেশের খেলোয়াড়–কর্মকর্তাদের কাছে আন্তর্জাতিক গেমসগুলো ‘বেড়ানো’ আর ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের উপলক্ষমাত্র, সেখানে শুধু খেলোয়াড়দের দায় দেওয়ার অবকাশও নেই।
কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন ২টি সোনা, ৪টি রুপা ও ৪টি ব্রোঞ্জ। সব কটিই শুটিং থেকে। পদকপ্রসবা সেই শুটিং আর সম্ভাবনাময় আর্চারি না থাকায় টানা পাঁচ আসর পর এবার খালি হাতে ফিরছে বাংলাদেশ
এসএ গেমসে সোনাজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার কমনওয়েলথ গেমসে ক্যারিয়ার–সেরা পারফর্ম করেছেন। কিন্তু সেটাও ১২ জনের মধ্যে অষ্টম হয়ে। মাবিয়া অবশ্য এবার পর্যাপ্ত অনুশীলনই করতে পারেননি। তাঁর জন্য ছিল না কোনো কোচ, নিজেই নিজের কোচ হয়ে অনুশীলন চালিয়েছেন। তিনি যে গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসের চেয়ে এবার ১ কেজি ওজন বেশি তুলতে পেরেছেন, এটাই তো বেশি!
এবারের কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেওয়া সাতটি ডিসিপ্লিনের মধ্যে শুধু টেবিল টেনিস দলই নিজেদের যোগ্যতায় সরাসরি খেলতে গেছে বার্মিংহামে। গেমসের আগে তাদেরও অনুশীলনের জন্য ঘুরতে হয়েছে যাযাবরের মতো। পল্টনের উডেনফ্লোরে সংস্কারকাজ চলায় কখনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নতুন ভবনের ছোট বারান্দায় অনুশীলন করেছেন, কখনো কারও ‘ব্যক্তিগত’ ইনডোরে।
কমনওয়েলথ গেমস দূরে থাক, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা এসএ গেমসেই অ্যাথলেটিকস থেকে সোনা আসে না ১৬ বছর। কর্মকর্তা বা অ্যাথলেট—কারোরই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। পদক তাহলে আসবে কীভাবে? এবারের কমনওয়েলথ গেমসে অন্তত ১টি করে ব্রোঞ্জ জিতেছে বতসোয়ানা, মাল্টা, মোজাম্বিক, নাউরু। অথচ এই দেশগুলোর আয়তন ও জনসংখ্যা—দুটোই কম বাংলাদেশের চেয়ে। আসলে বাংলাদেশের ফেডারেশনগুলোর গেমস নিয়ে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কখনো ছিল না, এখনো নেই। পদক জয় নয়, তাদের কাছে এসব গেমস তাই বেড়ানো, অভিজ্ঞতা অর্জন আর ছবি তোলার উপলক্ষ হয়েই আছে।