বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে বাধার মুখে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আপত্তিপত্রই জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের হকি সংগঠক সাজেদ আদেলের। একই অভিযোগ জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় জহিরুল ইসলামেরও। এর প্রতিবাদে তাঁরা রিট করেন। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ের গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে সেই রিটের শুনানি হয় ১৫ জুন। শুনানি শেষে তিন দিনের মধ্যে সাজেদ আদেলের আপত্তি গ্রহণ করে শুনানি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক চৌধুরী (টিটু) প্রথম আলোকে বলেন, ‘হকির নির্বাচনে বাদী আপত্তিপত্র জমা দিতে গিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক তারা সেটা দিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন যেন আপত্তি গ্রহণ করে শুনানি করে তিন দিনের মধ্যে—মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে আমরা এমন একটা নির্দেশনা পেয়েছি।’
আদালতের আদেশে আমার নৈতিক জয় হয়েছে। আমরা এখন দ্রুত শুনানি চাই। আশা করি, আমরা নিজেদের অধিকার ফিরে পাব এবং নির্বাচন করতে পারব।সাজেদ আদেল
আদালতের আদেশের কোনো কপি পাননি জানিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইনজীবী কবিরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টা আমি জানি। বাদী আপত্তিপত্র দিতে পারেননি। সেটার নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। আদেশটা হাতে পেলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’ হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (অর্থ) সাইদুর রশিদ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, তিনি আদালতের কোনো নির্দেশনা তখনো পাননি। পেলে ব্যবস্থা নেবেন। পরে অবশ্য জানা গেছে, আদেশের কপি পৌঁছেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে।
সাজেদ আদেল তাঁর রিট প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা রিটে আবেদন করেছিলাম, কেন আমাদের আপত্তির ওপর শুনানি হবে না? আদালতের আদেশে আমার নৈতিক জয় হয়েছে। আমরা এখন দ্রুত শুনানি চাই। আশা করি, আমরা নিজেদের অধিকার ফিরে পাব এবং নির্বাচন করতে পারব। নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারা আমার অধিকার। সেটা কেউ কেড়ে নিতে পারে না।’
নির্বাচন অবশ্য এরই মধ্যে শেষ। ১৯ জুন ভোটাভুটির প্রয়োজন হচ্ছে না। একক পরিষদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হয়েছে নির্ধারিত তারিখের তিন দিন আগেই।
উল্লেখ্য, ঢাকার প্রথম বিভাগ হকি লিগে সাজেদ আদেলের দুটি ক্লাব। দুটিরই সভাপতি তিনি। এবার নির্বাচনের জন্য হকি ইউনাইটেডের কাউন্সিলর হিসেবে নিজেরই নাম পাঠান আদেল। কম্বাইন্ড স্পোর্টিংয়ের কাউন্সিলর হিসেবে পাঠান জহিরুল ইসলাম মিতুলের নাম। কিন্তু নাম দুটি গ্রহণ করেনি হকি ফেডারেশন। না করার যুক্তি, এই দুটি ক্লাব থেকে কাউন্সিলর হিসেবে অন্য নাম জমা পড়ে। এরই প্রতিবাদে আদালতে যান সাজেদ ও জহিরুল।
৪ জুন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আপত্তি গ্রহণে দিন ছিল। কিন্তু আদেলের অভিযোগ, হকি ফেডারেশনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও এবারের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক হওয়া মমিনুল হক সাঈদের বাধায় তিনি আপত্তি দিতে পারেননি।
সাজেদ আদেল সেদিন অভিযোগ করেছিলেন, ‘আপত্তিপত্র জমা দিতে আমি এনএসসির লিফট দিয়ে উঠলে কিছু ছেলে ঘেরাও করে আমাকে বলে, “এখানেই দাঁড়ান।” তবে ভেতরে যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত সাঈদ আমাকে বলে, “আপনি এটা জমা দিতে পারবেন না। আপনাকে ভালোভাবে বলতেছি, আপনি চলে যান। সে রীতিমতো দুর্ব্যবহার করেছে।” এ–ও বলেছে, “আপনি আমার সঙ্গে টাকাপয়সার ব্যাপারে পারতে পারেন, কিন্তু পেশিশক্তিতে আমার সঙ্গে পারবেন না।” কম্বাইন্ডের জহিরুল হকও বাধার মুখে আপত্তিপত্র জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।
আদেলের আপত্তি জমা দিতে বাধা দিয়েছেন কি না, তা জানতে চাইলে সাঈদ বলেছিলেন, ‘আমি কেন বাধা দিতে যাব? এটা আমার কাজ? এ ধরনের কিছু হয়নি। ওনার এই অপবাদ ছড়ানোর প্রয়োজন আছে? সিসিটিভি আছে না?’ আপনি নাকি বলেছেন পেশিশক্তিতে আপনার সঙ্গে পারবেন না আদেল। এ প্রসঙ্গে সাঈদ বলেন, ‘উনি এখন মনগড়া কথা বলছেন।’