প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা–ভাগ্য এখন টটেনহামের হাতে, সেই ভাগ্য পরীক্ষার শুরু আজ
কেউ চাইলে টটেনহামকে এখনই একটা ‘শিরোপা নির্ধারক’ ট্রফি দিয়ে দিতে পারেন! এটা বলাই যায় যে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নির্ধারণের জাদুর কাঠিটা যে এখন তাদের হাতে। এই জাদুর কাঠি দিয়ে নিজেদের জন্য লিগ শিরোপা নিয়ে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু কারা এবার চ্যাম্পিয়ন হবে, সেটি ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ আছে টটেনহামের হাতে।
চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাদৌড়ে এগিয়ে আছে তিনটি দল। আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল। মৌসুমের শেষভাগে এসে তিনটি দলেরই ম্যাচ আছে টটেনহামের সঙ্গে। এই তিন ম্যাচের ফলে বদলে যেতে পারে শিরোপা লড়াইয়ের গতিপথও। তিন ম্যাচের প্রথমটিতে আজ রাতে নর্থ লন্ডন ডার্বিতে মুখোমুখি হবে আর্সেনাল ও টটেনহাম। টটেনহামের মাঠে এ ম্যাচটি আর্সেনালের জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ।
৩৪ ম্যাচ ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে মিকেল আরতেতার আর্সেনাল। আজকের ম্যাচে টটেনহামের বিপক্ষে জিতলে ৩৫ ম্যাচে গানারদের পয়েন্ট হবে ৮০। সে ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ৪ এবং লিভারপুলের চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে যাবে তারা। তবে মনে রাখা ভালো, সিটি এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছে ৩৩টি। অর্থাৎ আর্সেনাল–টটেনহাম ম্যাচ শেষে সিটির হাতে থাকবে বাড়তি দুই ম্যাচ, যা নিশ্চিতভাবেই শিরোপাদৌড়ে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে সিটিকে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্রথম লেগে আর্সেনালের মাঠ থেকে ড্র নিয়ে ফিরেছিল টটেনহাম। সেদিন শুরুতে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি আর্সেনাল। সন হিউং–মিনের জোড়া গোলে এমিরটেসের ম্যাচটি ২–২ গোলে ড্র করেছিল টটেনহাম। তবে আজ রাতে পয়েন্ট হারালে তা বড় ধরনের ধাক্কা হবে আর্সেনালের জন্য।
টটেনহামের জন্যও এ ম্যাচ কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার লড়াইয়ে টিকে থাকতে পরবর্তী ম্যাচগুলো দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ঘরের মাঠে এ ম্যাচ জয়ের জন্য মরিয়া থাকবে তারাও। এ ছাড়া ডার্বি ম্যাচ হওয়ায় নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে মর্যাদার লড়াইয়ের বিষয়টি তো আছেই। সব মিলিয়ে আজ রাতে কঠিন এক পরীক্ষাই দিতে হবে আর্সেনালকে।
সিটির জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে টটেনহাম। আর্সেনালের মতো সিটিও নিজেদের ম্যাচ খেলবে টটেনহামের মাঠে। টটেনহামের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে খুব একটা স্বস্তিতে দেখা যায় না গার্দিওলার সিটিকে। গার্দিওলার যুগে লিগে মুখোমুখি হওয়া ১৫ ম্যাচে ৬টিতে জিতেছে টটেনহাম, বিপরীতে সিটির জয়ও ৬ ম্যাচে এবং ড্র হয়েছে অন্য ৩ ম্যাচ। এ ছাড়া ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে টটেনহামের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার স্মৃতি এখনো দগদগে। সেই সুখস্মৃতি আরও একবার সিটির বিপক্ষে ফেরাতে ১৫ মে মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে টটেনহাম।
একের পর এক ব্যর্থতা ও দৃষ্টিকটু ফুটবলে ইয়ুর্গেন ক্লপের ক্লাব ছাড়ার আগেই যেন ভেঙে পড়েছে লিভারপুল। সর্বশেষ ওয়েস্ট হামের বিপক্ষেও ২–২ গোলে ড্র করেছে তারা। বিপর্যস্ত সময় কাটালেও প্রিমিয়ার লিগ জয়ের সম্ভাবনা এখনো কাগজে–কলমে শেষ হয়ে যায়নি। শেষের দিকে যেকোনো নাটকীয়তা বদলে দিতে পারে দৃশ্যপট। ৩৫ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের পয়েন্ট এখন ৭৫। নাটকীয় কিছুর অপেক্ষায় থাকা লিভারপুলও তাকিয়ে থাকবে টটেনহামের দিকে।
টটেনহাম যদি সিটি ও আর্সেনালকে হারিয়ে দিতে পারে, তবে ভাগ্য বদলে যেতে পারে লিভারপুলেরও। কিন্তু টটেনহাম–হুমকি ঝুলছে লিভারপুলের মাথার ওপরও। চলতি মৌসুমে প্রথম লেগে বিতর্কিত এক ম্যাচে টটেনহামের মাঠে ২–১ গোলে হেরেছিল লিভারপুল। চাপের মুখে থেকেই দ্বিতীয় লেগে ফের স্পারদের মুখোমুখি হবে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি।
তবে সিটি ও আর্সেনালের চেয়ে এক জায়গায় বাড়তি সুবিধা পাবে লিভারপুল। টটেনহামের বিপক্ষে ৫ মের ম্যাচটি ক্লপের দল খেলবে নিজেদের মাঠে। সব মিলিয়ে মৌসুমের শেষ পর্বে এসে শিরোপা লড়াইয়ে থাকা তিন দলের জন্যই টটেনহাম হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ এক নির্ণায়ক, যাদের বিপক্ষে নিজেদের জয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারের প্রার্থনাই এখন করতে হচ্ছে দলগুলোকে।