এই তো গত ৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারায় বাংলাদেশ দল। এর এক মাস আগেই দুই দল ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সেই সিরিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে।
একই সিরিজে একটি টেস্ট ও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে দুই দল। গত বছর দুই দল আরও তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। সেই সিরিজ অবশ্য বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। এত পরিসংখ্যানের অর্থ একটাই—দুই দলই একে অপরকে খুব ভালো করে চেনে। আজ সে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ২ পয়েন্ট অর্জন করতে চাইবে দুই দলই।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের দুর্দশার গল্পটা নিশ্চয়ই সবার জানা। এ বছর যে ১২টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল আগে ব্যাটিং করেছে, এর মধ্যে ৬টিতেই পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। আর আফগান বোলিংয়ের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়ার উদাহরণও কম নেই। গত জুলাই মাসেই চট্টগ্রামে দুই দল যে সিরিজটি খেলেছে, সেখানে প্রথম দুটি ম্যাচে ২০০ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। আর এই ব্যাটিং ধসের শুরুটা হয় টপ অর্ডার থেকেই। টপ অর্ডার যে ম্যাচে রান করেছে, সে ম্যাচেই আফগানদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ উদাহরণ তো এশিয়া কাপের ম্যাচটি। ওপেনিংয়ে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ সেঞ্চুরি করেছেন, সেঞ্চুরি করেছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেনও। বাংলাদেশ স্বচ্ছন্দে খেলেই ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান করে জিতেছে ৮৯ রানে। আজও তেমন শুরুই চাইবে বাংলাদেশ।
ফারুকি-মুজিবের বোলিং জুটি
ফজলহক ফারুকির সুইং আর মুজিব উর রেহমানের স্পিন—এই দুটি বিষয় আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম। দুজনই নতুন দলে দারুণ কার্যকর। ফারুকি এখন পর্যন্ত ২১টি ওয়ানডে খেলে ৩২ উইকেট শিকার করেছেন। যার মধ্যে ১৪টিই (৭ ম্যাচে) বাংলাদেশের বিপক্ষে, বেশির ভাগই নতুন বলে সুইংয়ের সৌজন্যে। মুজিবও ওয়ানডেতে দারুণ কার্যকর। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ম্যাচ খেলে ১৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাঁর গতিময় রহস্য স্পিনে সামনের পায়ে না পেছনের পায়ে খেলতে হবে, এই সিদ্ধান্তহীনতা ব্যাটসম্যানদের সচরাচর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে।
বাংলাদেশ পেসারদের গতি ও বাউন্স
খেলা যখন ধর্মশালায়, তখন গতি ও বাউন্স হবে বাংলাদেশের মূল শক্তি। আর আফগানিস্তান দলের ব্যাটসম্যানদের পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে দুর্বলতাটা সবার জানা। বিশেষ করে বাউন্সের কথাটা বলতেই হয়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গত জুলাইয়ে আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট জয়ের পেছনে তাসকিন আহমেদের বাউন্স ছিল অন্যতম কারণ। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আফগানদের টি-টোয়েন্টি সিরিজও হারিয়েছে উইকেটের বাড়তি বাউন্স কাজে লাগিয়ে। এশিয়া কাপের গল্পটাও একই। বাংলাদেশের ৩৩৪ রান তাড়া করতে নেমে ২৪৫ রানে অলআউট হওয়া আফগানদের ৮টিই নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। আজও আফগানদের লেংথ বলের সঙ্গে বাউন্সার মিশিয়ে ভড়কে দিতে চাইবেন তাসকিনরা।
ওপেনিং যখন আফগানদের ভরসা
রহমানউল্লাহ গুরবাজ মারবেন আর ইব্রাহিম জাদরান ধরে খেলবেন। দুই আফগান ওপেনারের এই যুগলবন্দী খুবই কার্যকর। আফগানদের বিপক্ষে ভালো করতে হলে এই দুজনকে দ্রুত ফেরাতে হবে। দ্রুত উদ্বোধনী জুটিতে ফাটল ধরাতে পারলে দুয়ার খুলে যাবে আফগানের দুর্বল মিডল অর্ডারের। বাংলাদেশ দলের লক্ষ্যও সে রকমই হওয়ার কথা।
রশিদ-ফ্যাক্টর
জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে উইকেট (১৯) শিকার করেছেন রশিদ খান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ মাঝের ওভারে এই ‘রশিদ-চ্যালেঞ্জ’ সামলাতে হবে বাংলাদেশকে। মুজিবের মতোই রশিদও ‘ফাস্ট স্পিন’ দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেবেন। ছোট ছোট বাঁকের সঙ্গে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের আশপাশের গতি ব্যাটসম্যানদের ধন্দে ফেলে দেয়। যেকোনো নতুন ব্যাটসম্যানের জন্যই তা বিরাট এক পরীক্ষা। রশিদ বোলিংয়ে এলে ক্রিজে থিতু ব্যাটসম্যান থাকুক, বাংলাদেশ দল এটাই চাইবে।