অলিম্পিকে জমেছে চীন–যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধ’
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্ক। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অলিম্পিক পদক তালিকায়ও তাদের লড়াইটা পুরোনো। এবার প্যারিস অলিম্পিকেও চলছে টক্কর। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৭ সোনা জিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, মাত্র ২টি সোনার পদক ব্যবধানে দ্বিতীয় চীন।
অলিম্পিক নিয়ে ময়দানের বাইরেও কিন্তু দুই পরাশক্তির লড়াই থেমে নেই। সে লড়াই কথার লড়াই। চীনের অ্যান্টিডোপিং এজেন্সি আজ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটদের ব্যাপারে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটরা ড্রাগ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পরও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ—একটি মিডিয়ার অনুসন্ধানে এমন খবর বেরিয়ে আসার পর দাবিটি তুলেছে চীনের অ্যান্টিডোপিং এজেন্সি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত বুধবার এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দাবি করা হয়, নিষিদ্ধ বস্তু নিয়ে ড্রাগ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পরও অ্যাথলেটদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে একটি শর্তের বিনিময়ে শাস্তি এড়িয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন এসব অ্যাথলেট। অন্য সব ডোপপাপীর বিষয়ে গোপন তথ্য দিতে হবে। আর এ বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টিডোপিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একমত হতে পারেনি ডোপবিরোধী বৈশ্বিক সংস্থা ওয়াডা।
ওয়ার্ল্ড অ্যান্টিডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডোপবিরোধী কর্তৃপক্ষ (ইউএসএডিএ) যে কৌশল হাতে নিয়েছে, সেটি ‘সরাসরি বৈশ্বিক ডোপবিরোধী নীতিমালা লঙ্ঘন করে’ এবং ‘খেলার নৈতিকতাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে’।
চীনের অ্যান্টিডোপিং এজেন্সি (চায়নাডিএ) আজ ‘ইউএসএডিএর গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন গোপন করার বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের জোরালো দাবি’ তুলেছে। চায়নাডিএর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউএসডিএর কাজকর্ম...খেলাধুলায় ন্যায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নিষ্কলুষ অ্যাথলেটদের অধিকার গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের ডোপবিরোধী কাজে স্বচ্ছতারও অভাব আছে।’ বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, অন্য দেশের ডোপপাপী অ্যাথলেটদের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘দ্বিচারী আচরণ’ করছে, যেখানে নিজেদের ব্যাপারে তারা ‘অন্ধ’।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের খেলাধুলাভিত্তিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায় গত এপ্রিলে। তখন একটি সংবাদমাধ্যমের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত টোকিও অলিম্পিকের আগে চীনের ২৩ জন সাঁতারু নিষিদ্ধ কিছু নিয়ে ডোপ পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছিলেন। তবু তাঁদের অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়। ওয়াডা এ বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের যুক্তি মেনে নিয়েছিল। পজিটিভের কারণ হিসেবে খাদ্যদূষণের কথা জানিয়েছিল তারা। এরপর ওয়াডার তুমুল সমালোচনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
আজ একটি আলাদা বিবৃতিতে চায়নাডিএ আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটরা ‘পরিকল্পিতভাবে’ ডোপিংয়ের শিকার। তারা উদাহরণও দিয়েছে। গত মার্চে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার এরিয়ন নাইটন। কিন্তু মাংসে দূষণের কারণে এমন হয়েছে দাবি করে তাঁকে প্যারিস অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেওয়া হয়। অলিম্পিকের ২০০ মিটার দৌড়ে ফাইনালে আজ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন নাইটন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের অ্যাথলেটদের আরও বেশি করে ডোপ পরীক্ষার দাবি তুলেছে চায়নাডিএ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অ্যাথলেটের এবার প্যারিস অলিম্পিকে ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার প্রমাণ দিতে পারেনি চায়নাডিএ।
ডোপ পাপের অভিযোগ আছে, এমন ১১ জন সাঁতারুকে এবার প্যারিস অলিম্পিকের দলে রেখেছে চীন। ২টি সোনা, ৩টি রুপা, ৭টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১২টি পদক জিতেছেন তাঁরা। অভিযুক্ত সেই ২৩ সাঁতারুর বিষয়ে তদন্তের বিশদ জানতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত জুনে চায়নাডিএ জানিয়ে দেয়, এ বিষয়ে তারা ‘কখনো’ রাজি হবে না।