স্বপ্ন পূরণের পর মৃত বাবাকে সোনার পদক উৎসর্গ আলফ্রেডের

১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জয়ের পর আলফ্রেডের উদ্‌যাপনএএফপি

শা’কারি রিচার্ডসন, নাকি শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস, এবারের অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সোনার পদক উঠবে কার গলায়—প্রশ্নটা ছিল এ রকমই। ফ্রেজার-প্রাইস সেমিফাইনালে দৌড়াননি, তাই ফেবারিটের তকমাটা ছিল রিচার্ডসনের পিঠেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার রিচার্ডসনকে পেছনে ফেলে মেয়েদের ১০০ মিটারের সোনার পদক গলায় ঝুলিয়েছেন সেন্ট লুসিয়ার মেয়ে জুলিয়েন আলফ্রেড।

স্তাদ দু ফ্রান্সে বৃষ্টিভেজা ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সবাইকে ১০.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে অলিম্পিকের দ্রুততম মানবী হয়েছেন আলফ্রেড। অলিম্পিক ইতিহাসে সেন্ট লুসিয়ার এটাই প্রথম পদক। ১০.৮৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শা’কারি রিচার্ডসন। ১০.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন আরেক মার্কিন স্প্রিন্টার মেলিসা জেফারসন।

সেন্ট লুসিয়াকে প্রথম সোনার পদক এনে দেওয়ার পর হুংকারে উদ্‌যাপন করেন আলফ্রেড। এরপর ফেলেন চোখের জল। তাঁর চোখের জলটা যে ১১ বছর আগে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমানো বাবার জন্য, সেটা বলেছেন পরে। সোনার পদকটি তিনি মৃত বাবাকেই উৎসর্গ করেছেন, ‘এটা মূলত ঈশ্বর, আমার কোচ এবং সর্বশেষ আমার বাবার জন্য। যিনি বিশ্বাস করতেন, আমি পারব।’

আলফ্রেড এরপর যোগ করেন, ‘তিনি (বাবা) ২০১৩ সালে চলে গেছেন এবং তিনি আমাকে আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় মঞ্চে দেখতে পারবেন না। কিন্তু তিনি সব সময়ই তাঁর মেয়ের অলিম্পিয়ান হওয়ার জন্য অহংকার বোধ করবেন।’

আরও পড়ুন
আলফ্রেডের সোনা জয়ের উচ্ছ্বাস
এএফপি

একদিন এমন সোনালি সাফল্যে যে ভাসবেন, সেই স্বপ্ন অনেক আগেই দেখেছিলেন আলফ্রেড। অলিম্পিকের সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে সেই স্বপ্নের কথাই বললেন তিনি, ‘সব সময়ই বলে এসেছি, আমি সেন্ট লুসিয়ার প্রথম অলিম্পিক পদকজয়ীদের একজন হতে চাই। এখন আমি অলিম্পিক গেমসে (সেন্ট লুসিয়ার) প্রথম সোনার পদকজয়ী।’

এমন সাফল্যের পেছনে যে নিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার অবদানই বেশি ছিল, সেটাও জানালেন আলফ্রেড, ‘আমি জেগে উঠেছি এবং লিখে রেখেছি, “জুলিয়েন আলফ্রেড, অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন।” তাই আমি মনে করি, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

অনেকের কাছেই ১০০ মিটার স্প্রিন্টে আলফ্রেডের অলিম্পিক সোনা জয় বিস্ময়ের। নেটফ্লিক্সের তথ্যচিত্র ‘স্প্রিন্ট’-এ তাঁর উপস্থিতি নেই। গতকালের আগে পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে মাতামাতি ছিল না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। তবে এই সাফল্যের পথরেখা আলফ্রেড তৈরি করেছেন পরিকল্পনা করেই।

আরও পড়ুন
সবার আগে ফিনিশ লাইনে আলফ্রেড
এএফপি

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে পড়ার সময় থেকেই নিজেকে তৈরি করতে থাকেন আলফ্রেড। টেক্সাসে তিনি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে বাওয়ারম্যান ট্রফি জিতেছেন, যেটা কিনা কলেজ ফুটবলের মর্যাদাপূর্ণ হেইসম্যান ট্রফির তুল্য। টেক্সাসে পড়ার সময় বেশ কিছু কলেজিয়েট রেকর্ড গড়েন আলফ্রেড, সেখানে তাঁর শেষ বছরে পাঁচটি এনসিএএ (ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন) শিরোপা জেতেন।

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে গত বছর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরপরই তিনি স্পনসর হিসেবে পিউমাকে পাশে পান। গত বছর তিনি বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছেন পঞ্চম আর এ বছর ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ মিটারে জিতেছেন সোনার পদক। এরই ধারাবাহিকতায় এল অলিম্পিকের সোনা।

অলিম্পিকে কাল সেমিফাইনালের আগে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছিল ফ্রেজার-প্রাইস ঝড়। সেমিফাইনালের ঘণ্টা কয়েক আগে এক্সে একটি ভিডিও বের হয়, যেখানে আটটি অলিম্পিক পদকজয়ী ফ্রেজার-প্রাইসকে স্টেডিয়ামের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতে না পারার জন্য হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়। তিনি শাটল বাসে স্টেডিয়ামে যাননি বলেই এমনটা হয়েছে। পরে অবশ্য সেমিফাইনালেই অংশ নেননি ফ্রেজার-প্রাইস। রিচার্ডসনের সঙ্গেও এমনটা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানা গেছে।

আরও পড়ুন